সরকারি চাকরি হারানোর শঙ্কায় চতুর্থ সন্তানকে জঙ্গলে ফেলে দিলেন শিক্ষক
Published: 2nd, October 2025 GMT
খোলা আকাশের নিচে সদ্যোজাত শিশুটি কাঁদছিল, আর জঙ্গলের শীতল মাটিই ছিল তার আশ্রয়। জীবনের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় সঙ্গী ছিল তার গায়ের চামড়ার ওপর হেঁটে বেড়ানো পিঁপড়ের দল। ভারতের মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ার তিন দিন বয়সী এক শিশুর গল্প এটি। তাকে তার মা–বাবা একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল। সেখানে তাকে ফেলে দিয়ে তাঁরা চলে যান।
সদ্যোজাত শিশুটি সারা রাত ঠান্ডা, পোকামাকড়ের কামড় ও পাথরের নিচে প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা সহ্য করেছে। অবশেষে তার কান্নার শব্দ শুনে গ্রামবাসী তাকে খুঁজে পায়। ভোরে নন্দনওয়াড়ি জঙ্গলের নীরবতা ভেদ করে ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। গ্রামবাসী পাথরটি সরাতেই দেখতে পান, রক্তাক্ত ও শীতে কাঁপতে থাকা শিশুটি সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে বেঁচে আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবলু দান্ডোলিয়া ও রাজকুমারী দান্ডোলিয়ার চতুর্থ সন্তান এই শিশুটি। তার বাবা বাবলু একজন সরকারি শিক্ষক। চাকরি হারানোর শঙ্কায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী রাজকুমারী তাঁদের চতুর্থ সন্তান সদ্যোজাত শিশুটিকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা থেকে এই দম্পতি তাদের গর্ভধারণের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। কারণ, ইতিমধ্যে তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ভোরে রাজকুমারী বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে জঙ্গলে নিয়ে একটি পাথরের নিচে ফেলে আসা হয়।
সকালে হাঁটতে বের হওয়া নন্দনওয়াড়ি গ্রামের মানুষ প্রথম কান্নার শব্দ শুনতে পান। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোনো পশুর বাচ্চা কাঁদছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি, একটি পাথরের নিচ থেকে ছোট্ট দুটি হাত নড়াচড়া করছে। পাথরের নিচ থেকে হাতের কিছু অংশ বেরিয়ে আসছে। কোনো মা–বাবারই এমন কাজ করা উচিত নয়।’
ছিন্দওয়াড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির শরীরে পিঁপড়ের কামড়ের দাগ ছিল। সে হাইপোথারমিয়ায় (অতিরিক্ত ঠান্ডা) ভুগছিল।
হাসপাতালের এক শিশুবিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুটির বেঁচে থাকাটা কোনো অলৌকিক ঘটনার চেয়ে কম নয়। এই অবস্থায় সারা রাত বাইরে থাকলে সাধারণত মৃত্যু অনিবার্য। নবজাতকটি এখন নিরাপদ ও সুস্থ আছে। তাকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
শিশুকে এভাবে পরিত্যাগের অভিযোগে পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৯৩ ধারায় একটি মামলা করেছে। এসডিওপি কল্যাণী বারকাডে বলেছেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আইনি পর্যালোচনার পর এর সঙ্গে ১০৯ বিএনএসের (খুনের চেষ্টা) মতো আরও ধারা যুক্ত করা হতে পারে।’
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে নবজাতক পরিত্যক্ত করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে মধ্যপ্রদেশে। দারিদ্র্য, সামাজিক কলঙ্ক এবং চাকরিসংক্রান্ত পুরোনো ধ্যানধারণার ভয় থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ঘটনাটি বিশেষভাবে শিউরে ওঠার মতো। কারণ, কোনো হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটেনি। বরং একটি শিক্ষিত পরিবার দায়িত্বের বদলে নীরবতাকে বেছে নিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি চাকরি হারানোর শঙ্কায় চতুর্থ সন্তানকে জঙ্গলে ফেলে দিলেন শিক্ষক
খোলা আকাশের নিচে সদ্যোজাত শিশুটি কাঁদছিল, আর জঙ্গলের শীতল মাটিই ছিল তার আশ্রয়। জীবনের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় সঙ্গী ছিল তার গায়ের চামড়ার ওপর হেঁটে বেড়ানো পিঁপড়ের দল। ভারতের মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ার তিন দিন বয়সী এক শিশুর গল্প এটি। তাকে তার মা–বাবা একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল। সেখানে তাকে ফেলে দিয়ে তাঁরা চলে যান।
সদ্যোজাত শিশুটি সারা রাত ঠান্ডা, পোকামাকড়ের কামড় ও পাথরের নিচে প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা সহ্য করেছে। অবশেষে তার কান্নার শব্দ শুনে গ্রামবাসী তাকে খুঁজে পায়। ভোরে নন্দনওয়াড়ি জঙ্গলের নীরবতা ভেদ করে ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। গ্রামবাসী পাথরটি সরাতেই দেখতে পান, রক্তাক্ত ও শীতে কাঁপতে থাকা শিশুটি সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে বেঁচে আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবলু দান্ডোলিয়া ও রাজকুমারী দান্ডোলিয়ার চতুর্থ সন্তান এই শিশুটি। তার বাবা বাবলু একজন সরকারি শিক্ষক। চাকরি হারানোর শঙ্কায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী রাজকুমারী তাঁদের চতুর্থ সন্তান সদ্যোজাত শিশুটিকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা থেকে এই দম্পতি তাদের গর্ভধারণের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। কারণ, ইতিমধ্যে তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ভোরে রাজকুমারী বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে জঙ্গলে নিয়ে একটি পাথরের নিচে ফেলে আসা হয়।
সকালে হাঁটতে বের হওয়া নন্দনওয়াড়ি গ্রামের মানুষ প্রথম কান্নার শব্দ শুনতে পান। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোনো পশুর বাচ্চা কাঁদছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি, একটি পাথরের নিচ থেকে ছোট্ট দুটি হাত নড়াচড়া করছে। পাথরের নিচ থেকে হাতের কিছু অংশ বেরিয়ে আসছে। কোনো মা–বাবারই এমন কাজ করা উচিত নয়।’
ছিন্দওয়াড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির শরীরে পিঁপড়ের কামড়ের দাগ ছিল। সে হাইপোথারমিয়ায় (অতিরিক্ত ঠান্ডা) ভুগছিল।
হাসপাতালের এক শিশুবিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুটির বেঁচে থাকাটা কোনো অলৌকিক ঘটনার চেয়ে কম নয়। এই অবস্থায় সারা রাত বাইরে থাকলে সাধারণত মৃত্যু অনিবার্য। নবজাতকটি এখন নিরাপদ ও সুস্থ আছে। তাকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
শিশুকে এভাবে পরিত্যাগের অভিযোগে পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৯৩ ধারায় একটি মামলা করেছে। এসডিওপি কল্যাণী বারকাডে বলেছেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আইনি পর্যালোচনার পর এর সঙ্গে ১০৯ বিএনএসের (খুনের চেষ্টা) মতো আরও ধারা যুক্ত করা হতে পারে।’
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে নবজাতক পরিত্যক্ত করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে মধ্যপ্রদেশে। দারিদ্র্য, সামাজিক কলঙ্ক এবং চাকরিসংক্রান্ত পুরোনো ধ্যানধারণার ভয় থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ঘটনাটি বিশেষভাবে শিউরে ওঠার মতো। কারণ, কোনো হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটেনি। বরং একটি শিক্ষিত পরিবার দায়িত্বের বদলে নীরবতাকে বেছে নিয়েছে।