প্রকৃতিবিজ্ঞান বা পদার্থবিজ্ঞানের সব উৎস কোনো না কোনোভাবে গণিতের সঙ্গে সম্পর্কিত। গণিতকে তাই সাধারণভাবে এসব বিদ্যার জননী বলে মনে করা হয়।

প্রাথমিক যুগে গণিত প্রধানত তিনটি ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়েছিল—পাটিগণিত (সংখ্যার সাহায্যে গণনা), জ্যামিতি (ক্ষেত্রফলের পরিমাপ) এবং বীজগণিত (প্রতীক ও সেগুলোর সম্পর্কের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ)। এসব গাণিতিক কৌশল প্রাচীনকালের মানুষকে চিন্তা করতে, যুক্তি প্রদান করতে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলির ক্ষেত্রে তাদের মনোভাবকে তুলনামূলকভাবে যথাযথ ও নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম করে তুলেছিল।

যদিও পাটিগণিতকে গণিতের প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবুও এর উৎপত্তি সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়। ইতিহাসবিদদের মতে, নীল নদ উপত্যকা এবং মেসোপটেমিয়ায় পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে প্রাচীন মিসরীয় ও ব্যাবিলনীয় উভয় জাতিগোষ্ঠীই গণনা সম্পর্কে অবহিত ছিল।

চীনা ও ভারতীয়রাও গণনার নিজস্ব স্বতন্ত্রপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। আরবরা আঙুলের গিঁট ব্যবহার করে গণনা করতেন। গ্রিক ও রোমানদের মতো আরবরাও সংখ্যা গণনার উদ্দেশ্যে তাঁদের বর্ণমালা ব্যবহার করতেন।

যদিও শূন্যভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি প্রাচীন ভারতীয়দের কাছে পরিচিত ছিল, ‘শূন্য’ শব্দটির উদ্ভাবন করেছিলেন মুসলমানরাই। শব্দটি আরবি ‘সিফ্‌র’ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ‘কিছুই নয়’ বা ‘শূন্য’; এরই ওপর ভিত্তি করে মুসলিম গণিতবিদেরা একটি কঠোর দশমিক পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন; যা পরবর্তীকালে আরবি সংখ্যা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বীজগণিত ও আরবি সংখ্যার বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন, তিনি হলেন গণিতবিদ আল-খাওয়ারিজমি। সে কারণেই তাঁকে আজও সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিত–প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হয়।

যখন মুসলিম গণিতবিদেরা বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রো ও মারভের গবেষণাগারে জটিল ও সূক্ষ্ম গাণিতিক সমীকরণ নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন ইউরোপীয়রা রোমান সংখ্যা ব্যবহার করে সাধারণ গাণিতিক হিসাব করতেও হিমশিম খাচ্ছিল। রোমান সংখ্যা দিয়ে একটি সাধারণ গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করাও ছিল দুরূহ কাজ; স্পষ্ট করে বলতে গেলে, এটা ছিল একেবারেই আশাহীন প্রচেষ্টা।

পক্ষান্তরে, আরবি সংখ্যার প্রবর্তন গণিত-অধ্যয়ন ও গবেষণায় এক বিরাট বিপ্লবের সূচনা করেছিল। এরই সাহায্যে প্রাথমিক যুগের মুসলিম গণিতবিদেরা পুরো গণিতশাস্ত্রকে পরিশীলিত ও বিকশিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বীজগণিত ও আরবি সংখ্যার বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন, তিনি হলেন গণিতবিদ আল-খাওয়ারিজমি। সে কারণেই তাঁকে আজও সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিত–প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হয়।

আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমি মধ্য এশিয়ার খোরাসান প্রদেশের খাওয়ারিজমে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় খোরাসান ছিল বাণিজ্যিক ও সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডের এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। শাসকশ্রেণি ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদেশজুড়ে গড়ে উঠেছিল বহু বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে সে-সময়ের বিশিষ্ট মুসলিম পণ্ডিত ও চিন্তাবিদেরা ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় বিষয়েই পঠনপাঠন ও গবেষণা করতেন।

আরও পড়ুনগণিতে ইবনে হাইমের অবদান২৩ জুলাই ২০২৫আল–খাওয়ারিজমির স্মরণে ১৮৮৩ সালে মুদ্রিত সোভিয়েত পোস্ট স্ট্যাম্প.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

গণিতের উজ্জ্বল পথিকৃৎ মুহাম্মদ আল-খাওয়ারিজমি

প্রকৃতিবিজ্ঞান বা পদার্থবিজ্ঞানের সব উৎস কোনো না কোনোভাবে গণিতের সঙ্গে সম্পর্কিত। গণিতকে তাই সাধারণভাবে এসব বিদ্যার জননী বলে মনে করা হয়।

প্রাথমিক যুগে গণিত প্রধানত তিনটি ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়েছিল—পাটিগণিত (সংখ্যার সাহায্যে গণনা), জ্যামিতি (ক্ষেত্রফলের পরিমাপ) এবং বীজগণিত (প্রতীক ও সেগুলোর সম্পর্কের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ)। এসব গাণিতিক কৌশল প্রাচীনকালের মানুষকে চিন্তা করতে, যুক্তি প্রদান করতে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলির ক্ষেত্রে তাদের মনোভাবকে তুলনামূলকভাবে যথাযথ ও নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম করে তুলেছিল।

যদিও পাটিগণিতকে গণিতের প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবুও এর উৎপত্তি সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়। ইতিহাসবিদদের মতে, নীল নদ উপত্যকা এবং মেসোপটেমিয়ায় পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে প্রাচীন মিসরীয় ও ব্যাবিলনীয় উভয় জাতিগোষ্ঠীই গণনা সম্পর্কে অবহিত ছিল।

চীনা ও ভারতীয়রাও গণনার নিজস্ব স্বতন্ত্রপদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। আরবরা আঙুলের গিঁট ব্যবহার করে গণনা করতেন। গ্রিক ও রোমানদের মতো আরবরাও সংখ্যা গণনার উদ্দেশ্যে তাঁদের বর্ণমালা ব্যবহার করতেন।

যদিও শূন্যভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি প্রাচীন ভারতীয়দের কাছে পরিচিত ছিল, ‘শূন্য’ শব্দটির উদ্ভাবন করেছিলেন মুসলমানরাই। শব্দটি আরবি ‘সিফ্‌র’ থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ‘কিছুই নয়’ বা ‘শূন্য’; এরই ওপর ভিত্তি করে মুসলিম গণিতবিদেরা একটি কঠোর দশমিক পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন; যা পরবর্তীকালে আরবি সংখ্যা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বীজগণিত ও আরবি সংখ্যার বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন, তিনি হলেন গণিতবিদ আল-খাওয়ারিজমি। সে কারণেই তাঁকে আজও সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিত–প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হয়।

যখন মুসলিম গণিতবিদেরা বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রো ও মারভের গবেষণাগারে জটিল ও সূক্ষ্ম গাণিতিক সমীকরণ নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন ইউরোপীয়রা রোমান সংখ্যা ব্যবহার করে সাধারণ গাণিতিক হিসাব করতেও হিমশিম খাচ্ছিল। রোমান সংখ্যা দিয়ে একটি সাধারণ গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করাও ছিল দুরূহ কাজ; স্পষ্ট করে বলতে গেলে, এটা ছিল একেবারেই আশাহীন প্রচেষ্টা।

পক্ষান্তরে, আরবি সংখ্যার প্রবর্তন গণিত-অধ্যয়ন ও গবেষণায় এক বিরাট বিপ্লবের সূচনা করেছিল। এরই সাহায্যে প্রাথমিক যুগের মুসলিম গণিতবিদেরা পুরো গণিতশাস্ত্রকে পরিশীলিত ও বিকশিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বীজগণিত ও আরবি সংখ্যার বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন, তিনি হলেন গণিতবিদ আল-খাওয়ারিজমি। সে কারণেই তাঁকে আজও সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিত–প্রতিভা হিসেবে গণ্য করা হয়।

আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমি মধ্য এশিয়ার খোরাসান প্রদেশের খাওয়ারিজমে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় খোরাসান ছিল বাণিজ্যিক ও সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডের এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। শাসকশ্রেণি ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদেশজুড়ে গড়ে উঠেছিল বহু বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে সে-সময়ের বিশিষ্ট মুসলিম পণ্ডিত ও চিন্তাবিদেরা ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় বিষয়েই পঠনপাঠন ও গবেষণা করতেন।

আরও পড়ুনগণিতে ইবনে হাইমের অবদান২৩ জুলাই ২০২৫আল–খাওয়ারিজমির স্মরণে ১৮৮৩ সালে মুদ্রিত সোভিয়েত পোস্ট স্ট্যাম্প

সম্পর্কিত নিবন্ধ