কুমিল্লার দেবীদ্বারে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৮ সাংবাদিক। এতে ৮ সাংবাদিকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারী ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের মুঠোফোন, ক্যামেরা ও টাকা ছিনিয়ে নেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিকেরা হলেন দৈনিক দিনকালের স্থানীয় প্রতিনিধি পারভেজ সরকার, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন, দৈনিক আজকের কুমিল্লার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন, দৈনিক ডাক প্রতিদিনের প্রতিনিধি মো.

আনোয়ার হোসেন, আমার দেশের প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক, কালবেলার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম (মারুফ) ও সাংবাদিক মো.শাহজালাল ও সাইফুল ইসলাম (সজীব)।

এদিকে হামলাকারী ব্যক্তিরা সালিসে উপস্থিত হওয়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের মা–বাবা, বোন ও স্ত্রীকে মারধর করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাহাবাদ গ্রামের উটখাড়া মাজারের খাদেম প্রয়াত আবদুল খালেক ফকিরের স্ত্রী কমলা খাতুনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী শাহজাহানের পরিবারের দীর্ঘদিন সম্পত্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জেরে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন কমলা খাতুনের পরিবারের ওপর একাধিকবার হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটান। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিসও হয়। সালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই ঘটনার জেরে তিনটি মামলা হয়, যা বর্তমানে তদন্তাধীন। এরই মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর কমলা খাতুনের বসতবাড়িতে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি পাকা দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দেন শাহজাহান।

এ ঘটনায় কমলা খাতুনের নাতি সাংবাদিক সোহরাব হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন তদন্ত করে শেষে স্থানীয় এলাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিটন মিয়াকে দায়িত্ব দেন বিষয়টি সমাধানের জন্য। তাঁর উদ্যোগে গকাল বিকেলে এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সালিস বসে।

এই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য যান সাংবাদিকেরা। তাঁরা পাশের একটি চায়ের দোকানে বসে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এমন সময় শাহজাহান, জসীম উদ্দিন, সাগর মিয়া, মজনু মিয়া, বিল্লাল হোসেনসহ ২৫ থেকে ৩০ জন দৌড়ে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারী ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর করে তাঁদের মুঠোফোন, ক্যামেরা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
হামলার শিকার আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আটজন রাস্তা বন্ধের বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে যাই। সালিস বসার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে একটি চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ২৫ থেকে ৩০ জন এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পক্ষের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহজাহান তাঁর নিজের জায়গার মধ্যে দেয়াল তুলেছেন। কিন্তু কমলা খাতুনের নাতি বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়ে তাঁদের হয়রানি করছেন। সাংবাদিকদের ওপর কারা হামলা করেছে, সেটা তাঁরা জানেন না।

ইউপি সদস্য লিটন মিয়া বলেন, ‘মাজারের খাদেম কমলা খাতুনের বাড়ির রাস্তায় প্রতিপক্ষের লোকজন পাকা দেয়াল তৈরি করে বন্ধ করে রাখে। ওই ঘটনায় সালিস ডেকেছিলাম। সালিসের আগেই চায়ের দোকানে মারামারি শুরু হয়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের রক্ষার চেষ্টা করি। পরে দ্রুত তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে চিকিৎসারত সাংবাদিকদের খোঁজখবর নিয়েছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পর ব র র শ হজ হ ন এল হ ব দ ল কজন উপজ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ