সরকারের পরিচালন ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের বৈধ অতিরিক্ত সুযোগ–সুবিধা কমিয়েও এ ব্যয় কমানো যায়। তবে প্রশাসনের মধ্যে অস্থিরতার মধ্যে এসব সুযোগ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে অস্থিরতা আরও বেড়ে যেতে পারে।  

শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার এই কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সরকারের পরিচালনা ব্যয় অনেক পরিমাণে কমানো সম্ভব। অনেক জায়গায় কর্মকর্তাদের বৈধ কিন্তু বাড়তি সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। এমনিতে দুর্নীতি–অনিয়ম তো আছেই।  বৈধভাবেই থাকা বাড়তি সুযোগ–সুবিধা কমিয়ে পরিচালনা ব্যয় কমানো যায়।’ 

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখার বিপক্ষে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটি তুলে দেওয়া হবে। 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি থেকে শুরু করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পর্যন্ত পুরো পদ্ধতির মধ্যে বহু জায়গায়  ত্রুটি রয়েছে। এটি অনেকদিন ধরে কেউ দেখেনি। এর মধ্যে কিছু হলো ইচ্ছাকৃত ত্রুটি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রকল্পে ত্রুটি থাকবেই। আরেকটা হলো কাঠামোগত ত্রুটি। তবে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়। 

প্রকল্পের কাজের দরপত্রেও বড় অনিয়ম হয় বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে যত মহাসড়কের কাজ হয়েছে সেগুলোতে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান ক্রমাগতভাবে কাজ পেয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, নৌ পরিবহনসহ অন্যান্য খাতেও যা ঘটেছে। এর কারণ হলো, দরপত্র পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি রয়েছে। পর্যালোচনা ত্রটির কারণে বাংলাদেশে দরপত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও অপচয় হয়।
 
অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় ছোট করা হয়েছে। এর একটা কারণ, বিদ্যমান অধিকাংশ প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় কাটছাঁট করে ছোট হয়েছে। তবে এ কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্প প্রণয়ন পদ্ধতির মধ্যে বহু জায়গায় বহু ত্রুটি রয়েছে। 

এখন থেকে প্রকল্পের সবগুলো ধাপের নথি অনলাইনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব নথির অধিকাংশ তথ্যই উন্মুক্ত থাকতে পারে। এসবে গোপনীয়তার কিছু নেই। 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও জানান, বর্তমানে যারা সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পান তাদের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উপকারভোগী হবার যোগ্য নয়।  

উপদেষ্টা জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটা হালনাগাদ তালিকা বানানো হয়েছে। এটি ধরে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সঠিক উপকারভোগী যাচাই করা হবে। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন থেকে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কিছু জায়গায় সরকারি কর্মকর্তা এবং এনজিও কর্মীদের সহায়তায় মাঠ বৈঠক করে ভুয়া উপকারভোগী বাদ দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গ 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তো একটা ট্যাগ (রাজনৈতিক পরিচয়) থাকেই। হয় সাদা দল, না হয় নীল বা অন্য কিছু। তবে তিনি উপাচার্য নিয়োগের জন্য যাদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের কিছু মানদণ্ডের কথা বলেছিলেন। সাইটেশন সংখ্যা, সততা, দক্ষতা প্রভৃতি বিষয় দেখার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছিলেন বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। 

কথা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো হওয়া যাবে না। কাজেই মৃদু বিএনপি হওয়া যাবে, অথবা নিষ্ক্রিয় বিএনপি হওয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মধ্যেও হাসাহাসি হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘বিএনপির লোকজন বলে যে, উনি (উপদেষ্টা) তো আমাদের (বিএনপি) লোক নেন না। এতদিন ধরে বঞ্চিত লোকজন রয়েছে, তাদের কাউকেই নেন না। উনি (উপদেষ্টা) শুধু নিষ্ক্রিয় বা মৃদু বিএনপি নেন। এই কথাটা কিন্তু খুব প্রচলিত আছে।’ 

উপাচার্য নিয়োগ দিতে গিয়ে যোগ্য লোক খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এবং সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে— এত পদ খালি রয়েছে, কিন্তু এই পদে আমি কাকে নিয়োগ দেব তা খুঁজে পাই না। কারণ, রাজনৈতিক দল না হওয়ায় আমরা লোকজন বেশি চিনি না।’ 

‘এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা’

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তরণ একটি প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা। আমরা কোনোমতেই এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত নই।’ 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আসরে ২০২১ সালেই উত্তরণ হয়ে গেছে। এখন আমরা প্রথম তিন বছরের পর দুই বছর এক ধরনের গ্রেস পিরিয়ডে আছি। এখন নতুন করে যদি তিন বা পাঁচ বছর চাওয়া হয়–তা এক ধরনের আবদার হতে পারে।’ 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র জন ত ক উপদ ষ ট সরক র র প রস ত র র পর ব এনপ সবচ য এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো

ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

কীভাবে চিকিৎসা নেবেন

ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।

যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫

যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।

এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:

১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।

৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।

প্রতিবেশীদের ভূমিকা

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।

 সূত্র: মুসলিম ডটএসজি

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ