প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব একটা বিশ্বাস থাকে। আর এই বিশ্বাসটা তৈরি হয় তার চারপাশের নানা তথ্য থেকে। আজকের এই আধুনিক যুগে সোশ্যাল মিডিয়াও সেই তথ্যের একটা বড় অংশ। মানুষ তার পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই দুনিয়াকে বোঝে। আবার একই তথ্য যখন কোনো ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়, তখন তা তার ব্যক্তিগত পক্ষপাতের কারণে ভিন্ন অর্থও নিতে পারে। এভাবেই একসময় ‘সত্য’ নিয়ে আমাদের মনে একটা দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যায়। আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছে যাই, যখন নিজের বিশ্বাসকেই সত্যি বলে মনে হয়।

কিন্তু বাস্তবে, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সত্যিটা কী—যেমন ধরুন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে কি না, তা নির্ভর করে অসংখ্য মানুষের ব্যক্তিগত সত্য বা বিশ্বাসের ওপর। আর যখন সঠিকভাবে একটি জরিপ করা হয়, তখন জরিপের নমুনার ভিত্তিতে একটা সার্বিক চিত্র উঠে আসে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের বাস্তবতা আলাদা, কারণ প্রত্যেকেই নিজের জগৎ দিয়ে পৃথিবীকে দেখে। একটি প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ এই ভিন্ন ভিন্ন মতামতকে একত্র করে একটি সারাংশ তৈরি করে, যা হয়তো পুরো সত্যি নয়, কিন্তু সত্যির খুব কাছাকাছি।

আরও পড়ুনবিএনপির জনসমর্থন ১৬ শতাংশ, জামায়াতের ৩১ শতাংশ—কতটা বিশ্বাসযোগ্য১৭ আগস্ট ২০২৫আরও পড়ুনস্বাধীন জনমত জরিপ বিশ্লেষণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সতর্ক হওয়া জরুরি১৮ আগস্ট ২০২৫

ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’ ঠিক এখানেই গুরুত্বপূর্ণ। এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক আবহের ভেতরের চিত্রটা তুলে আনা। এমন কিছু তথ্য দেওয়া, যা ব্যবহার করে বিভিন্ন অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) নিজেদের নীতি ও কৌশল ঠিক করতে পারবেন। আর যখন জনগণের মতামত বা ‘পালস’ বুঝে নীতি তৈরি হয়, তখন সেই নীতি হয়ে ওঠে জনমুখী। এই লক্ষ্য নিয়েই ইনোভিশন ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’ (পিইপিএস) হাতে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা একটি পাইলট বা পরীক্ষামূলক জরিপ করি। এরপর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালাই। এই জরিপটিই আমাদের প্রথম পর্ব বা রাউন্ড-১। এরই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর ২-১৫ তারিখ দ্বিতীয় রাউন্ডের জরিপ চালানো হয়। এর ফলাফল গত সপ্তাহে আমরা দুই ভাগে প্রকাশ করেছি।

২১ সেপ্টেম্বর প্রথম ভাগে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের ধারণা, নির্বাচনী সহিংসতা, ভোট দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তাবিত সময় নিয়ে ভোটারদের মতামত তুলে ধরেছি। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ভাগে আমরা জানিয়েছি, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কী, মানুষ কী দেখে ভোট দেবে, কোন দলকে বেছে নেবে, সরকার গড়ার জন্য কোন দলকে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করে এবং দলগুলোর স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে মানুষ কতটা সন্তুষ্ট।

জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি সাধারণ মানুষ—সব মহলেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আমাদের কাছে অসংখ্য ফোন কল আর প্রশ্ন এসেছে। মানুষ ফলাফল নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইছে, ডেটা নিয়ে আরও গভীরে যেতে চাইছে। যে দেশে ডেটা ও গবেষণার ওপর মানুষের ভরসা কম, সেখানে এমন সাড়া পাওয়াকে আমরা বিরাট সাফল্য বলে মনে করছি। এই লেখায় আমরা আপনাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেব। পরের লেখায় আমরা এই ফলাফল নিয়ে আমাদের নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরব।

ইনোভিশন–এর এই উদ্যোগ কেন?

ইনোভিশন একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও ব্যবস্থাপনা সংস্থা। আমরা ২০০৮ সাল থেকে কাজ করে আসছি এবং এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে কৌশলগত পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা সেবা দিয়ে থাকি।

গত ১৭ বছরে আমরা ২২টি দেশে ৫০০-এর বেশি প্রকল্প শেষ করেছি। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্য অফিসের মাধ্যমে আমরা কাজ করছি বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে। আমাদের গবেষণালব্ধ তথ্য চরম দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, পানি, স্যানিটেশন, পুষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি উন্নয়নের মতো বড় বড় কর্মসূচিতে কাজে লাগানো হয়।

আমাদের মূল কাজ যেহেতু ব্যবস্থাপনা পরামর্শ, তাই আমরা যেকোনো গবেষণাকে কৌশলের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। আমরা প্রশ্ন করি, এই গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহার করে অংশীজনেরা কীভাবে তাদের কর্মপন্থা ঠিক করতে পারে। ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’-এর ক্ষেত্রে আমরা ভোটারদের সামনে রেখে জানতে চেয়েছি, মানুষের ধারণা ও চাহিদা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিক কী করা উচিত।

এই জরিপের খরচ এবং কার কী ভূমিকা?

পিইপিএস জরিপের পুরো খরচ ইনোভিশনই বহন করে। ‘বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক’ (ব্রেইন) নামের একটি থিঙ্কট্যাংক এবং নাগরিক সমাজের সংস্কারপন্থী প্ল্যাটফর্ম ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ এই প্রকল্পে টেকনিক্যাল পার্টনার বা কারিগরি সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ১০ জনেরও অধিক বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চৌকস রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী।

জরিপের পদ্ধতি, নমুনার নকশা, পরিচালনা, মান নিয়ন্ত্রণ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন তৈরি—ইনোভিশন টিমের কাজ। আমাদের উপদেষ্টা প্যানেল প্রশ্নমালা তৈরিতে যৌথভাবে কাজ করেছেন এবং নিয়মিত জরিপের তথ্য ও তথ্যের মানদণ্ড পর্যালোচনা করেছেন। BRAIN ও Voice for Reform এই জরিপের ফলাফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার জন্য সক্রিয়ভাবে সাহায্য করছে।

জরিপটি কীভাবে করা হয়েছে?

পিইপিএস হলো মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে করা একটি জরিপ। এতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন ১০৮ জন প্রশিক্ষিত উপাত্ত সংগ্রাহক, যাঁরা আমাদের সঙ্গে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন মাঠ গবেষণায় যুক্ত থাকেন। আমাদের প্রশিক্ষিত পুরুষ ও নারী তথ্য সংগ্রহকারীরা ‘কোবো টুল বক্স’ নামের একটি সফটওয়্যারে স্মার্টফোন ও ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। এই তথ্য আমাদের ড্যাশবোর্ডে লাইভ দেখা যায়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর সম্মতি নিয়েই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ঢাকার একটি টিম তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তা চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করে।

মোট ১০,৪১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে দুটি ভিন্ন গোষ্ঠী থেকে—সাধারণ পরিবার (৯,৩৯৮ জন) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (১,০১৫ জন)। দেশজুড়ে ৫২১টি এলাকা (ওয়ার্ড, মহল্লা বা গ্রাম) থেকে এই নমুনা নেওয়া হয়েছে, যাকে আমরা প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) বলি। এই পিএসইউগুলো নেওয়া হয়েছে দৈবচয়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ একজন তথ্য সংগ্রাহক ঠিক কোন জায়গা থেকে তথ্য নেবেন সেটা দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

প্রতিটি এলাকা থেকে প্রায় ২০ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারির তালিকা থেকে লটারির মতো করে দৈবচয়ন ভিত্তিতে এই এলাকাগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের আদমশুমারির তালিকা এখনো প্রকাশ না হওয়ায় আমরা সেটাকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারিনি। আমাদের প্রথম রাউন্ডের সঙ্গে যাতে সামঞ্জস্য থাকে সেই বিবেচনায় প্রথম রাউন্ডের পিএসইউ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

আমাদের নমুনাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা দেশের ভোটার–বয়সী জনসংখ্যার একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরে। আমাদের চূড়ান্ত নমুনার কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

এলাকা: ৬৯.

৫% গ্রামীণ, ৩০.৫% শহুরে।

লিঙ্গ: ৫৪.২% পুরুষ, ৪৫.৪% নারী, ০.৪% তৃতীয় লিঙ্গ।

প্রজন্ম: ৩৭.৬% জেন–জি (১৮-২৮ বছর), ৩৩.৪% মিলেনিয়ালস (২৯-৪৪ বছর), ১৯.৮% জেন–এক্স (৪৫-৬০ বছর) এবং বাকিরা তার চেয়ে বেশি বয়সী।

ধর্ম: ৮৮.১% ইসলাম, ১০.২% হিন্দু, ১.৪% বৌদ্ধ, ০.৩% খ্রিষ্টান।

বিভাগ: ঢাকা ২৫.৬%, চট্টগ্রাম ২০.৫%, রাজশাহী ১৩.০%, খুলনা ১১.২%, রংপুর ১১.০%, ময়মনসিংহ ৭.১%, সিলেট ৬.২% এবং বরিশাল ৫.৩%। আমাদের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের পেশা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বৈচিত্র্যও রয়েছে, যা আমাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে।

আমাদের লক্ষ্য কী?

আমরা আগেই বলেছি, আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের নীতিনির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেন গণমানুষের মতামত ও গবেষণার ওপর আস্থা ফিরে আসে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

এরপর কী?

নির্বাচনের আগে তৃতীয় পর্বের জরিপের জন্য বেশ জোরালো দাবি উঠেছে। এদিকে আমাদের কাছে দ্বিতীয় পর্বেরই আরও অনেক তথ্য রয়েছে, যা থেকে নতুন অনেক বিষয় উঠে আসবে। আমরা বর্তমানে তৃতীয় পর্বের জন্য পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছি। আগামী সপ্তাহগুলোতে আমরা দ্বিতীয় পর্বের আরও নতুন নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করতে থাকব। আমরা পিএইচডি শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকদের কাছ থেকে ডেটা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ পেয়েছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় নিরপেক্ষ জনমত জরিপ একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মো. রুবাইয়াৎ সরওয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইনোভিশন কনসাল্টিং

সাদরুদ্দিন ইমরান সিইও, ইনোভিশন কনসাল্টিং

*মতামত লেখকদের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ত য় পর ব র র জন ত ক আম দ র প প রকল প র মত মত লক ষ য প রক শ র উন ড ক জ কর র জন য সরক র ফল ফল র ওপর প রথম র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রায় দুই বছর পর ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভোটার এই সংঘাত মোকাবিলায় ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।

গাজায় হামলার প্রতি এই অসন্তোষের কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভোটাররা এই অঞ্চলের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতের বিষয়ে তাঁদের সহানুভূতি পুনর্মূল্যায়ন করছেন। টাইমস ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করার পর এই প্রথম ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুটা বেশি ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সে সময় ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলকে এবং ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

নতুন জরিপে ৩৪ শতাংশ ইসরায়েলিদের পক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সংশয়ে আছেন অথবা দুই পক্ষকেই সমানভাবে সমর্থন করেন।

অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এখন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর জনমতে এটি একধরনের বড় পরিবর্তন। প্রতি ১০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬ জন বলেছেন, বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাক বা না পাক বা হামাস নির্মূল হোক বা না হোক, তবু ইসরায়েলের উচিত সামরিক অভিযান বন্ধ করা।

৪০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালাচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সব মিলিয়ে টাইমস/সিয়েনা জরিপের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে বড় ধরনের অবনতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে দুই দলই সমানভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছিল। এই অতি বিভক্ত যুগে জনমতে এত বড় পরিবর্তন অস্বাভাবিক ঘটনা বটে। সাধারণত যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।

আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকফুট শহরের ডেমোক্র্যাট সমর্থক অস্টিন মাগলস্টন বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

যোগাযোগ খাতে কাজ করা ৩৩ বছর বয়সী মাগলস্টন বলেন, ‘আমি আসলে কয়েক বছর ধরে বেশ ইসরায়েলপন্থী ছিলাম, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের সেই বিধ্বংসী হামলার রাতের কথা শোনার পর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাউকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটি যত দীর্ঘ হচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা করছে, তা দেখে এটিকে আর কোনোভাবেই সমান ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে না।’

এই জরিপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যের বৃহত্তম প্রাপক, যারা এ পর্যন্ত শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।

দল-মতনির্বিশেষে তরুণ ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে কম আগ্রহী। ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭ জন অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বা সামরিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন।

ইসরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। রিপাবলিকানরা মূলত ইসরায়েলকে সমর্থন করে চলেছে। তবে তাঁদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সামান্য কমেছে।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা আর খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মধ্য গাজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ