খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
Published: 2nd, October 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
২০টি মানবাধিকার সংগঠনের এ মোর্চা বলছে, এ ধরনের ঘটনা শুধু গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়; বরং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক অধিকার হুমকির মুখে ফেলছে।
আজ বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার কাছে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লেখা এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানায় এইচআরএফবির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ও সব অংশীজনের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার অনুরোধ জানান তাঁরা।
এইচআরএফবি বলছে, তারা মনে করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বারবার সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অথচ নিরপেক্ষ তদন্তের অভাবে অপরাধীরা শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এটি টেকসই শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
স্মারকলিপিতে সরকারের কাছে আটটি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা; অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা, নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে সহায়তা করা, গত এক বছরে সংঘটিত আরও সাতটি ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ থাকলে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের ভয় ও আতঙ্ক দূরীকরণে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মৌলিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার পথনকশা তৈরি করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকারের সুরক্ষা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে সহিংসতার চার দিন পর তিন মামলা করল পুলিশ, আসামি ১১০০৬ ঘণ্টা আগেঅতীতে সহিংসতা রোধে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে নীতি প্রণয়ন করার দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এইচআরএফবির সদস্য ও নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সারা হোসেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য ইফতেখারুজ্জামান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জাকির হোসেন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ।
আরও পড়ুনচার দিন পর স্বাভাবিক যান চলাচল, জনজীবনে স্বস্তি০১ অক্টোবর ২০২৫স্মারকলিপিতে প্রতিনিধিদলে থাকা ছয়জনসহ স্বাক্ষর করেন এইচআরএফবির বিশেষজ্ঞ হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, এইচআরএফবির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জেড আই খান পান্না, এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য রঞ্জন কর্মকার, সঞ্জীব দ্রং, সালেহ আহমদ, এইচআরএফবির সদস্য ফওজিয়া মোসলেম, শামসুল হুদা, সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, শিপন কুমার রবিদাস, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান জামান, পল্লব চাকমা, রোকেয়া রফিক, গীতা দাস, আবদুস সাত্তার ও আশরাফুন্নাহার।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি০১ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এইচআরএফব র স ট য় র ব চ র ব ভ গ য় তদন ত কম ট র সদস য স ম রকল প ত উপদ ষ ট র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।