দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা
Published: 2nd, October 2025 GMT
দিনাজপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু ও প্রবীণ সবাই অংশ নেন এই আনন্দঘন উৎসবে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন
বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল
শঙ্খধ্বনি, ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমার সামনে একে অপরের মুখে, কপালে ও গালে সিঁদুর লেপন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভক্তরা। লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ, সৃষ্টি হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশ। সিঁদুর খেলাকে কেন্দ্র করে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
দিনাজপুর শহরের বড় মণ্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিমা বিসর্জনের আগে এভাবেই মা দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা।
পণ্ডিতদের মতে, বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা মূলত মা দুর্গাকে বিদায়ের আগে তাকে শুভকামনা ও আশীর্বাদ জানানোর একটি প্রতীকী রীতি। বিশেষত বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন।
দিনাজপুর শহরের রাজবাটি, কালীতলা, বড় মণ্ডপসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল এই উৎসবের প্রাণবন্ত আয়োজন। ছোট-বড় সবাই লাল সিঁদুরে রঙিন হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শেষ বিকেলে ঢাক-ঢোলের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। দিনাজপুরে সিঁদুর খেলার এ উৎসব শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের এক রঙিন প্রকাশ।
স্থানীয় পূজারী সুবর্ণা রায় বলেন, “মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে মন খারাপ লাগে। তবে সিঁদুর খেলা আনন্দের মধ্য দিয়ে সেই বিষাদকে কিছুটা কমিয়ে দেয়।”
অর্পিতা এক কলেজ ছাত্রী জানান, সারা বছর অপেক্ষা করি দুর্গাপূজার জন্য। আজকের দিনটা আবেগের, আবার আনন্দেরও। মা-কে বিদায় জানালেও সিঁদুর খেলায় মন ভরে যায়।
দিনাজপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “সিঁদুর খেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই খেলায় আমরা শুধু আনন্দই পাই না, বরং ঐক্যের বার্তাও ছড়িয়ে যায়।”
আরেক তরুণ ভক্ত রুবেল দেবনাথ বলেন, “সিঁদুর খেলা শুধু একটি আচার নয়, এটি আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও আনন্দ ভাগাভাগি করার এক বিশেষ উপলক্ষ।”
ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা সদিচ্ছা অপরিহার্য: নিসচা
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ দুর্ঘটনা রোধে সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা অপরিহার্য বলে মনে করে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিসচার পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। সড়ক নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, শুধু সরকারের উদ্যোগে নয়; বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দেশের সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কানাডা থেকে ভার্চু৵য়ালি বক্তব্য দেন নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের ছেলে মিরাজুল মইন জয়। তিনি তাঁর বাবার চিকিৎসার হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে দেশবাসীর কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া চান। একই সঙ্গে ১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মাসব্যাপী কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নে গণমাধ্যমসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
সড়কে মানুষের জীবন রক্ষার দাবি যে সর্বস্তরের জনগণের সে কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন নিসচার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লিটন এরশাদ। তিনি বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। তাই তাঁরা চান, আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো সড়ক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিক।
দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির বহুমাত্রিকতা এত বেশি যে সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন লিটন এরশাদ। তিনি বলেন, এ জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর স্বতন্ত্র সড়ক নিরাপত্তা আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
উন্নত দেশগুলোর মতো নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন লিটন এরশাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে ভুল করলেও যেন পথচারী বা চালক মৃত্যুর শিকার না হন, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় নেওয়া রোড সেফটি প্রকল্প পুরোপুরি এ কাজে ব্যবহার করার দাবি জানায় নিসচা।
লিটন এরশাদ বলেন, প্রতিদিন দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। অথচ বর্তমান আইন বা নীতিমালায় তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। তাই নতুন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে নিসচা কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
• প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ।
• চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ।
• স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ।
• ট্রাফিক আইন মানতে রোড ক্যাম্পেইন।
• সংবাদ সম্মেলন, র্যালি, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ।
• সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।
• বিপজ্জনক বাঁক ও লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন।
• মোটরসাইকেল চালকদের স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট বিতরণ।
• রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
• পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের করণীয় বিষয়ে মতবিনিময়।
• তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা।
• প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়।
• নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
সংবাদ সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন নিসচার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উদ্যাপনে নিসচার কমিটির সদস্যসচিব আইনজীবী তৌফিক আহসান টিটু। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিসচার মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, সাদেক হোসেন বাবুল, বিল্লাল হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মো. গনি মিয়া বাবুল, একে আজাদ, অর্থ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।