সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে আজ শনিবার এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসাসহ পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শনিবার বিকেলে হাওরের জয়পুর এলাকায় ‘হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানানো হয়। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এই সভার আয়োজন করে।

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা

জেলা প্রশাসনের নির্দেশনাগুলো হলো—হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানের প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার; পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার; স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ; প্লাস্টিক পণ্য বর্জন; দূর থেকে পাখি ও প্রাণী পর্যক্ষেণ করা; ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকা; হাওরে উচ্চ শব্দে গানবাজনা না করা বা শোনা; হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক–জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য না ফেলা; মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ না করা ও পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন নাœঘটানো; ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করা; গাছ কাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ না করা; হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ না করা; মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে না ফেলা।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.

ইলিয়াস মিয়া বলেছেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের সম্পদ। তাই হাওরে এমন কোনো কিছু করা যাবে না যাতে প্রকৃতি, পরিবেশ ও হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। এটি আমরা হতে দেব না। এ জন্য সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়

শনিবার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জয়পুর এলাকায় এলাকাবাসীর সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন টাঙ্গুয়ার হাওর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম, সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খসরুল আলম ও আহমদ কবির প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, পরিবেশের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বার্থ দেখতে হবে। পর্যটনের কারণে স্থানীয় মানুষ কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না বরং নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। হাওরের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। মূল হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। সেখানে পর্যটকেরা যাবেন হাতে চালানো নৌকায় করে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ঙ গ য় র হ ওর পর ব শ ও হ ওর র জ ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ ক্ষতি হাজার কোটি রুপির বেশি

এক বছর আগেও কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’খ্যাত অংশটি ছিল শহরের হোটেল ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার জমজমাট এক জায়গা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আর তাতে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’খ্যাত এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এক বছর পরও সেই অস্থিরতার ধাক্কা টের পাওয়া যাচ্ছে। এক বছরে এই এলাকার ব্যবসা–বাণিজ্যের লোকসানের অঙ্ক ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। এমনটাই জানানো হয়েছে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার নিউমার্কেটের কাছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মারকুইস স্ট্রিটঘেঁষা এই এলাকা বহু বছর ধরেই বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। সাশ্রয়ী হোটেল, ‘ওপারের বাংলা’ খাবার পরিবেশনকারী রেস্তোরাঁ, কলকাতার প্রধান বাস ও রেলস্টেশনের কাছাকাছি অবস্থান আর সহজলভ্য চিকিৎসাসেবার জন্য এই এলাকা ছিল জমজমাট। এক বছর আগেও এই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকত। একদা ব্যস্ত এই এলাকার গলিগুলো এখন সুনসান।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে বলা হয়, এক বছরে ‘মিনি বাংলাদেশ’–এর লোকসান হয়েছে এক হাজার কোটি রুপির বেশি। অনেকে বলছেন, ক্ষতির প্রকৃত অঙ্ক আরও বড়। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান জানান, ‘হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা বিক্রি, ভ্রমণ এজেন্সি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা ও পরিবহন—সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো। নিউমার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি হিসাবে ধরলে বার্ষিক ক্ষতির এই অঙ্ক ৫ হাজার কোটি ছাড়াবে।’

মারকুইস স্ট্রিটের এক ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, এলাকার অনেক ব্যবসা হয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা স্থানীয় ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক বছর আগেও একসঙ্গে একাধিক বাসে পর্যটক আসতেন, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া কঠিন ছিল। এখন দিনের পর দিন চলে যায়, একজন পর্যটকও আসেন না।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি টাকার সঙ্গে যুক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা কার্যত অচল। মারকুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের এই ব্যবসা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বাস্তবতা হলো, আমরা এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি।’

ব্যবসায়ীদের মতে, সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোও এখন সীমিত বাজেটে চলছে। এক রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, ‘ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে গেছে। এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। কোনোভাবে ধরে আছি আর ভাবছি, কোনো একটা পরিবর্তন হলো বলে।’

ঢাকার রাজনৈতিক অস্থিরতা এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিতীয় ধাক্কা, প্রথম ধাক্কা এসেছিল মহামারিতে। এক জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জানান, ‘মহামারির পর ব্যবসা বাড়বে ভেবে অনেক বিনিয়োগ করেছিলাম, ঋণ নিয়ে সংস্কারও করেছি। অস্থিরতার আগে ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন আমার বড় ভাই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের মাসে দেড় লাখ রুপি কিস্তি দিতে হয়, অথচ আয় প্রায় নেই বললেই চলে।’

শুধু বড় ব্যবসা নয়, পর্যটনকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি—ঘরোয়া খাবার সরবরাহকারী, আবাসনমালিক, পর্যটন গাইড—সব ব্যবসাই কমবেশি ভেঙে পড়েছে। হোটেলের কর্মী, রাঁধুনি, ড্রাইভার, দোকানকর্মী হিসেবে কাজ করা শত শত স্থানীয় বাসিন্দাও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, ‘মহামারির পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। তখন ব্যবসা এত ভালো চলত যে অনেক সময় গ্রাহক ফেরাতে হতো। এখন মাসে পাঁচ-ছয়টা বুকিংও জোটে না, তা–ও স্থানীয়রা এসব ভাড়া নিচ্ছেন। এতে ভাড়াও বেশি পাওয়া যায় না। অথচ গাড়ির কিস্তি দিতে হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাজেক–বাঘাইহাট সড়ক তলিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ, পাঁচ শতাধিক পর্যটক আটকে ছিলেন ৫ ঘণ্টা
  • কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ ক্ষতি হাজার কোটি রুপির বেশি
  • কলকাতায় ‘মিনি বাংলাদেশে’ হাহাকার অব্যাহত, ক্ষতি এক হাজার কোটি টা