বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের ফাইবার অপটিক কেব্‌ল ইজারা দেওয়ার জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে এবার আগের তুলনায় প্রতি কোরের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়েছে অপারেটররা।

১৬ জুন রেলওয়ে এই দরপত্র আহ্বান করে। এতে প্রতি কোর ফাইবারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগে ছিল ৩ টাকা ৮ পয়সা। অপারেটররা সাধারণত জোড়া কোর ফাইবার ইজারা নেয়। সে হিসাবে জোড়া ফাইবারের ভিত্তিমূল্য দাঁড়াচ্ছে ৯ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (টেলিকম) সুশীল কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ফাইবারের মান অনুযায়ী দামের সমন্বয় করা হয়েছে।

রেলওয়ের ৩ হাজার ২০৫ কিলোমিটার ফাইবার কেব্‌ল রয়েছে, যা মোবাইল অপারেটর ছাড়াও অন্যান্য এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) অপারেটরাও ইজারা নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়। প্রতি পাঁচ বছর পরপর রেলওয়ে তাদের এই ইজারা নবায়ন করে।

অপারেটরদের অভিযোগ, রেলওয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে অনুমোদন নেয়নি। বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী, এনটিটিএন সেবা ভাড়া বা ইজারার ক্ষেত্রে নির্ধারিত ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণ করা যায় না। বিটিআরসিতে এ বিষয়ে কোনো আবেদন জমা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে সুশীল কুমার হালদার বলেন, প্রয়োজনে তাঁরা বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে নেবেন।

অপারেটররা বলছে, একদিকে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে খরচ কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে ফাইবারের ইজারায় বাড়তি খরচ আরোপ হলে শেষমেশ তা গ্রাহকের ওপরই চাপবে।

মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবাদাতার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে খরচ বেড়ে গেলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সরকার গ্রাহক পর্যায়ে সেবার দাম কমাতে চাইলেও বাস্তবে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে—এটা সাংঘর্ষিক।’ আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় অপারেটরদেরও ফাইবার স্থাপনের সুযোগ দেওয়া উচিত।

অপারেটরদের ভাষ্য, রেলওয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ ফাইবার ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একাংশের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পথে। তাঁরা আরও জানান, রেলওয়ের প্রায় ১ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার ফাইবার এক দশক আগে গ্রামীণফোন নিজের খরচে প্রতিস্থাপন করেছিল।

রেলওয়ের মতো ফাইবার ভাড়া দেয় আরও দুটি সরকারি সংস্থা—পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং বিটিসিএল। এর মধ্যে পিজিসিবিও সম্প্রতি ফাইবার সেবার দাম বাড়িয়েছে। ফলে রেলওয়ে ও পিজিসিবির মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

অপারেটরদের দাবি, বিভিন্ন সংস্থার ফাইবার রুট (পথ) ও স্থাপন ব্যয় ভিন্ন হওয়ায় তাদের মূল্য নির্ধারণেও পার্থক্য থাকা উচিত। তাঁরা বলেন, রেলওয়ের ফাইবারের ইজারা মূল্য প্রতিবছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়ে। এরপরও পাঁচ বছর পরপর ইজারা নবায়নের সময় বাড়ানো হলে তা ‘ব্যবসাবান্ধব’ হয় না।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে। এরপর সরবরাহব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম কমানোর ঘোষণা আসতে থাকে। ঘোষণাগুলো আসে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্‌ল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটরদেরও দাম কমানোর আহ্বান জানানো হয়।

অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) মাসে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকার প্যাকেজ করার জন্যও বলা হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতা লাইসেন্সধারীরা বলছেন, যেসব পর্যায়ে দাম কমানো হয়েছে, তার তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম এক কর্মশালায় বলেন, কম মূল্যে সবচেয়ে ভালো ইন্টারনেট সেবা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এটা সস্তা রাজনীতির পর্যায়ে পড়েছে। সরকার ছাড় না দিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ম কম ন ব ট আরস র লওয় র পর য য় কম ন র ট ল কম র ইজ র গ র হক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইবিতে শিক্ষক-শিবির বিতণ্ডা: বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনগুলোর নিন্দা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের সঙ্গে শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাদের বাকবিতণ্ডার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপিপন্থি ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) কেন্দ্রীয় ও ইবি শাখাসহ জিয়া পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

এর আগে, গত বুধবার শাখা ইউট্যাব ও জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত পৃথক প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়। 

আরো পড়ুন:

রাবিতে নিয়োগ পাননি জামায়াত নেতার সুপারিশপ্রাপ্ত সেই প্রার্থী

কুবিতে র‍্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উপদেষ্টাকে শোকজ

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, ইবির লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, বিএনপিপন্থি সাদা দলের আহ্বায়ক ও ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ড. মতিনুর রহমান বুধবার (১৩ আগস্ট) তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাসে উপস্থিত হন। সেখানে দেখেন, শ্রেণিবহির্ভূত কিছু শিক্ষার্থী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালান করছে। এমতাবস্থায় অধ্যাপক মতিনুর রহমান তাদেরকে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করে কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু উল্টো ইসলামী ছাত্রশিবিরের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তাকে লাঞ্ছিত করে এবং বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে অধ্যাপক মতিনুর রহমান তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাস না নিয়ে সেখান থেকে চলে যান এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তারা বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয় যে, ছাত্রশিবির একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত শিবির নেতাদের তাদের অন্যায় আচরণের জন্য অধ্যাপক মতিনুর রহমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাই।

তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে রাজনৈতিক কার্যক্রম করা সম্পূর্ণরুপে বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই আমরা মনে করি।

ইবি জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, একজন শিক্ষকের প্রতি যেকোনো ধরনের অবমাননাকর আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং সার্বিক পেশাদারিত্ব ও মর্যাদার পরিপন্থি। 

এছাড়া ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান একই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পাঠদানের নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে জিয়া পরিষদ ইবি শাখা প্রশাসনের নিকট বেশকিছু দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি, প্রক্রিয়া-প্রকরণ ও সময়সূচি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মতপার্থক্য যেন কখনোই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে, সেই লক্ষ্যে কার্যকর মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গত বুধবার লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে বিভাগের ২০২৪-২৫ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ক্লাসরুমে যান শিবিরের প্রতিনিধি দল। ৫/৭ মিনিট পর শিডিউল ক্লাস নিতে আসেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান।

তিনি ক্লাসে এসে শিবির নেতাদের দেখে বের হয়ে যেতে বললে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিবির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই শিক্ষকের নিকট শিবির নেতাদের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ