প্রত্যাশা ছাড়িয়ে পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম
Published: 3rd, October 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশ্বখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছে। এর মধ্যে শিল্পী শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম রেকর্ড করেছে।
গত মঙ্গলবার ‘দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা’র এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীদের চিত্রকর্ম স্থান পায়। মোট ৫৪টি লট দিয়ে সদবি’সের এই নিলাম আয়োজন করা হয়।
সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শহীদ কবির, মোহাম্মদ কিবরিয়া, রশিদ চৌধুরী ও কালিদাস কর্মকারের মোট সাতটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম এবারই প্রথম এ নিলামে ওঠে।
এ নিলাম সম্পর্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা বিভাগের কো-ওয়ার্ল্ডওয়াইড হেড মঞ্জরি সিহারে সুতিন বলেন, দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকর্ম বিভাগের ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারের নিলামে শিল্পকর্ম বিক্রি করে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এবারের নিলামে সাতটি নতুন রেকর্ড হয়েছে।
২০০৩ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা মোহাম্মদ কিবরিয়ার চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। সেটি আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১২ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড।জয়নুলের চিত্রকর্ম
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৮০০ পাউন্ডে (প্রায় ৮৩ লাখ টাকা)। যা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল। সদবি’সের ওয়েবসাইটে এই চিত্রকর্মের কোনো শিরোনাম উল্লেখ করা হয়নি। এটি ১৯৬০ সালে কাগজের ওপর জলরঙে আঁকা হয়েছিল।
২০২৪ সালে লন্ডনে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলার নিলামে বিক্রি হয়েছিল জয়নুল আবেদিনের ১৯৭০ সালে আঁকা একটি চিত্রকর্ম। ওই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড। তবে বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে (প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকা)। এটি এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের সর্বোচ্চ মূল্য।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৮০০ পাউন্ডে (প্রায় ৮৩ লাখ টাকা)। যা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল।একই দামে বিক্রি কিবরিয়া ও রশিদের চিত্রকর্ম
শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও রশিদ চৌধুরীর যে দুটি চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোরও কোনো শিরোনাম উল্লেখ করেনি সদবি’স। এর মধ্যে ২০০৩ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা মোহাম্মদ কিবরিয়ার চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। সেটি আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১২ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড।
আর রশিদ চৌধুরীর চিত্রকর্মটি ১৯৮২ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা। সেটিও বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। ইন্দোনেশিয়ার এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে তোলা এই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড।
নিলামে বিক্রি হওয়া শহীদ কবিরের ওই চিত্রকর্ম তিনটি হলো ‘মসজিদ, লালন ও মন্দির’, ‘সাদা ঘোড়ার ওপরে লালন’ এবং ‘কালের যাত্রামঞ্চ’। তিনটি চিত্রকর্মই বোর্ডে টেম্পেরায় আঁকা।শহীদ কবিরের তিন চিত্রকর্ম
শহীদ কবিরের তিনটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৪০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৮৭ লাখ টাকা)। নিলামের আগে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল, সেগুলো সাড়ে সাত হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে।
নিলামে বিক্রি হওয়া শহীদ কবিরের ওই চিত্রকর্ম তিনটি হলো ‘মসজিদ, লালন ও মন্দির’, ‘সাদা ঘোড়ার ওপরে লালন’ এবং ‘কালের যাত্রামঞ্চ’। তিনটি চিত্রকর্মই বোর্ডে টেম্পেরায় আঁকা। চিত্রকর্মগুলো নিলামে এসেছে স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে। তাঁর নাম প্রকাশ করেনি সদবি’স।
আর রশিদ চৌধুরীর চিত্রকর্মটি ১৯৮২ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা। সেটিও বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)।নিলামের আগে এই তিন চিত্রকর্ম সম্পর্কে সদবি’সের কর্মকর্তা মঞ্জরি সিহারে সুতিন ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘এই মাস্টারওয়ার্কগুলো সুফি সাধক লালনের প্রতি একটি উদ্যাপন। লালন ছিলেন ১৮-১৯ শতকের একজন মরমী, যিনি সব পটভূমির মানুষকে স্বাগত জানাতেন এবং জাতি, শ্রেণি ও ধর্মীয় বিভাজন প্রত্যাখ্যান করতেন।’
কালিদাসের চিত্রকর্ম
নিলামে কালিদাস কর্মকারের যে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে সেটির শিরোনাম ‘পবিত্র যুদ্ধ’। ১৯৭৮-৭৯ সালে কলম, কালি, গোয়াশ ও কোলাজে চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছে। এটি স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে এসেছে। নিলামে কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্মটি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে সেটি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা)।
নিলামে নতুন ৭ রেকর্ড
আন্তর্জাতিক নিলামে একজন শিল্পীর শিল্পকর্মের বিক্রয়মূল্য যখন আগে নিলামে তোলা তাঁর অন্য কোনো শিল্পকর্মের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যকে ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে বৈশ্বিক নিলাম রেকর্ড বলে। সদবি’সের এবারের নিলামে নতুন রেকর্ড করা সাতজন হলেন—শহীদ কবির (বাংলাদেশ), কালিদাস কর্মকার (বাংলাদেশ), ফ্রান্সিস নিউটন সুজা (ভারত), গণেশ পাইন (ভারত), লক্ষ্মণ শ্রেষ্ঠা (ভারত), লক্ষ্মণ পাই (ভারত) ও আদিলা সুলেমান (পাকিস্তান)।
এবার মোট ৫৪টি ছবির লট দিয়ে সদবি’সের নিলাম আয়োজন করা হয়। নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী—এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংগ্রাহকেরা এই নিলামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁদের এক–তৃতীয়াংশই ছিলেন নতুন অংশগ্রহণকারী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ত রকর ম ব ক র র র চ ত রকর ম হ জ র প উন ড স গ র হক র ৫৮ ল খ ট ক শ ল পকর ম ১৫ হ জ র হয় ছ ল র কর ড ন র এক
এছাড়াও পড়ুন:
দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার
দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।
পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।