৪৭তম বিসিএস প্রিলিতে কম উত্তীর্ণে কী বার্তা দিল পিএসসি
Published: 3rd, October 2025 GMT
সদ্য প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফলে অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলা যায়। প্রিলিমিনারিতে মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন উত্তীর্ণের বিষয়টি কল্পনাতীত ছিল, যেখানে জেনারেল, শিক্ষা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট ক্যাডার পদসংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০। অনেকে বলছেন, এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারে অনেক পদ পূরণ হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বিষয়টি নিয়ে খুব বিচলিত বলে মনে হচ্ছে না। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, অতীতে এর থেকে কম পদসংখ্যা থাকলেও পদের তুলনায় সাত-আট গুণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ করা পিএসসির এবার এত কম উত্তীর্ণের পেছনে কৌশলগত কারণ কী হতে পারে? সেই বিষয়গুলোতে একটু আলোকপাত করা যাক।
পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা কমানো
পদের তুলনায় কম উত্তীর্ণের একটা উল্লেখযোগ্য কারণ—বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা কমানো। অনেক বছর ধরেই আলোচনায় ছিল পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বল্পতম সময়ে শেষ করার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ। বিগত ৪১তম বিসিএসের সার্কুলার থেকে শুরু করে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের কর্মে যোগদানের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। এতে পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সবাই বঞ্চিত হয়েছে। ১২ হাজার ৭৮৯ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশে সোয়া এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে ৪৫তম বিসিএসের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। প্রিলিমিনারিতে কম পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন দ্রুততর হওয়া সম্ভব। সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে, তাই মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও ফলাফল তৈরিও দ্রুততম সময়ে হবে।
নন-ক্যাডার আন্দোলনের প্রভাব
গত বেশ কয়েকটি বিসিএস ফলাফলের পর নন-ক্যাডারে নিয়োগ নিয়ে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। অনেক চাপ সৃষ্টিকারী গ্রুপ দাবি করছে যাতে প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা পাস করলে পরীক্ষার্থীদের কোনো না কোনো পদে যাতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা এত বেশি নয় যে সবাইকে সুপারিশ করা সম্ভব। অধিকাংশই তৃতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ করা পিএসসির জন্য সুবিধাজনক বলা চলে।
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে নিয়োগ, পদ ১২৭৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫খাতা মূল্যায়নে নৈর্ব্যক্তিকতা বৃদ্ধি করা
খাতা মূল্যায়নে পিএসসি বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। পরীক্ষকদের পিএসসিতে ডেকে নিয়ে এসে সার্কুলার সিস্টেমে প্রতি পরীক্ষককে দিয়ে একটি মাত্র প্রশ্নের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এতে খাতা দেখার গতি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রত্যেক শিক্ষক একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর মূল্যায়ন করলে তাতে পরীক্ষকদের একই খাতা মূল্যায়নে নম্বরের বিচ্যুতি দূর হবে। এই সিস্টেমে খাতার সংখ্যা যত কম হবে, মূল্যায়ন ততই ভালো হবে বলা যায়।
পদ খালি থাকার চ্যালেঞ্জের সমাধান
পিএসসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এক বছরের ভেতরে ফলাফল প্রকাশ করতে পারলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি ক্যাডারে পদ খালি থাকলেও তাতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয় চূড়ান্ত যোগদানে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে। এতে দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয়, মাঠপর্যায়ে জনবলসংকট বিরাজ করে। বরং এক বছরের রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে এক বিসিএসে কোনো ক্যাডার পদে নিয়োগ আশানুরূপ না হলেও সে সংকট কাটাতে সর্বোচ্চ পরবর্তী ২ বিসিএস, অর্থাৎ দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। সর্বোপরি দীর্ঘ মেয়াদে এটি লাভজনকই বটে।
পিএসসি ইতিমধ্যেই তার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইতিবাচক সূচনা করেছে। সর্বশেষ ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফলাফল ৯ দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষাও দুই মাস পরই শুরু করবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরাও এই ইতিবাচক পরিবর্তন ও নতুনত্বকে স্বাগত জানাই।
লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস পরীক্ষার্থী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নন ক য ড র পর ক ষ র থ ক য ড র পদ ব স এস প ত হয় ছ প রক শ ক বছর বছর র প এসস ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইনের নথিগুলো প্রকাশের পক্ষে ভোট দিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাতে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত। কারণ, আমাদের লুকানোর কিছু নেই।’
কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প প্রয়াত এপস্টেইনের নথি প্রকাশ–সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে আসছিলেন। এখন সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন।
ট্রাম্প এমন সময়ে তাঁর অবস্থান বদল করলেন, যখন কিনা প্রতিনিধি পরিষদে এপস্টেইনের নথি প্রকাশ–সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের ওপর ভোটাভুটির প্রস্তুতি চলছে। ওই আইনের আওতায় মার্কিন বিচার বিভাগ নথিগুলো জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করতে বাধ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটির পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি পাস হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটির পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি পাস হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান সদস্য এমন একটি পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যা জেফরি এপস্টেইনের মামলা–সংক্রান্ত আরও নথি প্রকাশ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে বাধ্য করবে।
এপস্টেইন ফাইল ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট নামের এই বিলের উদ্দেশ্য হলো, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব অগোপনীয় নথি, রেকর্ড, চিঠিপত্র এবং তদন্তের তথ্য প্রকাশ করতে বিচার বিভাগকে বাধ্য করা।শোনা যাচ্ছিল, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। আর এর মধ্যেই নিজের অবস্থান বদল করে রিপাবলিকান সদস্যদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি টমাস ম্যাসি গতকাল এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রায় ১০০ জন রিপাবলিকান প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। ম্যাসি এ প্রস্তাবের উদ্য্যোক্তাদের একজন।
আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫এপস্টেইন ফাইল ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট নামের এই বিলের উদ্দেশ্য হলো, জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব নথি, রেকর্ড, চিঠিপত্র ও তদন্তের তথ্য প্রকাশ করতে বিচার বিভাগকে বাধ্য করা।
ট্রাম্প ফ্লোরিডা থেকে ম্যারিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরে ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগ এরই মধ্যে এপস্টেইন–সংক্রান্ত হাজার হাজার পৃষ্ঠাভর্তি তথ্য জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করেছে। তারা বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতার (যেমন বিল ক্লিনটন, রিড হফম্যান, ল্যারি সামার্স) সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছে। হাউস ওভারসাইট কমিটি আইনগতভাবে যে তথ্য চাইবে, তাই পেতে পারবে—আমার কোনো আপত্তি নেই!’
এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৮ বছরের কম বয়সী একজন মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌনবিষয়ক পণ্য পাচারের অন্য এক মামলায় বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে ২০১৯ সালে কারাগারে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনএপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প১৫ নভেম্বর ২০২৫