নেত্রকোনায় মণ্ডপে গভীর রাতে নাচানাচি, নিষেধ করায় আয়োজকদের ওপর হামলা, আহত ৮
Published: 2nd, October 2025 GMT
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় একটি সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে গভীর রাতে নাচানাচি করতে নিষেধ করায় পূজা কমিটির লোকজনের ওপর হামলা ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন তরুণ-যুবকের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের খুশিমুল গ্রামের হরি মন্দিরসংলগ্ন পূজামণ্ডপে এ ঘটনা ঘটেছে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন খুশিমুল যুব সংঘ পূজা কমিটির সভাপতি অমিত দাস, সদস্য অজয় দাস, আকাশ দাস, অনন্ত দাস, সুমন দাস, সত্যজিৎ চক্রবর্তী, পরিতোষ দাস ও অনিক দাস। তাঁরা খুশিমুল গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ, পূজা উদ্যাপন কমিটি ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, ‘খুশিমুল যুব সংঘ’ আয়োজিত পূজামণ্ডপে গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। এরপর পূজা উদ্যাপন কমিটির লোকজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন। এ সময় পাশের পেরীরচর ও সিয়াধার গ্রামের ১৫-২০ জন তরুণ-যুবক এসে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে নাচানাচি করতে চান। রাত গভীর হয়েছে জানিয়ে তাঁদের নিষেধ করেন পূজা কমিটির লোকজন। এ সময় যুবকেরা দুটি গান বাজিয়ে নাচার অনুরোধ জানালে আয়োজকেরা তাঁদের সুযোগ দেন। কিন্তু পাঁচটি গান বাজানোর পরও তাঁরা আরও নাচানাচি করতে চান। রাত দেড়টা বেজে যাওয়ায় আয়োজকেরা অসম্মতি জানালে ওই যুবকদের মধ্যে কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়ে মণ্ডপের দিকে এগিয়ে যেতে চান। তখন চারজন আনসার সদস্য ও গ্রামবাসী প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের প্রতিহত করেন।
এ সময় তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে যুবকেরা আয়োজক ও গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত আটজন আহত হন। পরে তাঁদের মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলাকারীরা মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ১৫টি প্লাস্টিকের চেয়ার ও দুটি টেবিল ভাঙচুর করে। যাওয়ার সময় তাঁরা মন্দিরসংলগ্ন সুজিত দাস ও রামধন চৌধুরীর নামের দুই ব্যক্তির বাড়ির দরজা-জানালা ও ঘরের চালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া খুশিমুল বাজারের কিছু দোকানেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়োজক কমিটির কয়েকজন জানান, হামলাকারী যুবকদের মধ্যে তাঁরা কয়েকজনকে চিনেছেন। তাঁদের মধ্যে সিয়াধার গ্রামের দুর্জয় ইসলাম, মেহেদী হাসান, পেরীরচর গ্রামের মুন্না মিয়া, অন্তর মিয়া, আকাশ, রানা ও আজিজুল ইসলাম আছেন। হামলাকারীদের বয়স ২২–২৫ বছরের মধ্যে।
ঘটনার পরপরই গতকাল রাতে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে ওই তরুণ-যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ ঘটনায় মন্দিরে কোনো হামলা বা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি দাবি করে পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। নাচানাচিতে বাধা দেওয়ায় কিছু যুবক উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পূজা কমিটিকে মামলা দিতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র মন দ র এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার
দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।
পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।