তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.

৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।

রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।

পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।

বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।

শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।

৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।

এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।

তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।

২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।
বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বক প র ন কর উইক ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত

ভারতকে প্রথমে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনাররা ইডেনের ২২ গজকে স্রেফ রণক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। বল সারাদিন ছোবল দিল।

অসমান বাউন্সে প্রতিকূল উইকেট। যেখানে সারাদিন ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল লেগেছিল। কলকাতার নন্দনকাননে ১৫ উইকেটের দিন দেখল সমর্থকরা। যার ১২টিই নিয়েছেন স্পিনাররা।

দিন শেষে হাসিটা ফুটেছে ভারতের মুখে। ভারত ১ উইকেটে ৩৭ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছিল। শনিবার দ্বিতীয় দিনে তাদের ইনিংস আটকে যায় ১৮৯ রানে। এতে ৩০ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমেই এলোমেলো হয়ে যায় কুলদীপ যাদব ও রাভীন্দ্র জাদেজার বোলিংয়ে। দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের স্কোরবোর্ডের চিত্র এরকম, ৯৭/৭। হাতে ৩ উইকেট নিয়ে তাদের লিড কেবল ৬৩ রান।

জাদেজা ৪ ও কুলদীপ পেয়েছেন ২ উইকেট। অক্ষরের শিকার ১টি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া জসপ্রিম বুমরাহ এখন পর্যন্ত উইকেটশূন্য।

প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ২৯ ও করবিন বোস ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। আউট হওয়া ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেবল রায়ান রিকেলটন ও উইয়ান মুল্ডার দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন। দুজনই ১১ রান করে করেন।

এর আগে, দিনের শুরুতে ভারত হোঁচট খায় গিলকে হারিয়ে। ঘাড়ের চোটে মাঠ ছেড়ে গিল উঠে যান ৪ রানে। এরপর যারা এসেছেন কেউ ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি। রিশাভ পান্ত ও জাদেজা ২৭ রানের দুটি ইনিংস খেলে। সুন্দরের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া ধ্রুব জুরেল ১৪ ও অক্ষর পাটেল ১৬ রান করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন সাইমন হারমার। ৩ উইকেট পেয়েছেন মার্কো জানসেন। 

ইডেনের ফাটল ধরা ২২ গজে প্রথম দুদিনেই ২৬ উইকেট নেই। সামনে কী অপেক্ষা করছে বোঝাই যাচ্ছে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ভারতের কলকাতা টেস্টে হারের ৫ কারণ
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • স্পিনিং উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পাঠান
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • দ. আফ্রিকার জন্য গর্ত খুঁড়ে তৃতীয় দিনেই হারল ভারত
  • ৯৩ রানে অলআউট ভারত, ১৫ বছর পর ভারতের মাটিতে দ. আফ্রিকার টেস্ট জয়
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত