জলবায়ুর ৮৯১ প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার দুর্নীতি
Published: 5th, November 2025 GMT
নিজস্ব তহবিলে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের গঠন করা বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) ৮৯১টি প্রকল্পে ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির হিসাবে বিসিসিটি প্রকল্পের ৫৪ শতাংশের বেশি অর্থ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণায় বিসিসিটির ৮৯১টি প্রকল্পের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনে ১৭৫ কোটি টাকা, ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মে ৬০০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তদারকি পর্যায়েও ৫৪ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটির অধীনে অনুমোদিত ৮৯১টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১১১ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অপচয় বা আত্মসাৎ হয়েছে। এ হিসাবে ৫৪ দশমিক ১৮ শতাংশ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
টিআইবির গবেষণা বলছে, বিসিসিটিপ্রকল্পে দুর্নীতির মূল ক্ষেত্রগুলো হলো প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেন, ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে অর্থ আত্মসাৎ। ২০১৯–২০২৩ সালে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর অর্ধেকের বেশি ছিল সৌর সড়কবাতি স্থাপনসংক্রান্ত, যেখানে অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে ১৭০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ হয়েছে বলে টিআইবির অনুমান।
বিসিসিটির পুনর্গঠন সময়ের দাবিসংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি আত্মসাৎ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে বিসিসিটিকে পেশাদারভাবে পুনর্গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প অন ম দ জলব য় ট আইব
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে কি সুযোগ পাবেন নেইমার
২০১০ সালের কথা। নেইমার তখন সান্তোসে। দরিভাল জুনিয়র ক্লাবটির কোচ। একটি ম্যাচে মাঠ থেকে নেইমারকে তুলে নেন দরিভাল। বেঞ্চে বসে সবার সামনেই কোচের ওপর ক্ষোভ উগরে দেন নেইমার। ১৮ বছর বয়সী নেইমার তখন মাঠে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ও তুখোড় ফুটবলার। ব্রাজিলিয়ানরা তাতে মজেছিলেন। সে কারণে নেইমার নয়, দরিভালকে তাঁর সিদ্ধান্তের কারণে দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়।
১৫ বছর পরের কথা।
মারাকানায় গত সোমবার ফ্ল্যামেঙ্গো-সান্তোস ম্যাচ চলছিল। দৃশ্যপটে খানিকটা পরিবর্তন। নেইমার সেই আগের মানুষটি আর নেই। ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের শরীর আগের চেয়ে আরেকটু ভারী ও গতি কমেছে। অতীতের সেই ঝলকও আগের মতো আর পায়ে ফোটে না। কিন্তু সান্তোস কোচ হুয়ান পাবলো ভয়ভোদা তাঁকে বদলি হিসেবে তুলে নিতেই বাধল বিপত্তি। নেইমার রেগে কাঁই। কোচ তাঁকে তুলে নেওয়ায় রাগটা ঝাড়লেন সবার সামনেই।
তখন দেখে মনে হয়েছে, নেইমার আসলে কোচ নয়, সান্তোস নয়, লড়ছিলেন এমন এক বাস্তবতার সঙ্গে যেটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। বয়স! ৩৩ বছর বয়সী নেইমার মানতেই পারছিলেন না, তাঁর এখন বয়স হয়েছে। অবনমনের শঙ্কায় পড়া একটি ক্লাবের জন্য তাঁকে নিষ্ফলা হিসেবে পুরো সময় খেলানো বিলাসিতা। ব্রাজিল জাতীয় দলের জন্যও কি এই মুহূর্তে ব্যাপারটি খুব মিথ্যা?
জাতীয় দলের প্রসঙ্গে আসার আগে সেই ম্যাচে নেইমারের দুটি মন্তব্য উল্লেখ না করলেই নয়। বিরতির সময় সতীর্থদের বলেছেন, ‘ফাইনাল থার্ডে (আক্রমণভাগ) আমাকে বেশি বেশি খুঁজতে হবে। গোল করার এটাই একমাত্র পথ।’
কথাটি ভাঙলে বোঝা যায় বিষয়টি আসলে এমন—সান্তোসকে গোল পাইয়ে দেওয়ার একমাত্র পথ হলো অ্যাটাকিং থার্ডে নেইমারকে বেশি বেশি পাস দেওয়া। এই কথার আরেকটি অর্থ হতে পারে এমন, প্রতিপক্ষের বক্সের চারপাশে খেলার আগের সেই ধার ও শারীরিক সামর্থ্য আর নেই নেইমারের। এ কারণে গোল বানানো ও গোল করার দায়িত্ব তাঁর যতটা, সতীর্থদের তাঁকে খুঁজে বের করে গোল করানোর দায়িত্বটা আরও বেশি। বিশ্বাস হয় এটা নেইমারের কথা!
বদলি হয়ে উঠে আসার সময় কোচকে নেইমার বলেছেন, ‘আমাকে তুলে নিচ্ছ নাকি?’ তখন ম্যাচের ৮৫ মিনিট। সান্তোস ৩-০ গোলে পিছিয়ে। কাগজে-কলমে দলের সেরা তারকাকে এমন সময়ে কোচ যদি তুলে নেন, তাহলে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় গোলের জন্য সান্তোস কোচ আর নেইমারের ওপর ভরসা রাখেন না। সান্তোস ম্যাচটি হারলেও নেইমার উঠে যাওয়ার পর দুই গোল করেছে।
আরও পড়ুন৯-১ গোলে জিতে নবমবারের মতো বিশ্বকাপে রোনালদোর পর্তুগাল৮ ঘণ্টা আগেএবার ১৫ বছর আগে-পরের দৃশ্যপটে ফেরা যাক। ২০১০ সালের সেই সময়ে গোটা ব্রাজিল ছিল নেইমারের পক্ষে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে নেইমারের পক্ষে প্রায় কেউ নেই। ব্রাজিলজুড়ে তাঁর অমন আচরণের তুমুল সমালোচনা হয়েছে। নির্মম বাস্তবতা হলো, ব্রাজিলিয়ানরা তাদের সোনার ছেলেটির ওপর আস্থা রাখেন না। কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকলেও ব্রাজিলিয়ান খ্যাতিমান সাংবাদিক জুকা কাফুরির মুখে শুনতে পারেন, ‘আমার ৫৫ বছরের ক্যারিয়ারে নেইমার প্রতিভার সবচেয়ে বড় অপচয়।’
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে ফেরা যাক।
ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বশেষ ২০২৩ সালে খেলেছেন নেইমার