এশিয়া যেভাবে ডলার-নির্ভরতা কমাতে পারে
Published: 2nd, October 2025 GMT
মার্কিন ডলার এখনো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভ মুদ্রা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা অর্থনৈতিক নীতি আর ডলারকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা মানুষকে এই মুদ্রা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ডলার কত দিন তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোনো মুদ্রা ডলারের মতো এতটা বিশ্বাসযোগ্য বা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়নি। যদিও রাজনৈতিক উত্তেজনা আর নিষেধাজ্ঞার ভয়ে অনেক দেশ বিকল্প মুদ্রা খুঁজতে চাইছে। তবে শিগগিরই ডলার তার প্রভাব হারাবে—এমন আশঙ্কা খুব কম।
বিষয়টা আসিয়ান+৩ দেশগুলোর (অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, সঙ্গে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া) জন্য ভালো নয়। কারণ, এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ডলারের ওপর নির্ভর করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতিতে কোনো পরিবর্তন এলে বা বিশ্ব অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগলে এশিয়ার এসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
তাই এশিয়ার নীতিনির্ধারকদের উচিত আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো, যাতে তাদের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হয়। তবে এর মানে এই নয় যে ইউরোপের মতো একেবারে এক মুদ্রার জোট গড়ে তুলতে হবে; বরং বাস্তবসম্মত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ঝুঁকি কমে যায় এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়ে।
কয়েক দশক ধরে ডলার এশিয়ার বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহকে ভরসা দিয়ে এসেছে। এর পেছনে যেমন রয়েছে সরবরাহশৃঙ্খল সম্পর্ক, তেমনি রয়েছে ডলারের নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে মর্যাদা।
এখন পর্যন্ত কোনো মুদ্রা ডলারের মতো এতটা বিশ্বাসযোগ্য বা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়নি। যদিও রাজনৈতিক উত্তেজনা আর নিষেধাজ্ঞার ভয়ে অনেক দেশ বিকল্প মুদ্রা খুঁজতে চাইছে। তবে শিগগিরই ডলার তার প্রভাব হারাবে, এমন আশঙ্কা খুব কমউদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া বাণিজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি ডলারে হিসাব করা হয়। বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জন্য ডলারভিত্তিক সম্পদ অন্য যেকোনো কিছুর তুলনায় অনেক বেশি তারল্য ও নির্ভরযোগ্যতা দেয়। তবে একই সঙ্গে এগুলো তাদের কাঠামোগত দুর্বলতাও বাড়িয়ে তোলে। তবে এ দুর্বলতাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মুদ্রানীতি (যেমন সুদের হার বাড়ানো) প্রায়ই পুঁজির বহিঃপ্রবাহ ঘটায় এবং স্থানীয় মুদ্রার তীব্র অবমূল্যায়ন ঘটায়। ফলে যারা স্থানীয় মুদ্রায় আয় করে কিন্তু ডলারে ঋণ নেয়, তাদের ঋণের বোঝা অনেক বেড়ে যায়।
এই মুদ্রা অসামঞ্জস্যই ছিল ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের মূল কারণ। ওই সময় এটি পুরো অঞ্চলের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হস্তক্ষেপকে অপরিহার্য করে তোলে।
আজ আসিয়ান+৩ নীতিনির্ধারকেরা গভীরভাবে সচেতন যে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ আবারও সুদের হার বাড়ালে তাদের অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অনেক দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ জমা করেছে, যার বেশির ভাগই রাখা আছে মার্কিন ট্রেজারিতে। এসব কৌশলগত মজুত আগের সংকট থেকে পাওয়া বেদনাদায়ক শিক্ষা এবং বহিরাগত উদ্ধার তহবিলের (বিশেষত আইএমএফের) ওপর নির্ভর করার অনীহা বা ‘আইএমএফ কলঙ্কের’ প্রতিফলন।
১৯৯৭ সালের সংকটের পর যে এশীয় অভিন্ন মুদ্রার ধারণাটি কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছিল, সেটি এখন ম্লান হয়ে গেছে। কারণ, এশিয়ার বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি এমন একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলে না; বরং মনোযোগ এখন আরও বাস্তবভিত্তিক ও ধাপে ধাপে নেওয়া উদ্যোগগুলোর দিকে সরছে।
শুরুতেই ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতি দ্রুত ও কম খরচে সীমান্ত পারাপারের অর্থ লেনদেন সম্ভব করছে, যা আঞ্চলিক পেমেন্ট সিস্টেমের চাহিদা বাড়াচ্ছে। আসিয়ান দেশগুলো বর্তমানে কিউআর-কোডভিত্তিক সীমান্তপারের পেমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষা করছে। একই সময়ে পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহু মুদ্রাভিত্তিক লেনদেনের জন্য বিতরণকৃত লেজার প্ল্যাটফর্ম পরীক্ষা করছে।
তবে এ প্রচেষ্টা টুকরা টুকরা বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। আসিয়ান+৩ অর্থনীতিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে এসব পেমেন্ট সিস্টেমকে বড় আকারে সম্প্রসারণ ও একীভূত করতে হবে।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো আঞ্চলিক আর্থিক সুরক্ষা জালকে শক্তিশালী করা। ২৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণসক্ষমতা নিয়ে চিয়াং মাই ইনিশিয়েটিভ মাল্টিল্যাটারালাইজেশন (সিএমআইএম) ব্যালান্স অব পেমেন্ট সংকটে পড়া আসিয়ান+৩ অর্থনীতিগুলোকে তারল্য সরবরাহ করে। আসিয়ান+৩ ম্যাক্রোইকোনমিক রিসার্চ অফিসের (এএমআরও) কাজের ওপর ভিত্তি করে সদস্যদেশগুলো এখন সিএমআইএমকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুত ঋণসহায়তা কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা এবং প্রদত্ত মূলধন যোগ করার প্রস্তাব। এসব সংস্কার সিএমআইএমকে আরও নমনীয় ও বিশ্বাসযোগ্য করবে যাতে এটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া ডলার-সম্পর্কিত ধাক্কার প্রতি কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারে।
আঞ্চলিক আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা জোরদার করা এশীয় অর্থনীতির জন্য ডলারের সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা করার চেয়ে অনেক ভালো পথ। ডলার-সম্পর্কিত ধাক্কা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে তাদের আসিয়ান+৩ কাঠামোর অধীন চলমান উদ্যোগগুলোকে তিনটি মূল নীতিগত ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে নিতে হবে।
প্রথমত বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক মুদ্রা অদলবদল (কারেন্সি সোয়াপ) ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি বাড়ানো জরুরি। এ ধরনের কাঠামো (যা ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর মধ্যে চালু আছে) লেনদেন ব্যয় কমাতে ও ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নীতিনির্ধারকদের উচিত এশীয় মুদ্রাগুলোর আন্তর্জাতিকীকরণ এগিয়ে নেওয়া। সীমান্ত পেরোনো বাণিজ্য ও অর্থায়নে ইয়েন, রেনমিনবি ও অন্যান্য মুদ্রার বিস্তৃত ব্যবহার মুদ্রাজনিত অমিল (কারেন্সি মিসম্যাচ) কমাতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় অগ্রাধিকার হলো আর্থিক প্ল্যাটফর্মগুলোর মানকরণ (স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন) এবং পেমেন্ট ও নিষ্পত্তিব্যবস্থার মধ্যে আন্তসম্পর্ক বাড়ানো। এএমআরও দ্রুত পেমেন্ট নেটওয়ার্কসহ ডিজিটাল আর্থিক অবকাঠামোর গুরুত্ব তুলে ধরেছে, যা প্রজেক্ট এমব্রিজ ও প্রজেক্ট গার্ডিয়ানের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগকে সম্পূরক করতে পারে। এ সিস্টেমগুলোকে পরীক্ষামূলক ধাপের বাইরে নিয়ে যেতে মানকরণ ও আন্তসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তবে এর মানে এই নয় যে আসিয়ান+৩ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পথ অনুসরণ করে একটি একক মুদ্রা গ্রহণ করবে। বরং বড় এশীয় মুদ্রাগুলোর গুরুত্ব বাড়িয়ে, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে এবং শক্তিশালী আঞ্চলিক আর্থিক সুরক্ষা জাল বজায় রেখে সরকারগুলো আরও স্থিতিশীল একটি আর্থিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে। এসব পদক্ষেপ মার্কিন ডলারের বিকল্প না হয়ে পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এটি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বাড়ার মধ্যেও এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।
ইয়াসুতো ওয়াতানাবে আসিয়ান+৩ ম্যাক্রোইকোনমিক রিসার্চ অফিসের পরিচালক
হিরো ইতো পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক আস য় ন ৩ আর থ ক স ম পর ক র অর থ পর ক ষ ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।