কম সংস্কার বেশি সংস্কারের ধোঁয়াশা কি কাটল?
Published: 20th, June 2025 GMT
লন্ডনের ডোরচেস্টার হোটেলে দীর্ঘ সময় ধরে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এবং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে দেশ-বিদেশে কৌতূহলের কমতি ছিল না । বৈঠকে কিছু সময় দুই পক্ষের প্রতিনিধি দল অংশ নিলেও এক ঘণ্টার বেশি সময় দুই নেতা একান্তে আলোচনা করেছেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন সরকার এবং বিএনপির প্রতিনিধিরা। একটি সংক্ষিপ্ত যৌথ বিবৃতিও পড়ে শোনানো হয়েছে। সেখানে দুই পক্ষই তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনেক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার এক সপ্তাহ আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লন্ডনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদপত্র আগ বাড়িয়ে দিন-তারিখও বলে দিয়েছে।
বাস্তবে যৌথ বিবৃতিতে কি তা বলা হয়েছে? সেখানে আছে– যদি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় এবং সংস্কার ও বিচারকার্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়, তাহলে নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে– এ কথা পরিষ্কার করে সিদ্ধান্তের মতোই ঘোষণা দিয়েছিলেন। যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হলেও তা হবে শর্ত পূরণসাপেক্ষে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে উল্লিখিত সময় আর লন্ডনের বিবৃতির সময় একভাবে বলা হয়নি– এটি বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এদিকে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক বিশেষ করে যৌথ বিবৃতি নিয়ে জামায়াত, এনসিপি এবং আরও দু-একটি দল নাখোশ। তারা বলছে, কেন বিদেশে বসে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হলো? সময়সীমা কি আসলেই নির্ধারিত হয়ে গেছে? সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা কি দেওয়া হয়েছে? তা হয়নি। জামায়াতের বিরাগ হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। এ দলের আমির ডা.
প্রধান উপদেষ্টা কোরবানির ঈদের আগে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার আগে কি সব দলের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? জামায়াত-এনসিপিসহ দু-তিনটি পার্টি তখন ত্বরিত ঘোষিত সময়সূচিকে স্বাগত জানিয়েছিল। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। কেউ কি তখন বলেছিল, জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে পরামর্শ করেই সরকার ওই ঘোষণা দিয়েছে?
জামায়াত নির্বাচন নিয়ে কোনো জাতীয় বিবেচনা নয়, বরং সংকীর্ণ দলীয় বিবেচনা থেকে আগাগোড়াই একেক সময় একেক কথা বলেছে। অথচ তা নীতি-নৈতিকতার বিচারে সমর্থনযোগ্য নয়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সবাইকে দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই জরুরি।
নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপিও হতাশা ব্যক্ত করে বলেছে, লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কার যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। অথচ যৌথ বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে– বিচার এবং সংস্কারে যথেষ্ট অগ্রগতি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই কেবল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। তাহলে এনসিপির মন খারাপ করার কোনো কারণ তো দেখছি না। এনসিপি সরকারের ভেতরে-বাইরে থেকে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কৌশলে এগোচ্ছে দল গুছিয়ে তোলার জন্য– এ কথা কে না বোঝে!
লন্ডন বৈঠকের ফলাফলে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখেও হয়তো জামায়াত-এনসিপি মন খারাপ করেছে। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্রদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বৈ কি। লন্ডন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারের উদ্যোগে। খেয়াল করা দরকার, একটি অসাধারণ, প্রাণোচ্ছল পরিবেশে বৈঠকটি শুরু ও শেষ হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাত নেড়ে বৈঠকের শুরুতে এবং বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে হোটেলের সামনে সমবেত নেতাকর্মীর অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। উপরন্তু দীর্ঘ সময় ধরে দুই নেতার বৈঠক। ধরেই নেওয়া যায়, দেশের বর্তমান নানা রাজনৈতিক ইস্যু, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে নিবিড় আলোচনা হয়েছে। হয়তো কোথাও কোথাও ঐকমত্যও তৈরি হয়েছে। ফলে বিএনপি এবং সমমনাদের সমর্থকরা বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হবেন– এটা ধরেই নেওয়া যায়। এতে যে সামগ্রিক রাজনীতিতেও একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটাও কি অস্বীকার করা যায়?
তবে লন্ডন বৈঠকের রেশ কাটতে না কাটতেই কতগুলো প্রশ্ন ঘুরেফিরে সামনে আসছে। লন্ডনে সাংবাদিকদের সামনে সরকারের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। অথচ নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা এখন পর্যন্ত কোনো সিগন্যাল পায়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে এ দাবি তুলেছেন।
এখন লন্ডন বৈঠকের যুক্ত বিবৃতিতে উল্লিখিত পর্যাপ্ত সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতি এবং সব প্রস্তুতি সম্পন্ন বলতে সরকারপক্ষ কী বোঝাতে চাইছে, তা কিন্তু খোলাসা করেনি। তবে কি আবারও কম সংস্কার অথবা বেশি সংস্কারের মারপ্যাঁচের মধ্যে আমরা পড়ে গেলাম? আমরা তা মনে করতে চাই না। বিশ্বাস করতে চাই, দুই নেতা দীর্ঘ সময় ধরে একান্তে আলোচনায় এসব নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ।
দু-একটি দল মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও এই হাইভোল্টেজ বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে, তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশ-বিদেশের কোনো চক্রান্ত যেন এই স্বস্তির পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সবাইকে পাহারা দিয়ে দেশকে নির্বাচনের ট্রেনে তুলে দিতে হবে, যাতে রোজার আগেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতি একটি নির্বাচিত সরকার পায়।
মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল: নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ সরক র র ব এনপ র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য পিএসসির যত নির্দেশনা
আগামী শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার আসনব্যবস্থা, সময়সূচি ও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।
পিএসসি জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএসে অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৪৭তম বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে (ক্যাডার ও নন–ক্যাডার মিলিয়ে) নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিসিএসে কিছু নতুন পদ যুক্ত হয়েছে।
সময়সূচি ও কেন্দ্র১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ৮টি। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
আরও পড়ুনইউনিমেট-শাবানা মাহমুদ-দেখার হাওর-বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর-কী, জেনে নিন১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরীক্ষার্থীদের করণীয়১। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটের পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের হলের নাম ও কক্ষ নম্বর আগেই মেসেজের মাধ্যমে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে প্রেরণ করা হবে।
২। সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র বিতরণ করা হবে। উত্তরপত্রের ৪টি সেট থাকবে, যেমন সেট # ১, ২, ৩ ও ৪। সকাল ১০টায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৩। পরীক্ষাকেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক কার্ড/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গহনা ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্ণিত নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৪। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৫। পরীক্ষায় মোট ২০০টি এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা হবে।
আরও পড়ুন৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসই আসল প্রস্তুতি১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৬। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য শ্রুতলেখকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্র ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএসের প্রশাসনে প্রথম শানিরুলকে ভাইভায় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল ২৯ মে ২০২৪