ইসরায়েল কয়েক যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে ষড়যন্ত্রের এক নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। শেষ পর্যন্ত এবার তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ইরানে মার্কিন-ইসরায়েল উস্কানির বিপরীতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সেই সাফল্যের প্রতিচ্ছবি। দেড় কোটি ইহুদি আরবের ৩৫ কোটি মুসলমানকে আত্মঘাতী সংঘাতে লেলিয়ে দিল! যেখানে ব্যবহৃত হলো মার্কিন, রাশিয়ান আর চীনা সমরাস্ত্র।
ইসরায়েল এবার আরব, ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকাকে তাদের পরিকল্পনামতো পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি টানেন, কিন্তু ইসরায়েল সফলভাবেই মুসলিম উম্মাহকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল যা পেরেছে, বিশ্বের আর কেউ অন্তত মার্কিন পরাশক্তিকে তাদের ঘাড়ে পা রেখে এভাবে আনুগত্যে বাধ্য করতে পারবে কিনা, সন্দেহ আছে। ৩৫ কোটি মুসলমানসহ গোটা বিশ্বের ধুরন্ধর শাসকদের ধুল খাওয়ানো ইসরায়েলই বিশ্ব-শাসক হওয়ার দাবিদার।
ধীরে ধীরে আরব বিশ্বের এক প্রান্তে ঠাঁই নেওয়া, এর পর অঞ্চলজুড়ে ফ্যাসাদের বিষ ছড়ানো। আত্মসংঘাতে বিধ্বস্ত আরবের বুকে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের পথে বাধা থাকল কই আর! এ কাজে তাদের সহায়তার জন্য ব্রিটেনের মতো রাজতন্ত্র বা নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত, সভ্য সমাজচ্যুত বর্বর অপরাধীদের উত্তরসূরি আমেরিকার মতো রাষ্ট্র যে তেল-পানির লোভে জিভ দুলিয়ে আসবে, তা তারা ভালোই জানত।
তবে ইসরায়েলের আরব দখলের দুঃস্বপ্ন দেখার ধৃষ্টতায় মূল রসদ জুগিয়েছে আরবের মুসলমানরাই। তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরব বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা যাচাইয়ের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা ছিল সম্ভবত ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিন দখলে নিয়ে সভ্য পৃথিবীর অন্যতম বর্বরোচিত গণহত্যা চালানো হয়। বিপরীতে সৌদি, কাতার, আমিরাত, ইসরায়েলের সদর দরজার বিশ্বস্ত প্রহরী জর্ডান, মিসরসহ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর নীরবতায় তাদের উপেক্ষিত ইসলামী সত্তা ও ভণ্ড মুসলমানিত্ব নিশ্চিত হয়। আগাতে থাকে ইসরায়েল।
এর বাইরে যারা হুমকি ছিল সেই গাদ্দাফি, সাদ্দাম, আরাফাতকে হত্যা করে তাদের দেশে পুতুল সরকার বসানোর কাজ, নাগাসাকিতে যিশুর শিরশ্ছেদকারী মার্কিনিরাই করে দিয়েছে। সর্ববৃহৎ হুমকির আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে এমন দুটি রাষ্ট্রের একটি তুরস্ক, ন্যাটোর রুটি মুখে মার্কিন দাসত্বে আনুগত্য প্রকাশ নিশ্চিত করে। বাকি ছিল শুধু ইরান। যাদের দীর্ঘ সময় ধরে শিয়া-সুন্নি বিতর্কে কট্টর ধর্মান্ধ বানিয়ে রাখা হয়। আর এখন মোক্ষম সময়ে যুদ্ধে টেনে এনে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে দেওয়া হলো। এ কাজে ইসরায়েলিদের সহায়ক ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইরান যে কোণঠাসা হওয়ার নয়– তা বুঝতে পেরে মরিয়া হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু। বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে ডোনাল্ড ট্রাম্পও যেভাবে নেতানিয়াহুর পক্ষে খেলে দেন, তা ছিল বিস্ময়কর। চালবাজির ট্রাম্প কার্ড আছড়ে পড়ে ইরানে। ভাগ্য ভালো, ট্রাম্প পরিস্থিতি বুঝতে পেরে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটেন। তা না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারত।
চালচুলোহীন একটি গোষ্ঠী একযোগে গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ভূরাজনীতির সবচেয়ে ঘৃণ্য খেলা খেলল। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশের ঘাড়ে পা রেখে আরব দখলের পথ উন্মুক্ত করল। আরবদের হাতে তাদের সর্বশেষ রক্ষকের গলা কাটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করল। ইরানকে ধ্বংস নয়, শুধু সেখানে আমেরিকাকে দিয়ে হামলাটা করানোই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। আর তাই হামলার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া না জেনেই আনন্দে উন্মাদ হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু। কারণ তাঁর তুরুপের তাস বাজি মারার পথে।
ইসরায়েল ভাঙা কুঁড়ে থেকে ‘রেডি ফ্ল্যাট’-এর মতো প্রস্তুত করা অভিজাত আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পথে। তবে সেটাকে যেন তাদের যাত্রার সমাপ্তি ভেবে কেউ ভুল না করে। সেটা যাত্রাবিরতি মাত্র।
এস এম সাব্বির খান: সহসম্পাদক, সমকাল
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম সলম ন ইসর য় ল আম র ক আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নেতা এ্যানির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ইসলামী আন্দোলন, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি
লক্ষ্মীপুরে চরমোনাই পীরের সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির দেওয়া বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এ্যানির বক্তব্যের জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সোমবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা।
ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন ও সেক্রেটারি জহির উদ্দিনের যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। বিবৃতিতে বলা হয়, একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সম্পর্কে বিএনপির নেতা এ্যানি যে অশ্লীল, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, মূলত ৫ আগস্টের পর ইসলামপন্থীদের ঐক্য ও এক বাক্সে ভোটের প্রক্রিয়াকে বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। নির্বাচনে বিএনপির জন্য একমাত্র বাধা ‘ইসলামী জোট’। এতে তাদের ভরাডুবি জেনে বিএনপি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও জাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেইমান তো তারা, যারা শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
বিবৃতিতে বিএনপিকে স্বৈরাচারের সঙ্গী বলে দাবি করে বলা হয়, তারা ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে তাদের ছয়জন এমপি পাঠিয়েছে। ২০১৮-এর ডামি নির্বাচনের স্বীকৃতিদানকারী দল হলো বিএনপি। এখন তারা পাগলের মতো আবোলতাবোল বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছে। নিজেদের দোষ আড়াল করার হীন চেষ্টা করছে। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন দিকে ডাইভার্ট করার পাঁয়তারা করছে বিএনপি।
আরও পড়ুনইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের কড়া সমালোচনায় বিএনপির এ্যানি১৪ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে এ ছাড়া বিএনপির উদ্দেশে বলা হয়, ‘জাতীয় চাঁদাবাজেরা মিথ্যা ছাড়া কিছু বলতে পারে না। মিথ্যা কথা বলাই এ্যানি চৌধুরীরদের পুঁজি, যা বাংলাদেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে। আমরা তার মিথ্যা কথা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই।’
বিবৃতি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘এ্যানির মতো একজন নেতার এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রাজনৈতিক ও সচেতন মহলকে ব্যথিত করেছে। আমরা তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগে গত সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা আউটডোর স্টেডিয়াম মাঠে সদর পূর্ব বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় তিনি বলেন, চরমোনাই পীর জাতীয় বেইমান ও ভণ্ড। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনে কোনো ভূমিকা ছিল না ইসলামী আন্দোলনের।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি বলেন, বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী কোনো আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা বা চরমোনাই পীরের কোনো ভূমিকা ছিল না; বরং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের সখ্য ছিল। বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে দলটি। নির্বাচন বিঘ্নিত করতে নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে। ইসলামের নামে তারা চক্রান্ত করছে। ষড়যন্ত্র করছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব জাতীয় বেইমানদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।
ওই সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীরও সমালোচনা করে এ্যানি বলেন, ‘তারা ’৮৬ ও ’৯৬ সালে বিভিন্নভাবে শুধু আমাদের অসহযোগিতা করে নাই, পুরো জাতিকে অসহযোগিতা করেছে। হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের সঙ্গে থেকে জাতীয় বেইমান হিসেবে, আত্মস্বীকৃত বেইমান হিসেবে তারা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’