অর্ডিন্যান্স জারি এবং কাউন্সিল গঠন দাবি
Published: 4th, July 2025 GMT
অযৌক্তিক আদেশ বাতিল ও ইউনানী আয়ুর্বেদিক সিস্টেমের বিদ্যমান সব বৈষম্য দূরীকরণ এবং আগের বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা অর্ডিন্যান্স জারি এবং কাউন্সিল গঠন দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল অফিসার ইউনানী ও আয়ুর্বেদিকের নিয়োগ যোগ্যতা প্রকাশ করা হয়। এতে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষার স্বতন্ত্রতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী ও আয়ুবেদিক সিস্টেম অব মেডিসিনের গ্র্যাজুয়েট ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন এবং পরিচালনার শর্তাবলী অমান্য করে। এছাড়া ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের প্র্যাক্টিসের অনুমতি এবং রেজিস্ট্রেশন প্রদানের নীতিমালা লঙ্ঘন করে।
দাবিগুলো না মানা হলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন ন
এছাড়াও পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আটকে আছে শুল্ক বাধায়
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। আট লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন দেশটিতে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও তাতে বাংলাদেশের হিস্যা অনেক কম। বিশেষ করে উচ্চ শুল্ক বাধার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ছে না।
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। অথচ ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক–সুবিধায় দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করছে। কারণ, এসব দেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ রয়েছে।
এফটিএ না থাকায় মালয়েশিয়াতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন। এ জন্য তাঁরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশটির সঙ্গে এফটিএ করার দাবি জানিয়েছেন।
২৮০ কোটি ডলারের বাণিজ্যবর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করে মাত্র ২৫–৩০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট বাণিজ্যের মাত্র ৮-১০ শতাংশ। অর্থাৎ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে তেল (বিশেষত পাম তেল), ইলেকট্রনিকস ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক ও সার, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে মালয়েশিয়া। আর বাংলাদেশ থেকে মূলত তৈরি পোশাক, বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ভোক্তাসামগ্রী রপ্তানি হয় মালয়েশিয়াতে। বাংলাদেশের প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার, আকিজ গ্রুপ, ওয়ালটন, মুন্নু সিরামিকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন কোম্পানি দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করে।
তবে মালয়েশিয়ার ভোক্তা বাজার অনেক বড়। সঠিক নীতি গ্রহণ করলে এই বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। মালয়েশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের বাস। এ ছাড়া দেশটিতে ২১ লাখের বেশি বিদেশি কর্মী রয়েছেন, যার প্রায় ৩৮ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি (৮ লাখের বেশি)।
হালাল পণ্যের বৃহৎ বাজারমালয়েশিয়ার বহির্মুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশনের (ম্যাট্রেড) তথ্য অনুসারে, দেশটিতে হালাল খাদ্যপণ্যের বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি (৫০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি। এসব পণ্যের চাহিদা মেটাতে দেশটি ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করে।
বাংলাদেশও দেশটিতে হালাল পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। তবে এখনো তা পরিমাণে খুব কম, মাত্র ৪ থেকে ৫ কোটি ডলারের আশপাশে। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, শুধু শুল্ক বাধা দূর করা গেলেই দেশটিতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ হালাল পণ্যের রপ্তানি বাড়বে পাঁচ গুণ।
মালয়েশিয়ায় স্থানীয় সরবরাহকারী কোম্পানির (পিনাকেল ফুডস) মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশের শীর্ষ কোম্পানি প্রাণ গ্রুপ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসলা, নুডলস, জুস, ড্রিংকস, বিস্কুট, কুকিজ প্রভৃতি। গত চার দিনে মালয়েশিয়ার অন্তত ছয়টি বড় বড় শপিং মল ও সুপারমার্কেট ঘুরে সবগুলোতে প্রাণের পণ্য দেখা গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন মুদিদোকানেও প্রাণ ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ার মানুষ নুডলস, বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস, ফ্রোজেন খাদ্যপণ্য, বিস্কুট, জুস, বেভারেজ প্রভৃতি পছন্দ করেন। এ ছাড়া সেখানে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশিও রয়েছেন। এটি তাদের জন্য বড় সুযোগ।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাধা দেশটির সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি না থাকা। এ কারণে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। আমরা যদি বিনা শুল্কে প্রাণের পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাই, তবে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজার ধরতে পারব। এতে দেশটিতে শুধু প্রাণের পণ্যের রপ্তানিই পাঁচ গুণ বাড়বে বলে আমরা আশা করি।’
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থাকায় তারা বাজার দখল করছে। এ বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে টিকে থাকা কঠিন।’
বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি কমমালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রায় এক দশক ধরে এফটিএ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনার টেবিলে ওঠেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা গতি এসেছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারত, পাকিস্তানসহ প্রায় ১৪টি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) রয়েছে। গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মালয়েশিয়া সফর করেন। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়েছে।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি এফটিএ নিয়ে দর–কষাকষির জন্য একটি টার্মস অব রেফারেন্সের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটির অনুমোদন হলে উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে পারে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার (উপহাইকমিশনার) মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের বাজার সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু শুল্ক ও বিধিনিষেধের সহজীকরণ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন।’ তিনি জানান, এফটিএ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।
শাহানারা মনিকা আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানি বাড়াতে হলে এফটিএর বিকল্প নেই। তবে পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের মাধ্যমেও বাণিজ্য–ঘাটতি পূরণের সুযোগ রয়েছে।