জয়টা সহজই মনে হচ্ছিল। আফগানিস্তানের ১৫১ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ পেয়ে গিয়েছিল ১০৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আচমকাই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বড় ধস। ১০৯/০ থেকে ১১৮/৬—মাত্র ৯ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

নাগালে থাকা জয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ওই মুহূর্তে ‘হার্টবিট’ কেমন ছিল জাকের আলীর। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, তিনি দুশ্চিন্তা করছিলেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন হতেই পারে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৪ উইকেটে। সপ্তম উইকেটে নুরুল হাসান ও রিশাদ হোসেন ১৮ বলে ৩৫ রান তুলে ৮ বল হাতে রেখেই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। তবে ১১.

৪ ওভার থেকে ১৫.৪ ওভার পর্যন্ত ২৪ বলে ৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কা জাগিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। ওই ৬ ব্যাটসম্যানের মধ্যে জাকের আলীও একজন।

তবে উইকেট-মিছিলের পরও দুশ্চিন্তা করেননি জানিয়ে জাকের বলেন, ‘আমি ড্রেসিংরুমে আরাম করে বসেছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। আমি ছেলেদের চেষ্টায় সন্তুষ্ট।’

আরও পড়ুনজয়ের আগে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ৬ ঘণ্টা আগে

পরে অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমরা (রান তাড়ার) শুরুটা ভালো করেছিলাম। এরপর ধস নামাটা দুশ্চিন্তার। তবে ক্রিকেট একটা মজার খেলা। তারাও আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জেতা-হারাটা খেলাটারই অংশ। বোলিং আর ব্যাটিং—দুই দিকেই কিছু জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন আছে।’

বোলিংয়েও বাংলাদেশ বেশ ভালো শুরুই করেছিল। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল আফগানিস্তান। তবে শেষদিকে মোহাম্মদ নবী-শরাফউদ্দিন আশরাফের ব্যাটে চড়ে ১৫১ রানের সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। এই জায়গায়ও নিজেদের উন্নতির সুযোগ দেখেন জাকের।

তিনি বলেন, ‘বোলাররা এশিয়া কাপে ভালো করেছে, সব সময়ই ভালো করে। কিন্তু আমরা আজ শেষ দিকে কিছু বেশি রান দিয়েছি। এ জন্যই বলছি যে উন্নতির জায়গা আছে।’

আজই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও ভালো করার বিষয়ে আশাবাদী জাকের, ‘আজকে আমরা জিতেছি। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। কাল (আজ) সিরিজ জয়ের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।’

আরও পড়ুনশুরু থেকে শেষ: ৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ১১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন উইক ট হ র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ