এনসিপিকে ‘শাপলা’ দিলে মামলা করবেন না মান্না, তবে প্রতিবাদ করবেন
Published: 2nd, October 2025 GMT
নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ দেয়, তাহলে তিনি কোনো মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এনসিপির শাপলা প্রতীক দাবির পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে দলটির কয়েকজন নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতে দলটির নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা শাপলা প্রতীক পেলে তিনি কোনো মামলা করবেন না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে মান্না লেখেন, ‘শাপলা প্রতীক যদি তাদের (এনসিপি) দিয়ে দেয়, কোনো মামলা করব না।’ পোস্টের মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারে না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদি। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি, আমি কোনো মামলা করব না।’
মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের নির্বাচনী প্রতীক কেটলি। তবে দলটি যখন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল, তখন তারাও শাপলা প্রতীক চেয়েছিল। কিন্তু ইসি তা দেয়নি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির শাপলা প্রতীকের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাগরিক ঐক্যও শাপলা প্রতীক চেয়েছিল, তাদেরও দেওয়া হয়নি।’
এনসিপি গত ২২ জুন ইসিতে জমা দেওয়া নিবন্ধনের আবেদনে প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম ও মোবাইলের কথা বলেছিল। কিন্তু পরে দুই দফায় দেওয়া চিঠিতে তাতে সংশোধনী এনে শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলা প্রতীক চায় এনসিপি। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দলটিকে দেওয়া এক চিঠিতে ইসি বরাদ্দযোগ্য ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে পছন্দের প্রতীক বেছে নিয়ে তা ৭ অক্টোবরের মধ্যে জানানোর অনুরোধ করেছে। সেখানে শাপলা প্রতীক নেই।
এমন পরিস্থিতিতে আজ মাহমুদুর রহমান মান্নার পোস্টটি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত জুনের দিকে যখন শাপলা প্রতীক নিয়ে বিতর্ক চলছিল, তখন এনসিপির কয়েকজন নেতা আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের বলি, আমি আগে চেয়েছি, এটা তো আমার প্রাপ্য। তখন তারা অনুরোধ করে, “ভাই, আপনি তো একটা প্রতীক পেয়েছেন।” আমি বললাম, যে প্রতীক পেয়েছি, তাতে খুশি নই। তারপরও তারা অনুরোধ করতে থাকে। তখন আমি বললাম, এটা তো একা বলতে পারব না। কারণ, এ ক্ষেত্রে আমার দলের সেন্টিমেন্টের বিষয় আছে। কিন্তু এটা বলতে পারি যে শেখ হাসিনাকে উৎখাতে তোমাদের যে অবদান, তার প্রতি সম্মান রেখে যদি ইসি তোমাদের শাপলা প্রতীক দিয়ে দেয়, আমি মামলা করব না।’
অবশ্য এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার পর নিজের ফেসবুক পোস্টটি সম্পাদনা করে কিছুটা পরিবর্তন করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি লেখেন, ‘শাপলা প্রতীক যদি তাদের (এনসিপি) দিয়ে দেয়, কোনো মামলা করব না। কিন্তু প্রতিবাদ তো করব। আমরা যেহেতু আগে আবেদন করেছি; যদি প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা নাগরিক ঐক্যের প্রাপ্য।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ