গবেষণা বলছে, রাতে যেভাবে লিভারের জটিলতা প্রকাশ পায়
Published: 2nd, October 2025 GMT
রাতে ঘুমের কিছু লক্ষণ দেখে অনেক সময় লিভারের জটিলতা সম্পর্কে সজাগ হওয়া যায়। আগে থেকে এসব লক্ষণ টের পেলে সময়মতো চিকিৎসাগ্রহণ থেকে শুরু করে জীবনযাপনের ধরনে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এতে আরও বড় জটিলতা থেকে লিভারকে রক্ষা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ‘লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত: প্রাদুর্ভাব, প্রভাব ও ব্যবস্থাগ্রহণে চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণায় এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
ওই গবেষণায় বলা হয়, যাঁরা লিভারের রোগে আক্রান্ত, তাঁরা সাধারণত ঘুমাতে দেরি হওয়া, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়াসহ পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। তাঁরা দিনের বেলায়ও প্রচণ্ড ঘুম ঘুম ভাবের সমস্যায় পড়েন।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, এসব সমস্যার মূল রোগটি হচ্ছে লিভারজনিত মানসিক অসুস্থতা বা হেপাটিক এনসেফ্যালোপ্যাথি। এটা মস্তিষ্কের এমন একটি অবস্থা, যখন লিভার বিকল হওয়ার কারণে তা আর শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে পারে না। তখন এসব বিষ মস্তিষ্কের কাজে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে।
যকৃত বিকল হলে তা শরীরের মেলানিন নামের হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই হরমোন আমাদের শরীরের কখন ঘুমাতে হবে, তা ঠিক করে দেয়। মেলানিন বেশি হয়ে গেলে তা দেহঘড়ির ঘুমের চক্রকে ওলটপালট করে দেয়।
আরও পড়ুনফ্যাটি লিভার ডিজিজ: উপসর্গ না থাকলেও এই সমস্যাকে অবহেলা করতে নেই২৬ জুন ২০২৫লিভারে সমস্যা হলে যেসব জটিলতা তৈরি হয়লিভারের রোগীরা সাধারণত ইনসমনিয়া বা অনিদ্রায় ভোগেন।
এ কারণে অনেকের ঘুম আসতে দেরি হয়, কেউ মাঝরাতে জেগে ওঠেন, কারও–বা ঘুম পর্যাপ্ত হয় না।
ফলে দিনে ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়।
কারও দিন–রাতের চক্রই ওলটপালট হয়ে যায়।
এ কারণে সারা রাত জেগে থেকে দিনের বেলায় ঘুমাতে শুরু করেন।
দিনের কাজকর্ম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
লিভারের সমস্যা কীভাবে ঘুমকে ক্ষতিগ্রস্ত করেআমাদের শরীরে ঘুমের অনুভূতি তৈরি করে মেলাটোনিন হরমোন। যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা এই অতিরিক্ত হরমোন বের করে দিতে পারে না। এই বেশি মেলাটোনিন শরীরকে দিন-রাতের বিষয়ে বিভ্রান্ত করে। ফলে কখন ঘুমাতে হবে, শরীর তা বুঝতে পারে না।
এ ছাড়া রক্তে শর্করার কমবেশি, তাপমাত্রার ওঠানামা—এসবও ঘুম ব্যাহত করার জন্য দায়ী। ফলে তা শরীরকে ক্লান্ত, অবসন্ন, মেজাজকে খিটখিটে ও দেহকে অকর্মণ্য করে তোলে।
ঘুমের সমস্যা কীভাবে হেপাটিক এনসেফ্যালোপ্যাথি (এইচই) তৈরি করে
যখন যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে না। ফলে অনেক সময় তা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। তখন ক্ষতিকর হরমোন বা বিষাক্ত পদার্থ শরীরে বেশি হয়ে তা ঘুমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঘুমের একটানা সমস্যা একসময় মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। এ কারণে হালকা বিভ্রান্তি থেকে শুরু করে গুরুতর মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। প্রথম দিকে মনোযোগহীনতা থেকে শুরু হয়ে মেজাজে পরিবর্তন আসে। গুরুতর পর্যায়ে তা মস্তিষ্ককে কোমায় নিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনহালকা গড়নের মানুষদেরও কি ফ্যাটি লিভার হতে পারে০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য করণীয়রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সাধারণ জীবনযাপন রীতি মেনে চলা উচিত। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। ঘুমের আগে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিথিল হওয়াসহ সহজ কিছু যোগব্যায়াম ও পদ্ধতি অবলম্বনের চেষ্টা করা যেতে পারে। এ ছাড়া—
ঘুমাতে যাওয়ার আগমুহূর্তে ভারী খাবার ও অ্যালকোহল বর্জন করুন।
আপনার শোবার ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন, শান্ত ও নীরব করুন।
শোয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে মুঠোফোন ঘাঁটা বা টেলিভিশন দেখা বাদ দিন। এসব যন্ত্র থেকে বের হওয়া ব্লু রে বা নীলরশ্মি মেলাটোনিন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে, যা ভালো ঘুমের পরিপন্থী।
এসবেও কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কে না জানে, ভালো ঘুমে সুস্থবাস, অল্প ঘুমে স্বাস্থ্যনাশ।
সূত্র: ইয়াহু
আরও পড়ুনলিভার বা যকৃতের যত্ন নেবেন কীভাবে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর য প ত র সমস য হরম ন
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ