পাশ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
Published: 3rd, October 2025 GMT
মৌসুমের শুরুতে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারনে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছিলেন না পটুয়াখালীর জেলেরা। গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে মিলতে শুরু করেছে রূপালী ইলিশ। এরই মধ্যে প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় আজ মধ্যরাত থেকে নদী ও সাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে জেলেদের মুখের হাসি ম্লান হয়েছে।
জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরতে শুরু করে। তাদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে সমুদ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা
মা ইলিশের বাঁধাহীন প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন বঙ্গোপসাগরসহ সব নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। এসময় নদী ও সামুদ্রিক মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণসহ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এদিকে, অবরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ট্রলার তীরে ফিরতে শুরু করেছে। মৎস্য বন্দর পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলীপুরের শিববাড়িয়া নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েয়েছে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারের জেলেরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অবরোধের কারণে আগামী ২২ দিন বেকার থাকবেন জেলেসহ ও এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও জেলার ৬৫ হাজার জেলেকে দেওয়া হবে ২৯ কেজি করে চাল। সরকারি এ প্রণোদনা চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে দাবি জেলেদের।
জেলে আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, “২২ দিনে মাত্র ২৯ কেজি চাল পাব, এতে কোনভাবে সংসার চলবে না। যদি সরকার চাল একটু বাড়িয়ে দিত, তাহলে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতাম।”
আলী হোসেন নামের অপর জেলে জানান, “সাগরে প্রশাসন টহল না বাড়ালে ভারতের জেলেরা আমাদের দেশে ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে। বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে। অবরোধের পর সাগরে গিয়ে আমরা মাছ পাইনি। তাই এবছর আমরা সাগরে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অনুরোধ জানাচ্ছি।”
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে জেলেদের প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। সমুদ্র ও নদীতে অবরোধ শতভাগ সফল করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ২২ দ ন অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে প্রজনন হার হঠাৎ বাড়ছে
বাংলাদেশ কি উল্টো পথে হাঁটছে? দেশের নারীদের মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) এখন ২ দশমিক ৪। বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করে প্রজনন হার কমিয়ে ২ দশমিক ১৭ করতে পেরেছিল। এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে এই উল্টো যাত্রা আগে কখনো দেখা যায়নি।
একজন নারী তাঁর প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাকে বলা হয় মোট প্রজনন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের নারীরা গড়ে ছয়টি বা তার বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন। পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ টিএফআর কমানোর চেষ্টা করেছে। অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বড় অর্জনের একটি এই জন্মহার কমানো।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) ২০২৫ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রজনন হার সবচেয়ে বেশি, ২ দশমিক ৮। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ২ দশমিক ২। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের মধ্যে এবং কম শিক্ষিত বা নিরক্ষর নারীদের মধ্যে টিএফআর বেশি।
টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারেজনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামস্বাধীনতার পর বাংলাদেশে টিএফআর ছিল ৬ বা তার বেশি। মিকস ও অন্যান্য উৎসের তথ্য ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে টিএফআর ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৭। এরপর তা কমতে থাকে। ১৯৯৪ সালে টিএফআর কমে হয় ৩ দশমিক ৪। টিএফআর আরও কমতে থাকে, ২০০৪ সালে তা কমে হয় ৩। ২০১২ সালে ছিল ২ দশমিক ৩ এবং ২০২২ সালেও একই হার। ২০২৪ সালের দিকে তা ছিল ২ দশমিক ১৭ বা তার কাছাকাছি।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে টিএফআর কখনো কমতে দেখা যায় না। হয় ক্রমাগত কমেছে, না হয় কয়েক বছর ধরে স্থির অবস্থায় ছিল। যেমন ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
টিএফআর কীভাবে কমেছিলস্বাধীনতার পর জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল অধিক জনসংখ্যা জাতীয় অর্থনীতির বাধা। সরকার জনসংখ্যা কমানোর নীতি গ্রহণ করে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়। মানুষের হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কর্মকৌশল দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মকাণ্ড চালু করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন ও বেতার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী ছাড়াও এনজিওরা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
গত কয়েক দশকে সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। মানুষ সহজে হাতের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতে পারে। এর পাশাপাশি নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এসব উপাদানও টিএফআর কমাতে সহায়তা করেছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ছিল টিএফআর ২ দশমিক ১–এ নিয়ে যাওয়া; তা হয়নি। টিএফআর বেড়ে যাওয়ার অর্থ জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। তারপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে।
জনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।’