মামলা নিয়ে বহুস্তরের বাণিজ্য, জড়িত রাজনীতিক, পুলিশ
Published: 3rd, October 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অস্ত্র-গুলি লুট হয়। ফেনী মডেল থানায়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় মো. জামাল উদ্দিন গাজীকে।
চার মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এখন তিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়েছেন দাবি করে মামলার আবেদন করেছেন। এতে আসামি হিসেবে ২৬৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি এক শ থেকে দেড় শ জন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে মামলার বাদী নিজে স্বীকার করেছেন যে তিনি আমাকে চেনেন না। এরপর কে আমার নাম দিয়েছে, সেটাই রহস্য।বিএনপির ফেনী পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি আবদুল মতিন পারভেজপ্রথমে ফেনী মডেল থানায় মামলা করার চেষ্টা করেন জামাল গাজী। ব্যর্থ হয়ে গত ১৭ আগস্ট ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত মামলাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। এখনো তদন্ত চলছে।
এক বছর পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে জামাল গাজী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তাঁর দাবি, ফেনী থানা লুটের মামলায় তাঁকে ষড়যন্ত্র করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখে গেছে, ফেনীতে কয়েক স্তরে ‘মামলা–বাণিজ্য’ হয়েছে এবং চলছে। ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন বিরোধের জেরে এক পক্ষ থেকে টাকা নিয়ে তার প্রতিপক্ষের নাম মামলায় দেওয়া হয়েছে। আবার কারও কারও কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য আগে এজাহারের খসড়া পাঠানো হয়। টাকা দিলে নাম বাদ পড়ে, না দিলে আসামি করা হয়।জামাল গাজী ফেনী জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য ও ছাগলনাইয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাঁর দেওয়া এজাহারে আসামি হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত অন্যান্য মামলার মতো শুরুতে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নাম দেন। এরপর বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের নিম্ন সারির নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের নামও যুক্ত করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ফেনীতে ‘মামলা–বাণিজ্য’ শব্দবন্ধটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। জামাল গাজীর এজাহারের মতোই বেশির ভাগ মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ আছে, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক ও পেশাগত দ্বন্দ্ব এবং চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করার উদ্দেশ্যে অনেককে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনফেনীর সেই অস্ত্রধারীরা কোথায়, অস্ত্র কোথায় গেল ০২ অক্টোবর ২০২৫পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারাও মামলা থেকে রেহাই পাননি। বিএনপির ফেনী পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি আবদুল মতিন পারভেজকেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়। প্রতিপক্ষ তাঁকে কোণঠাসা করতে এভাবে আসামি করেছে বলে তিনি মনে করেন। মামলাটি হয়েছে গত ২০ জুলাই।
আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে মামলার বাদী নিজে স্বীকার করেছেন যে তিনি আমাকে চেনেন না। এরপর কে আমার নাম দিয়েছে, সেটাই রহস্য।’
ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি পুলিশেরও কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসূত্র রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশি বদনাম রটেছে ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। তাঁকেসহ দুটি থানার ওসিকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর ছাগলনাইয়া শাখা গত ১২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ফেনীর মহিপালে একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় জামায়াতের আটজন নেতা-কর্মীসহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ফেনী জেলা জামায়াতের কৃষি ও অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, গত ১৭ আগস্ট আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। এতে জামায়াতের একজন রুকন ও সাতজন কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এসে তাঁদের আসামি করে হয়রানির অভিযোগ করেছেন।
হরেক রকম বাণিজ্যপ্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখে গেছে, ফেনীতে কয়েক স্তরে ‘মামলা–বাণিজ্য’ হয়েছে এবং চলছে। ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন বিরোধের জেরে এক পক্ষ থেকে টাকা নিয়ে তার প্রতিপক্ষের নাম মামলায় দেওয়া হয়েছে। আবার কারও কারও কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য আগে এজাহারের খসড়া পাঠানো হয়। টাকা দিলে নাম বাদ পড়ে, না দিলে আসামি করা হয়। এ ধরনের আসামিদের বেশির ভাগ মামলার বাদীই চেনেন না। মামলার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে কয়েকজনের নাম আসছে, তাঁরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এখন এ ধরনের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের বাণিজ্য চলছে। এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও সন্দিগ্ধ হিসেবে অনেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁদের অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে হত্যা মামলায় দেওয়া হবে নাকি হত্যাচেষ্টা বা আহত ব্যক্তিদের করা মামলায়, সেটার জন্য একধরনের হিসাব। গ্রেপ্তার আসামি জামিনের আবেদন করলে সে ক্ষেত্রেও মামলার ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ দাবিদার বিএনপির নেতা বা আইনজীবীর সম্মতির বিষয় রয়েছে। আদালত জামিন মঞ্জুর করলে ওই ব্যক্তিকে নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে কি না, সে ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ‘ঘাট ম্যানেজ’ করার বিষয় আছে। আদালত থেকে বা পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে কারও সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে সে ক্ষেত্রেও ‘খরচ’ আছে। অন্যথায় কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতার ঘনিষ্ঠ বা অর্থদাতা লিখে প্রতিবেদন দেওয়ার নজিরও রয়েছে।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, তিনি ১৯ বছর বিদেশে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরে ঢাকায় ব্যবসা করছেন। প্রথমে তাঁকে একটি ছবি পাঠানো হয়, সেখানে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতার সঙ্গে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিয়েছেন। এরপর তাঁর নামসহ খসড়া এজাহার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। বন্ধু-সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন খান (সিনিয়র মেজবাহ) প্রথম আলোকে বলেন, এজাহার তৈরি করে বিভিন্ন লোকের কাছে পাঠিয়ে মামলায় নাম দেওয়ার অভিযোগ তিনি শুনেছেন। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা কিংবা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ একেবারে অমূলক নয়। এসব বিষয় বহুলভাবে আলোচিত।
ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি পুলিশেরও কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসূত্র রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশি বদনাম রটেছে ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। তাঁকেসহ দুটি থানার ওসিকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে।
যেভাবে ‘বড়শি’ ফেলা হয়স্থানীয় রাজনৈতিক ও পুলিশ সূত্র বলছে, শুরুর দিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের ঘটনায় মামলা করতে এলেই নেওয়া হতো। একপর্যায়ে ঢালাও আসামি করা ও মামলা–বাণিজ্যের কথা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তারপর হরেদরে মামলা নেওয়া কিছুটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন আদালতের মাধ্যমে মামলা করার চেষ্টা চলে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেনীতে আদালতের মাধ্যমে মামলা করার তিনটি চেষ্টা রয়েছে। সব কটিই পুলিশের তদন্তাধীন।
একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নাম থাকা একজন ব্যবসায়ী নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার এজাহারের খসড়া তৈরি করে তাঁকেসহ নানা ব্যবসায়ীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটা অনেকটা মাছ ধরতে বড়শি ফেলার মতো—মামলা হচ্ছে জানান দেওয়া ‘রফাদফার’ জন্য। কিন্তু এতে তিনি সাড়া না দেওয়ায় পরে এজাহারে নিজের নাম দেখতে পান।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, তিনি ১৯ বছর বিদেশে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরে ঢাকায় ব্যবসা করছেন। প্রথমে তাঁকে একটি ছবি পাঠানো হয়, সেখানে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতার সঙ্গে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিয়েছেন। এরপর তাঁর নামসহ খসড়া এজাহার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। বন্ধু-সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
খসড়া এজাহারে নাম উঠিয়ে টাকা চাওয়া এবং টাকা দিয়ে নাম কাটানো ১২ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও পেশাজীবী। বাণিজ্যের ধরনটা অনেকটা এ রকম—কাউকে লক্ষ্যবস্তু করার পর ফেসবুকে আওয়ামী লীগের কোনো স্থানীয় নেতার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো ছবি বা ভিডিও থাকলে তা সামনে আনা হতো। এর মাধ্যমে মামলায় নাম আসছে—এমন ইঙ্গিত দেওয়া হতো। এরপর ওই ব্যক্তি কিংবা তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে খসড়া এজাহার পাঠানো হতো।
এমনই একজন ভুক্তভোগী চিকিৎসক জানান, গত বছরের নভেম্বরের দিকে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর কাছে একটি খসড়া এজাহার আসে। তাতে আসামির ঘরে তাঁর নাম দেখতে পান। যোগাযোগ করে নাম কাটাতে ৪০ হাজার টাকা দেন। পরে থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, প্রথম খসড়ায় তাঁর নাম ছিল, পরে বাদ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সরকারি চাকরি করেন। তাঁকে আসামি করার কোনো কারণ নেই। সরকারি দায়িত্ব শেষে কোন চিকিৎসক কোন বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখবেন, এ নিয়ে স্থানীয় ক্লিনিকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বা দ্বন্দ্ব ছিল। এ কারণে হয়তো কেউ তাঁর নাম মামলায় দিতে চেয়েছিলেন।
জামিনে বের হতেও লাগে টাকাভুক্তভোগী ও স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, মামলার এজাহারে কারও নাম তোলা, বাদ দেওয়া নিয়ে একধরনের বাণিজ্য হচ্ছে। এর বাইরে কেউ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় কারাফটকে পুনরায় আটক এড়াতেও মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয় আসামিকে। এ ক্ষেত্রে মামলার পেছনে থাকা রাজনীতিকেরা পুলিশকে কারাফটকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে আগাম তথ্য দেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার যুক্ততার অভিযোগও রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেনীতে ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত’ ৮৪৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬৮৭ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জামিনপ্রাপ্ত কোনো কোনো ব্যক্তিকে পরে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানো হয়। ফলে জামিনপ্রাপ্ত অনেকেকে কারাফটকে পুনরায় গ্রেপ্তার এড়াতে ৫০ হাজার থেকে ৪-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে।
দাগনভূঞা পৌর আওয়ামী লীগের একটি ওয়ার্ডের নেতাকে (আবার গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) হত্যাচেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় এক মাস কারাভোগ করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে কারাফটকে পুনরায় গ্রেপ্তার হতে পারেন—এমন আভাস পান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুনরায় গ্রেপ্তার এড়াতে এক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে তাঁকে।
ফেনী সদর উপজেলার লালপুর এলাকার আরেক আওয়ামী লীগ নেতা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাভোগ করে পুনরায় কারাফটকে গ্রেপ্তার এড়াতে চার লাখ টাকা ব্যয় করেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলায় সীমান্তবর্তী মহামায়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সত্তরোর্ধ্ব শাজাহান মিনু জামিনের পর তিন লাখ টাকার বিনিময়ে জেলগেট হতে আবার গ্রেপ্তার হতে রক্ষা পান।
অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেওকেউ জামিন পেলে কারাফটকে গ্রেপ্তার বা নতুন মামলায় জড়ানো বা না জড়ানোকে কেন্দ্র করে কারাগারের কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, আদালতের আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীদের একটি চক্র কাজ করছে। এর সঙ্গে জেলা যুবদলের সাবেক ও বর্তমান দুই নেতার যোগসাজশেরও অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হিসেবে ফেনী সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর নাম বিশেষভাবে আলোচিত। তাঁর সহযোগী হিসেবে ছাগলনাইয়া থানা ও সোনাগাজী থানার সদ্য বদলি হওয়া দুই ওসি এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া সার্কেলে বদলি করা হয়েছে।
মামলা–বাণিজ্যের কারণে এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফেনী জেলার পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁর জানা নেই। এটা স্বাভাবিক বদলি হতে পারে।
ফেনীতে মামলা–বাণিজ্য নিয়ে এত আলোচনা থাকলেও পুলিশ সুপারের ভাষ্য, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তিনি প্রকাশ্যে বৈঠকে ঘোষণা দিয়েছেন, এ ধরনের হয়রানির শিকার হলে যেন লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তখন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও রক্ষা পাননিচট্টগ্রামে বিদেশি জাহাজে তেল সরবরাহের ব্যবসা করেন আহমেদ মাহি। তাঁকে ফেনী থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি, তাঁকে কেন আসামি করা হয়েছে। পরে চট্টগ্রামে ও ঢাকায় আরও মামলায় তাঁকে আসামি করার খবর পান। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে তাঁর প্রতিপক্ষ টাকা দিয়ে এসব মামলায় আসামি করিয়েছেন। সব মামলা ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের ঘটনায় করা।
একইভাবে ঢাকায় প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরে সরবরাহের ব্যবসা করেন—এমন এক ব্যবসায়ীকেও একইভাবে ফেনীতে দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে।
স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এমনও ঘটনা আছে যে মামলার উদ্যোক্তা দুই দিক থেকেই টাকা খেয়েছেন। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো বিরোধের জেরে কাউকে আসামি করার জন্য এক পক্ষ টাকা দিয়েছে। আবার যাঁর নাম এসেছে, তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এই বাণিজ্য গত এক বছর ধরেই চলছে।
ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারও প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন যে ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ী, প্রবাসীকে অনাহূত মামলায় জড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। দলীয়ভাবে তিনি নিজে এবং জামায়াতের আমির থানা-পুলিশকে বলেছেন এ ধরনের মামলা বন্ধ করতে। থানায় এখন মামলা নেয় না। আদালতের মাধ্যমে মামলা করার চেষ্টা হচ্ছে।
মামলার নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিকদের হাতেজুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক এখন পর্যন্ত ফেনীতে মামলা হয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা। এসব মামলায় ২ হাজার ১৯৯ জন এজাহারভুক্ত এবং প্রায় ৪ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন।
সাতটি হত্যা মামলার বাদী সরাসরি নিহত ব্যক্তির পরিবার। তবে এই মামলাগুলোর আসামি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলার মধ্যে চারটিতে কারা আসামি হবেন, তা ঠিক করেছেন বিএনপির নেতারা। বাকি তিনটির আসামি ঠিক করেন জামায়াত নেতারা।
এর বাইরে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় করা ১৫টি মামলার যাঁরা বাদী, তাঁরা বেশির ভাগ আসামিকে চেনেন না। মূলত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পেছন থেকে এসব মামলা করিয়েছেন। এ ছাড়া আদালতে যে তিনটি মামলার আবেদন হয়েছে, সেগুলোও একই প্রকৃতির।
ফেনী জেলা জামায়াতের আমির আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তিনটি হত্যা মামলা দেখভাল করেন। তবে আসামির নাম বাদী নিজেই দিয়েছেন।
ফেনীতে মামলা–বাণিজ্যে বিএনপির দুজন নেতা ও তাঁদের অনুসারীদের নাম বেশি আলোচনায় আছে। এর মধ্যে রয়েছেন ফেনী পৌর বিএনপির সদস্যসচিব ও আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া। যিনি ছোট মেজবাহ নামেও পরিচিত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা মামলা তিনি দেখভাল করছেন। অভিযোগ রয়েছে, মামলায় কার জামিন হবে না হবে, মামলার আসামি কারা হবেন—এসব বিষয়ে তাঁর মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।
ফেনীতে বহুধা বিভক্ত বিএনপির রাজনীতির মধ্যে এই মেজবাহ উদ্দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মশিউর রহমান ওরফে বিপ্লবের ঘনিষ্ঠ। মশিউর রহমানের দাবি, ফেনীতে মামলা–বাণিজ্য হয়, এমনটা তিনি শোনেননি।
তবে মামলা–বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাচেষ্টার মামলাগুলো নানা লোক নানাভাবে আসামি করেছেন। এগুলোতে হয়রানি-বাণিজ্যের কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন।
কীভাবে এসব মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, জেলা বিএনপি তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি নিজে দায়িত্ববোধ থেকেও যুক্ত হয়েছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারও প্রথম আলোকে বলেছেন, মেজবাহকে মামলা দেখভাল করার দায়িত্ব স্থানীয় বিএনপি থেকে দেওয়া হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের মামলায় প্রভাবের ক্ষেত্রে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন (জসিম)। হত্যাচেষ্টার যত মামলা ফেনীতে হয়েছে, এর বেশির ভাগেরই বাদী জসিমের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
জাকির হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, একটা মামলা হলে জেলা বিএনপির নেতারা নিজেদের মতো করে আসামি দেন। এখানে বাণিজ্যের কিছু নেই। ভুল হলে পুলিশ তদন্ত করে বাদ দিয়ে দেবে।
জাকির হোসেন মামলা–বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর দুই সহচর দুটি মামলার বাদী হয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের দলীয় পদ নেই, এমন কাউকে আসামি করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলাগুলোর সব কটিতেই ফেনী-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর নাম আছে। কিছু মামলায় শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের নাম রয়েছে। ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর নামও আছে বেশির ভাগ মামলায়। তবে শুরুর দিকে ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের নাম আসেনি। এ নিয়ে বিএনপিতে প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে পরে একটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আলাউদ্দিন নাসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে ফেনীতে যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে নিজাম হাজারী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর নাম থাকলেও আলাউদ্দিন নাসিমের নাম আসেনি। অন্যদিকে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধাচরণ করায় নির্যাতনের শিকার এবং গত ১৫ বছর ফেনীতে ঢুকতে পারেননি—এমন একজন সাখাওয়াত হোসেনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কতটা পুলিশ এবং মামলার ‘দায়িত্বে থাকা’ রাজনীতিকদের ভূমিকা রয়েছে, তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে এলাকায়।
ফেনীতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের মামলাগুলো যে এখন স্থানীয় রাজনীতি, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও অর্থ–বাণিজ্যের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে, তা মানুষের মুখে মুখে। সেখানকার রাজনীতিকেরা এটা স্বীকার করছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যুত্থানের সময় কারা গুলি করেছে, কারা নির্যাতন করেছে, সবাই জানে। গণহারে আসামি করার তো কোনো দরকার নেই। তিনি বলেন, শিগগিরই দলের একটি বর্ধিত সভা হবে। সেখানে মামলা–বাণিজ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ফ ল ইসল ম স দ দ ক ন প রথম আল ক হত য চ ষ ট র সদর স র ক ল হ য় টসঅ য প কর মকর ত র প রথম আল র সহ ব ভ ন ন স ব ক র কর কজন ন ত র ব যবস য় ক ল উদ দ ন র জন ত ক য বদল র এ ধরন র ব এনপ র ক র ফটক র রহম ন র ব যবস ত র কর র র জন র আস ম র জন য য় র জন প রব স র অন স প রক শ হয় ছ ন কর ছ ন ন ম আস আওয় ম করছ ন র ঘটন তদন ত আবদ ল র একট আগস ট সদস য ছ গলন সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে পরকীয়া প্রেমিকের হাতে নারী খুন
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কৃষ্ণবাটি গ্রামে তৃপ্তি রাণী (৪০) নামের এক নারীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে তৃপ্তি রানী মাঠে ঘাস কেটে বাড়িতে ফেরার পথে শংকর নামের এক স্থানীয় যুবক তৃপ্তি রানীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
আরো পড়ুন:
প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দেওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা
যে কারণে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিলেন স্বামী
তৃপ্তি রানী উপজেলার কৃষ্ণবাটি দক্ষিণ পাড়ার অবনিশ মল্লিকের স্ত্রী। অভিযুক্ত শংকর নিহতের প্রতিবেশী। হত্যাকাণ্ডের পরে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
তৃপ্তি রানী পরকীয়ার জের ধরে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
কৃষ্ণবাটি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সাধন দাস বলেছেন, তৃপ্তির স্বামী অবনিশ ভ্যানচালক। এই দম্পতির একটি সন্তান আছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশের এক নারীর সঙ্গে মাঠ থেকে ঘাস কেটে বাড়ি ফিরছিলেন তৃপ্তি। পথে শংকর তাদের গতিরোধ করে। এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শংকর তৃপ্তিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে হাতে থাকা ধারাল অস্ত্র দিয়ে তৃপ্তির ঘাড়ে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তখন তৃপ্তির সঙ্গে থাকা নারী বাধা দিতে গেলে তাকেও হত্যার ভয় দেখায় শংকর।
সাধন দাস বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত তৃপ্তি রাণীকে মনিরামপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে স্বজনরা তৃপ্তিকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় নড়াইলে পৌঁছালে পথেই তৃপ্তির মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃপ্তির সঙ্গে শংকরের পরকীয়া নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছিল। একপর্যায়ে শংকর তৃপ্তিকে ঘরে তুলতে চান। তখন তৃপ্তি শংকর কাছে তার ভিটাবাড়ি দাবি করেন। শংকর তাতে রাজি না হওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে তৃপ্তিকে খুন করেছে শংকর।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেছেন, পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে শংকর নামের এক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার দুপুরে তৃপ্তি রানীকে কুপিয়ে আহত করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে তৃপ্তি মারা যান। গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত শংকর পলাতক আছে।
ঢাকা/রিটন/রফিক