ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংযোগের অভিযোগে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ইসরায়েলের গুপ্তচর হিসেবে ইরানে কাজ করতেন।

ফার্স নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম প্রদেশের গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২ জনকে জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংযোগ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী-আইআরজিসির নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং ‘অপরাধী শাসনব্যবস্থাকে (ইসরায়েল) সমর্থন’ করার মতো অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন:

ইরান-ইসরায়েল ছেড়ে পালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা

এক্সপ্লেইনার: ইরানে হামলার ‘ইসরায়েলি বাহানা’ আন্তর্জাতিক আইনে ‘অবৈধ’

তবে প্রতিবেদনটিতে অভিযুক্তদের পরিচয় বা তাদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ইরানে প্রথম দিনকার হামলার পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর আসে, তেহরানের ভেতরেই গোপন ঘাঁটি তৈরি করেছিল ইসরায়েল, সেই ঘাঁটি থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়। সেই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করা হয়। পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কয়েকজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।

ইরানে ইসরায়েলের এমন গোপন আস্তানা পরিচালনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আইআরজিসি। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২১ জুন) তাদের হাতে কয়েক দিনে ২২ জন গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য প্রকাশ করল তারা।

১৩ জুন ভোরে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারপর পাল্টা হামলায় নামে ইরান। উভয় দেশ হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। 

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গেছে বলে অভিযোগ তুলে দেশটিতে নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল; যেখানে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বলছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি পৌঁছানোর কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।

ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার আছে বলে অভিযোগে ২০০৩ সালে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যদিও তেমন কোনো অস্ত্রই ছিল না ইরাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েল ইরাক মডেলে ইরানে হামলা চালাচ্ছে, যার কোনো ভিত্তিই নেই।

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ লিখেছে, জায়নবাদী শাসন ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে একটি উস্কানিমূলক আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার ফলে অনেক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক নিহত হন।

ইরানি সামরিক বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর মহাকাশ বিভাগ ২১ জুন পর্যন্ত “ট্রু প্রমিজ থ্রি” (সত্য প্রতিশ্রুতি-৩) অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দফায় দফায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র য ক তর

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে এবার ‘সেজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: সিএনএন

ইসরায়েল লক্ষ্য করে এবার মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বরাতে এ খবর দিয়েছে সিএনএন।

বুধবার রাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে সেজ্জিল-২ কঠিন জ্বালানিযুক্ত মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ট্রু প্রমিজ-৩-এর অংশ হিসেবে ১৩তম বার অতি ভারী, দীর্ঘ পাল্লার, সেজ্জিল-২ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এর আগে ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।


বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন করে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের নিজস্ব। দেশটি দাবি করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সীমানা অতিক্রম করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি।

ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর ছয় দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।

এর আগে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে। ইরানের ইসলামিক রিভ্যলিউশনারি গার্ড বলেছে, তেহরানের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলীতে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের সংবাদমাধ্যম বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে খবর দিয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর পূর্ব তেহরানে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়ছে।

কিছু সূত্র বলছে, তেহরানের লাভিজান এলাকাতেও বিমান হামলা হয়েছে। নিউজ সাইট তাবনাক বলছে, তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ ছাড়াও কারাজের বিভিন্ন এলাকায় হামলা করছে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। সেন্ট্রিফিউজ সিস্টেম ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে আইএইএ জানায়, ইরানি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র টিইএসএ কারাজ ও তেহরান রিসার্চ সেন্টারে হামলা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রই একসময় আইএইএর নজরদারির আওতায় ছিল। এর আগে ইসরায়েলও তাদের রাতভর হামলায় ইরানের সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিল। 

আইএইএ -এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরান রিসার্চ সেন্টারের একটি ভবনে হামলা হয়েছে। এখানে অ্যাডভান্সড লেভেলের সেন্ট্রিফিউজ রটরস উৎপাদন ও পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কারাজে ইরান সেন্ট্রিফিউজ টেকনোলজি কোম্পানির (টিইএসএ) দুটি ভবন ধ্বংস হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রিফিউজের বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদন করা হয়। দুটি স্থাপনাই এর আগে ইরানের পরমাণু চুক্তির আওতায় আইএইএ পর্যবেক্ষণ করেছিল। সেন্ট্রিফিউজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়, যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতেও দরকার।

এছাড়া ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানের এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধরা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস বলছে, ইরানজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১ হাজার ৩২৬ জন। খবর আল-জাজিরার। সংগঠনটি বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে।

ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের বিষয়ে সর্বশেষ সোমবার তথ্য জানিয়েছে ইরান সরকার। দেশটির সরকারি হিসাবে, নিহতের সংখ্যা ২২৪। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।

চলমান সংঘাতে ইরান সরকার নিয়মিত হতাহতের তথ্য প্রকাশ করছে না। সবশেষ সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল গত সোমবার। সেই তথ্য অনুসারে, ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন মানুষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরাসরি: আইআরজিসির আরেক কমান্ডারদের হত্যার দাবি ইসরায়েলের
  • ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ভূমিকম্প, আইআরজিসির ‘পরীক্ষা চালানোর’ গুঞ্জন
  • ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ভূমিকম্প, ‘পরীক্ষা চালানোর’ গুঞ্জন আইআরজিসির
  • আইআরজিসির ড্রোন ইউনিটের দ্বিতীয় শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
  • ইরানে নতুন সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগ 
  • ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ধরনের ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা: ইরান
  • ইসরায়েলে এবার ‘সেজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান: সিএনএন