শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা
Published: 21st, June 2025 GMT
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর একটি আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এসব ছবি-ভিডিও ছড়ানোর পর জেলায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে গেছেন। তবে তাঁর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি ছুটিতে গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তাঁর আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন।
ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করত। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিত। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীদের ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখে না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’
ভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। আর জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেননি।
দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন শরীয়তপুর জজ কোটের একজন আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য। কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন। যা পরিশোধের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’
গত বছরের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক হিসেবে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরে যোগদান করেন। জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।
ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।