রাজু আহমেদ বাবুর সকালটা ছিল অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। বাড়িতেই ছিলেন। হঠাৎ এক আতঙ্কিত ফোনকল- দোকানে আগুন! কথাটা শুনে যেন বুকের ভেতর কাঁপন উঠল।

হকচকিয়ে উঠে দৌঁড়ে গেলেন দোকানের দিকে। গিয়ে দেখলেন, দোকানের ভেতর থেকে বের হচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়া। বিদ্যুতের ভয়ে কেউ কাছে যাচ্ছেন না। বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে করতেই পুড়ে ছাই দোকানের অনেক মালামাল।

আরো পড়ুন:

চাঁদপুরে পুড়িয়ে দেওয়া সেই নারীর মৃত্যু, অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন

সাবেক এমপি নয়নের বাড়িতে চতুর্থ বারের মতো আগুন

গত ১৬ সেপ্টেম্বর এমন ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুরহাটে। ৪০ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন বাবুর বাবা ওয়ালিউল ইসলাম সেন্টু। ছেলে বাবুর মন ছিল ফুটবলে। গোলকিপার হিসেবে বেশ সুনামও করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের দিকে বসতে শুরু করেন বাবার দোকানে। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আর পড়াশোনা হয়নি, খেলাধুলাও হয়নি।

বাবার ব্যবসায় হাত পাকানোর পর ২০০৫ সালে বাবু নিজেই করেছিলেন আলাদা দোকান। শুরুতে ছোট্ট একটা কাঠের ঢোপে শুধু শিশুখেলনা আর কসমেটিক্স তুলেছিলেন। প্রায় শূন্য হাতে শুরু করা তার ব্যবসা গত ২০ বছরে বড় হয়েছিল। ছোট্ট ঢোপ ছেড়ে বড় দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। দোকানভরে কসমেটিক্স ও শিশুখেলনা ছাড়াও ছিল জুতা, স্যান্ডেল, শাড়ি-কাপড়, গার্মেন্টসামগ্রী। সেই দোকান পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী বাবু।

ব্যবসা শুরু করার পর কোনোদিন নিজের ইচ্ছায় দোকান বন্ধ রাখেননি বাবু। ঈদের দিনও বিকেলে দোকান খোলেন তিনি। আগে যখন একাই দোকান চালাতেন, শুধু মালামাল কিনতে যাওয়ার দিন দোকান বন্ধ রাখতেন। এখন বাবুর দোকানে কর্মচারীই দুজন। দোকান কোনো সময় বন্ধ থাকত না।

বাবুর সেই দোকান এখন ১৫ দিন ধরে বন্ধ। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা এ আগুন যেন ‘বিশ্রাম’ এনে দিয়েছে এই ব্যবসায়ীকে। তিনি দোকান খুলতে পারছেন না। কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন, তা-ও বুঝে উঠতে পারছেন না।

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী খোকন দোকানটি পুড়ে যাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। তাতে দেখা যায়, দোকানের ভেতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ভেতর থেকে ধোয়া বের হয়ে আসছে। কেঁদে কেঁদে খোকন বলছেন, “আল্লাহ তুমি হেফাজত করো, আল্লাহ এই মূহুর্তে বিদিরপুর বাজারে আগুন লেগে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আপনি তাড়াতাড়ি আসেন.

..।”

ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। পাশেই ছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্প। তারাও এসেছিল। এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় লোকজনও। প্রথমেই বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপর সবাই মিলে আগুন নেভান। কিন্তু ততক্ষণে দোকানের অনেক মালামাল পুড়ে যায়।

বাবুর দাবি, দোকানে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। পুড়ে গেছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার।

ভুক্তভোগী বাবু এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পুড়ে যাওয়া দোকানের দিকে যান না। বাড়ি থেকেও বের হন না।

কথা হলে জানালেন, প্রচণ্ড হতাশায় প্রথম চারদিন কাটিয়েছেন ঘুমের ওষুধ খেয়ে। এখন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না।

বাবু বলেন, “গত ২০ বছর ধরে আমি তিলে তিলে দোকানটা গড়ে তুলেছিলাম। একেবারে শূন্য হাতে শুরু করে আমি ব্যবসাটা বড় করেছিলাম। একটা দুর্ঘটনায় আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।”

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহাব্বত আলী মিন্টু বলেন, “বিদিরপুর বাজারে বাবুর দোকানটাই ছিল সবচেয়ে বড়। দোকানে অনেক মালামাল ছিল। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে আগুন লেগে বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। এভাবে দোকানটি পুড়ে যাওয়ায় আমাদেরও খুব মন খারাপ।”

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন ব যবস য় কর ছ ল দ ক নট

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ