ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বালুমহাল ইজারা, আতঙ্কে গ্রামবাসী
Published: 21st, June 2025 GMT
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে সরকার। সম্প্রতি ওই এলাকায় পদ্মা নদীর অংশ বিশেষকে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জেলা প্রশাসনের নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনপ্রবণ। পদ্মা নদীর বালুমহাল থেকে বালু তোলা হলে তিনটি বাজারসহ প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে পড়বে। প্রশাসনের পদক্ষেপে আতঙ্কে দিন পার করছেন অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দা।
শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলায় মোট ২১টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন জেলার পদ্মা পারের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে এই অঞ্চলের অন্তত ২৫ হাজার পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলা প্রশাসন, পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর মৌজার ২২ দশমিক ৬৩ একর জমি বালুমহাল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বালুমহাল ঘোষণার অনুমতি চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠিও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বছর না পেরোতে একই এলাকার আরেকটি মৌজায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এমন উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে জমি ও বসতভিটা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার দুপুরে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এ সময় তিনি নদী ভাঙনের জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ী করে ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও জনস্বার্থবিরোধী অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রশাসন আবারও তাদের গৃহহীন করতে চায় কিনা প্রশ্ন রেখে স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন জুয়েল জানান, গত বছর নদী ভাঙনে তাঁর বসতঘর নদীতে চলে গেছে। সবকিছু হারিয়ে তাঁর পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বালুমহালের ইজারাদার যদি বৈধভাবে ১০টি ড্রেজার বোট পরিচালনার অনুমোদন পায়, বাস্তবে তা থেকে অনেক বেশি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়। বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় দুলাল মালত বলেন, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই যেভাবে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে তা ভয়ংকর। পাউবো কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সেখানে ভাঙনের আশঙ্কা আছে। তবু এমন সিদ্ধান্ত কেন?
নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান শিপন বলেন, কাঁচিকাটা এলাকার মানুষ সবসময় নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করেন। শুনলাম, জেলা প্রশাসক সেখানে নতুন করে বালু উত্তোলনের ইজারা দেবে, এটা হাস্যকর।
এ বিষয় জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, বালুমহাল ঘোষণার জন্য পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়েই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বালুমহাল ইজারা, আতঙ্কে গ্রামবাসী
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে সরকার। সম্প্রতি ওই এলাকায় পদ্মা নদীর অংশ বিশেষকে বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জেলা প্রশাসনের নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
প্রশাসনের এমন উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনপ্রবণ। পদ্মা নদীর বালুমহাল থেকে বালু তোলা হলে তিনটি বাজারসহ প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে পড়বে। প্রশাসনের পদক্ষেপে আতঙ্কে দিন পার করছেন অন্তত ৪০ হাজার বাসিন্দা।
শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলায় মোট ২১টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন জেলার পদ্মা পারের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে এই অঞ্চলের অন্তত ২৫ হাজার পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলা প্রশাসন, পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর মৌজার ২২ দশমিক ৬৩ একর জমি বালুমহাল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বালুমহাল ঘোষণার অনুমতি চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠিও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বছর না পেরোতে একই এলাকার আরেকটি মৌজায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এমন উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে জমি ও বসতভিটা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার দুপুরে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এ সময় তিনি নদী ভাঙনের জন্য অবৈধ বালু উত্তোলনকে দায়ী করে ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও জনস্বার্থবিরোধী অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রশাসন আবারও তাদের গৃহহীন করতে চায় কিনা প্রশ্ন রেখে স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন জুয়েল জানান, গত বছর নদী ভাঙনে তাঁর বসতঘর নদীতে চলে গেছে। সবকিছু হারিয়ে তাঁর পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বালুমহালের ইজারাদার যদি বৈধভাবে ১০টি ড্রেজার বোট পরিচালনার অনুমোদন পায়, বাস্তবে তা থেকে অনেক বেশি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়। বালুমহাল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় দুলাল মালত বলেন, হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াই যেভাবে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে তা ভয়ংকর। পাউবো কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সেখানে ভাঙনের আশঙ্কা আছে। তবু এমন সিদ্ধান্ত কেন?
নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান শিপন বলেন, কাঁচিকাটা এলাকার মানুষ সবসময় নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করেন। শুনলাম, জেলা প্রশাসক সেখানে নতুন করে বালু উত্তোলনের ইজারা দেবে, এটা হাস্যকর।
এ বিষয় জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, নদীতে বালু জমে চর তৈরি হয়। যা সরাতে গিয়ে কখনও ভাঙন কমে, আবার কখনও বেড়ে যায়। তাই হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়া বালু উত্তোলন করলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, বালুমহাল ঘোষণার জন্য পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়েই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হবে।