মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন। কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য কাজে শত শত কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার আরেকটি পরিচয় আছে, তিনি ব্রেকথ্রু এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা। বিল গেটস সম্প্রতি মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা বিদ্যুতের উৎস নিয়ে একটি লেখা নিজের ব্লগ সাইট ‘গেটস নোটস’-এ প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের জন্য লেখাটি সংক্ষেপে প্রকাশ করা হলো।

আমার ছেলে ররি যখন ছোট ছিল, তখন আমরা একসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখতে খুব ভালোবাসতাম। আমাদের বাবা-ছেলের বেশ দারুণ শখ ছিল এটি। বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি দেখা আর তা কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, তা জানতে পেরে আমরা সব সময় খুব মজা পেতাম। স্মরণীয় ভ্রমণ হিসেবে আমরা আইসল্যান্ডের থিরিহনুকাগিগুর নামের আগ্নেয়গিরির কাছে অবস্থিত একটি ভূতাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, মাটি থেকে বেরিয়ে আসা বিশাল গরম বাষ্পের কুণ্ডলী দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভূপৃষ্ঠের কয়েক হাজার ফুট নিচে থেকে তাপ কাজে লাগিয়ে মানুষ কীভাবে আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারে, তা ভেবে আমি অবাক হয়েছিলাম। এই বছরের শুরুতে যখন আমি উটাহর বিভার কাউন্টিতে কেপ স্টেশন পরিদর্শন করি। সেখানে আমি পুরোনো সেই অনুভূতি পাই। উটাহতে বিশ্বের বৃহত্তম উন্নত ভূতাপীয় বিদ্যুতের ভবিষ্যৎকেন্দ্র তৈরি হতে যাচ্ছে।

উদ্ভাবনী উপায় ভূতাপীয় শক্তি

খুব কম মানুষই ভূতাপীয় শক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করেন। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত শক্তির ১ শতাংশের কম আসে ভূতাপীয় শক্তি থেকে। ফার্ভো এনার্জি নামে একটি প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরের চেষ্টা করছে।
ব্রেকথ্রু এনার্জি ও আমি ফার্ভোর একজন গর্বিত সমর্থক। কেপ স্টেশনে তাদের অনেক অগ্রগতি দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। কোম্পানিটির নেভাদাতে তৈরি পাইলট প্রকল্পটি ২০২৩ সালে ৩.

৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা নিয়ে চালু হয়। এই শক্তি প্রায় ২ হাজার ৬০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কেপ স্টেশনটি আরও অনেক বড় হবে। ফার্ভো ইতিমধ্যেই প্রথম ধাপের জন্য পরিকল্পিত ২৪টি ভূতাপীয় কূপের মধ্যে ২০টির খনন সম্পন্ন করেছে। আগামী বছর এই কেন্দ্রে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০২৮ সালে চালু হবে।
ভূতাপীয় শক্তি নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী পরিষ্কার শক্তি সরবরাহের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল উপায়। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শক্তি উৎপাদনের উপায় প্রয়োজন। বাতাস ও সৌরশক্তির মতো অনিয়মিত বিদ্যুৎ উৎস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের এমন শক্তির উৎসেরও প্রয়োজন হবে যা জলবায়ুকে পরিবর্তন না করে দিনরাত কাজ করতে পারে। ভূতাপীয় উৎস ও পারমাণবিক শক্তি এমনই উৎস।

আরও পড়ুনবিল গেটস, স্টিভ জবসদের সন্তানেরা কে কোথায়, কী করেন তাঁরা?১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪১৫ হাজার ফুট গভীরে ড্রিল

ভূতাপীয় শক্তির পেছনের বিজ্ঞান বেশ সহজ। পৃথিবীর অভ্যন্তর অত্যন্ত উত্তপ্ত। আপনি যত গভীরে যাবেন মাটি তত বেশি গরম হবে। আপনি যদি কোনো তরলকে সেই তাপে উষ্ণ করতে যথেষ্ট গভীরে পাম্প করতে পারেন। তারপর তা আবার পৃষ্ঠে পাম্প করে নিয়ে আসলে গরম তরলকে বাষ্পে পরিণত করতে পারেন। তা ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারেন। বিষয়টি অন্যান্য অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই।

যদিও সেই শক্তিকে কাজে লাগানো বাস্তবে অনেক কঠিন। কিছু জায়গায় প্রয়োজনীয় তাপ পেতে মাত্র কয়েকশো ফুট নিচে যেতে হয়। আবার অন্য জায়গায় এক মাইল বা তারও বেশি নিচে খনন করতে হয়। কেপ স্টেশনের বেশির ভাগ কূপ ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার ফুট গভীর। সবচেয়ে গভীর কূপটি মাটির নিচে বিস্ময়কর ১৫ হাজার ফুট পর্যন্ত প্রসারিত। এটি এমন গভীরতা যেখানে ৫০টি স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে একটির ওপর আরেকটি রাখা যাবে।

বর্তমানে বেশির ভাগ ভূতাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি টেকটোনিক প্লেটের সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত। সেখানে ব্যবহারযোগ্য তাপ খুঁজে পেতে খুব গভীরে খনন করতে হয় না। এই কারণেই আইসল্যান্ড বা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় স্থানে প্রায়ই এই কেন্দ্র দেখা যায়। তবে ফার্ভোর পদ্ধতি ভূতাপীয় শক্তিকে আরও বেশি স্থানে বিকল্প হিসেবে কাজের সুযোগ দেবে।

আরও পড়ুননিজের যে সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত বিল গেটস২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫হরাইজন্টাল ড্রিলিং ও বদ্ধ সিস্টেম

ফার্ভোর সবচেয়ে বড় উদ্ভাবনের মধ্যে একটি অনুভূমিক ড্রিলিং বা হরাইজন্টাল ড্রিলিং। যেখানে কেবল সোজাসুজি নিচে খনন করার পরিবর্তে ফার্ভো তাদের কূপকে সবচেয়ে গভীর বিন্দুতে ৫০০০ ফুট পর্যন্ত অনুভূমিকভাবে প্রসারিত করে। এই কৌশল সাধারণত তেল ও গ্যাস শিল্পে বিভিন্ন আধারের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। একই নীতি ভূতাপীয় শক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একই গভীরতা থেকে আরও বেশি তাপ অ্যাক্সেস করার মাধ্যমে ফার্ভোর কেন্দ্র প্রচলিত ভূতাপীয় কেন্দ্রের চেয়ে কম খরচে তৈরি করা যায়। এই কেন্দ্র আরও বেশি স্থানে কার্যকর করা সম্ভব হয়। এগুলো স্কেল আপ করাও সহজ। এসব কেন্দ্র বিশ্বের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই কৌশল তেল ও গ্যাস শিল্পে ব্যবহৃত পদ্ধতির প্রায় অনুরূপ হওয়ায় ফার্ভো সেই ক্ষেত্রের কর্মীদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করছে। কোম্পানিটির সিইও সহ ৬০ শতাংশ কর্মচারী আগে তেল ও গ্যাস শিল্পে কাজ করতেন।

অনুভূমিক ড্রিলিং ছাড়াও ফার্ভোর পদ্ধতি বেশ আলাদা। যখন বেশিরভাগ মানুষ ভূতাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা ভাবেন তখন তারা মাটি থেকে বাষ্পের মেঘ বেরিয়ে আসতে দেখেন। এমনটা আমি আর ররি আইসল্যান্ডে দেখেছিলাম। ২০২৬ সালে কেপ স্টেশন চালু হলে আপনি কোনো বাষ্প দেখতে পাবেন না।
এই কেন্দ্রটি একটি বদ্ধ সিস্টেম ব্যবহার করবে। ভূতাপীয় শক্তি জলবায়ুবান্ধব শক্তির অন্যতম উৎস। এর একটি খারাপ দিক হচ্ছে সেখানে প্রচুর পানি ব্যবহৃত হয়। যে বাষ্প বেরিয়ে যেতে দেখা যায়, তা আসলে পানি। ফার্ভোর প্রযুক্তি সেই পানিকে ধরে ফেলে সিস্টেমটি চালু রাখতে মাটির নিচে আবার সঞ্চালন করে।

বিশ্বব্যাপী ভূতাপীয় শক্তির সম্ভাবনা

ভূতাপীয় শক্তির ব্যবহার সত্যিই একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। এটি যুক্তরাষ্ট্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে জেনে আমি খুশি। কেপ স্টেশন পরিদর্শনের সময় সিনেটর জন কার্টিসকে আমার পাশে পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করেছি। ফার্ভোর মতো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি স্বাধীনতা বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করবে। এসব বিষয়ে আমাদের চমৎকার আলোচনা হয়েছে। আমি সিনেটরকে বলেছি, উটাহকে নেতৃত্ব দিতে দেখে বেশ ভালো লাগছে। শক্তি উদ্ভাবন-বান্ধব নীতিসহ সেখানে প্রকৃত স্থাপনা তৈরি হচ্ছে।

এই ধরনের প্রচেষ্টা আমাদের দেশকে বিশ্বব্যাপী শক্তি উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতে সাহায্য করবে। আমি একসময় ভাবতাম, ভূতাপীয় শক্তি কখনোই বৈশ্বিক জ্বালানিতে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এখন আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ হবে ভূতাপীয় কেন্দ্র থেকে। ভবিষ্যতে ভূতাপীয় শক্তি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। ফার্ভোর মতো প্রতিষ্ঠান কীভাবে এই প্রযুক্তিকে নতুন গভীরতায় নিয়ে যাচ্ছে, তা দেখতে পাওয়া দারুণ বিষয় বটে।

ভাষান্তর: জাহিদ হোসাইন খান

সূত্র: গেটস নোটস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র এই ক ন দ র ব ল গ টস ব যবহ র ব যবহ ত আম দ র র জন য উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ