রাঙামাটি জেলার সাতটি সড়কই ভালো, বড় কোনো সমস্যা নেই। ২৩২ কিলোমিটার দূরত্বের এসব সড়ক যানবাহন চলাচল উপযোগী। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও রক্ষাবেক্ষণের কারণে বর্ষায়ও তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
এদিকে সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কয়েকটি সড়কে ছোটখাটো পাহাড়ধস ও ভাঙন দেখা দেয়। তবে সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে সওজ।
জানা গেছে, জেলার সওজ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২৩২ কিলোমিটারের সাতটি সড়ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে রয়েছে– রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়ক, বাঙ্গাহালিয়া-রাজস্থলী সড়ক, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক। তবে এসব সড়কের ১৬ কিলোমিটার অংশ এখনও কাঁচা।
২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১২০ জনের প্রাণহানি হয়। জেলার অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃসড়কের ১৪৫টি স্থানে ভাঙন দেখা গিয়েছিল। এ দুর্যোগে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবান সড়ক, রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ১৫ দিন ও রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে এক মাস যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়। ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ৬টি সড়কের ৫ হাজার ৪৭০ মিটার অংশে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়। আরসিসি সসার ড্রেন তৈরি করা হয় ৬ হাজার ২২৫ মিটার, আরসিসি ইউ ড্রেন ১ হাজার ৫১০ মিটার ও কংক্রিট স্রোপ প্রটেকশন ৭২ হাজার ১৫০ বর্গমিটার। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই হ্রদের পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলী-ফিশারি বাঁধের ৬৬৩ মিটার অংশে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাট করা হয়। এতে সড়কের একপাশে বিশাল খালি জায়গার সৃষ্টি হয়। এ জায়গাটি অবৈধ দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) পর্যটক ও পথচারীদের বিনোদনের জন্য দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় বিনোদন স্পট নির্মাণ করেছে। বর্তমানে যা এ বাঁধটি রাঙামাটির পর্যটন খাতে নতুন মাত্রায় যোগ করেছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার সাতটি সড়কে ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও তা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হয়েছে।
অপরদিকে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক তৈরি করেছে। পরে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় সড়কটি দুই লেনে উন্নীত করা হয়। এ সড়ক পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ সড়কেও পাহাড়ধস হয়। তবে তা দ্রুত মেরামত করে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়। এ সড়কেই রয়েছে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট বার্গী লেক ভ্যালি, রাইন্যা টুগুন, জুম কিংস, বড়গাঙ। সড়কের বড়াদম নামক স্থানে রয়েছে বৌদ্ধদের মহাসাধক ও পরিনির্বানপ্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) জন্মস্থান ও স্মৃতিমন্দির। ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড়ধসের কারণে সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইিডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, ‘রাঙামাটি শহর থেকে কাপ্তাইয়ে যাওয়ার জন্য এটি হচ্ছে একটি বিকল্প সড়ক। এ সড়কটির কারণে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাইয়ের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার কমেছে। এটি সড়ক দিয়ে ভ্রমণ করলে কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। বর্তমানে এই সড়ক ঘিরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে
উঠছে, যা রাঙামাটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।’
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুবজ চাকমা বলেন, ‘জেলার ২৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সাতটি সড়কই যানবাহন চলাচল উপযোগী রয়েছে। এসব সড়কের কোথাও খানাখন্দ নেই। ভারী বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েকটি স্থানে ছোট মাটিধ্বস হলেও তা তাৎক্ষণিভাবে মেরামত করা হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প প হ ড়ধস এ সড়ক সড়ক র আরস স
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন।
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।