রেলওয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের দাম বাড়িয়েছে, কী প্রভাব পড়বে ইন্টারনেটের দামে
Published: 30th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের ফাইবার অপটিক কেব্ল ইজারা দেওয়ার জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে এবার আগের তুলনায় প্রতি কোরের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়েছে অপারেটররা।
১৬ জুন রেলওয়ে এই দরপত্র আহ্বান করে। এতে প্রতি কোর ফাইবারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগে ছিল ৩ টাকা ৮ পয়সা। অপারেটররা সাধারণত জোড়া কোর ফাইবার ইজারা নেয়। সে হিসাবে জোড়া ফাইবারের ভিত্তিমূল্য দাঁড়াচ্ছে ৯ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (টেলিকম) সুশীল কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ফাইবারের মান অনুযায়ী দামের সমন্বয় করা হয়েছে।
রেলওয়ের ৩ হাজার ২০৫ কিলোমিটার ফাইবার কেব্ল রয়েছে, যা মোবাইল অপারেটর ছাড়াও অন্যান্য এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) অপারেটরাও ইজারা নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়। প্রতি পাঁচ বছর পরপর রেলওয়ে তাদের এই ইজারা নবায়ন করে।
অপারেটরদের অভিযোগ, রেলওয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে অনুমোদন নেয়নি। বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী, এনটিটিএন সেবা ভাড়া বা ইজারার ক্ষেত্রে নির্ধারিত ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণ করা যায় না। বিটিআরসিতে এ বিষয়ে কোনো আবেদন জমা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে সুশীল কুমার হালদার বলেন, প্রয়োজনে তাঁরা বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে নেবেন।
অপারেটররা বলছে, একদিকে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে খরচ কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে ফাইবারের ইজারায় বাড়তি খরচ আরোপ হলে শেষমেশ তা গ্রাহকের ওপরই চাপবে।
মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবাদাতার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে খরচ বেড়ে গেলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সরকার গ্রাহক পর্যায়ে সেবার দাম কমাতে চাইলেও বাস্তবে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে—এটা সাংঘর্ষিক।’ আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় অপারেটরদেরও ফাইবার স্থাপনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
অপারেটরদের ভাষ্য, রেলওয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ ফাইবার ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একাংশের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পথে। তাঁরা আরও জানান, রেলওয়ের প্রায় ১ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার ফাইবার এক দশক আগে গ্রামীণফোন নিজের খরচে প্রতিস্থাপন করেছিল।
রেলওয়ের মতো ফাইবার ভাড়া দেয় আরও দুটি সরকারি সংস্থা—পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং বিটিসিএল। এর মধ্যে পিজিসিবিও সম্প্রতি ফাইবার সেবার দাম বাড়িয়েছে। ফলে রেলওয়ে ও পিজিসিবির মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
অপারেটরদের দাবি, বিভিন্ন সংস্থার ফাইবার রুট (পথ) ও স্থাপন ব্যয় ভিন্ন হওয়ায় তাদের মূল্য নির্ধারণেও পার্থক্য থাকা উচিত। তাঁরা বলেন, রেলওয়ের ফাইবারের ইজারা মূল্য প্রতিবছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়ে। এরপরও পাঁচ বছর পরপর ইজারা নবায়নের সময় বাড়ানো হলে তা ‘ব্যবসাবান্ধব’ হয় না।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে। এরপর সরবরাহব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম কমানোর ঘোষণা আসতে থাকে। ঘোষণাগুলো আসে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্ল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটরদেরও দাম কমানোর আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) মাসে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকার প্যাকেজ করার জন্যও বলা হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতা লাইসেন্সধারীরা বলছেন, যেসব পর্যায়ে দাম কমানো হয়েছে, তার তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম এক কর্মশালায় বলেন, কম মূল্যে সবচেয়ে ভালো ইন্টারনেট সেবা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এটা সস্তা রাজনীতির পর্যায়ে পড়েছে। সরকার ছাড় না দিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ম কম ন ব ট আরস র লওয় র পর য য় কম ন র ট ল কম র ইজ র গ র হক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানদণ্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করলে একই শাস্তি পাবেন।
আজ সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে এবং পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবেন।’
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সব আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস এগেন্স হিউম্যানিটির মতো কমপ্লেক্স (মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল) অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধীই হোক, তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এই রায়ের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি হয়েছে। যদিও আরও অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার, যাদের ক্ষতি কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হবে না, তাদের সামনে অন্তত একটা ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’