যাঁরা চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের পক্ষে, তাঁদের বয়কট করুন: নাহিদ
Published: 9th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ, দখলদার ও চাঁদাবাজদের না বলুন। যাঁরা চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের পক্ষে আছেন, তাঁদের বয়কট করুন। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের সঙ্গে থাকবে।’
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজারের শহীদ হাসান চত্বরে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ এখনো রাজপথে আছে। আপনারা আমাদের সমর্থন করুন, ইনশা আল্লাহ আপনারা হতাশ হবেন না।’
মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পথসভায় উপস্থিত হাজারো মানুষের প্রতি এনসিপির কেন্দ্রীয় এই নেতা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কৃষকের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে গত ৫৪ বছরে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতেই হত্যা করা হয়েছে দুই শতাধিক। এখন থেকে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের সীমান্ত, মানচিত্র ও মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্ত হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়, সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে হতে হবে। কেবল বাংলাদেশই ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়, ভারতও বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। এটা যেন ভারত কোনোভাবেই ভুলে না যায়। বাংলাদেশের মাটি ও মানচিত্র রক্ষা করা বাংলাদেশের ছাত্র ও যুবাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘হাসিনা সরকার হাজারের ওপর মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে, ১০ হাজারের ওপর মানুষকে আহত করেছে। আমার ভাইয়েরা কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে। বিবিসি রিপোর্ট করেছে, গুলির জন্য শেখ হাসিনা নিজেই অর্ডার দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দায়ী।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজার থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা শুরু করেন। মেহেরপুরের গাংনী থেকে বেলা একটায় হাটবোয়ালিয়া বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজেই এনসিপির নেতাদের স্বাগত জানান। নেতারা হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এরপর বেলা দেড়টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের আল তায়েবা মোড়ে পৌঁছালে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়। আলমডাঙ্গায় পদযাত্রা শেষে এসসিপির নেতারা চুয়াডাঙ্গা শহরের পথে রওনা দেন।
চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের এই পথসভায় দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের শহীদ ভাইয়েরা যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আত্মত্যাগ করেছেন, তা পূরণ হয়নি। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
পথসভায় অন্যদের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান বক্তব্য দেন। এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ দলটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র পথসভ য় র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানব না
শহীদ আবরার ফাহাদের দেখানো পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনীতি করছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা শহীদ আবরার ফাহাদের উত্তরসূরি। তাঁর দেখানো ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করছি।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অষ্টম দিন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ে পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদ আবরার ফাহাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি, আমরা শহীদ ইয়ামিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমরা স্পষ্ট বলেছি, শহীদ আবরার থেকে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ ইয়ামিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, আধিপত্য-আগ্রাসনবিরোধী আশা-আকাঙ্ক্ষা, সেটি ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিচার ও সংস্কার ছাড়া আমরা নির্বাচন মেনে নেব না। আগামীর বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী শক্তি ঠেকাতে লড়াই-সংগ্রাম চলবে। আমরা দিল্লির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছি। শহীদ আবরার আমাদের এই সাহস জুগিয়েছেন।’
কুষ্টিয়ার একটি রিসোর্টে সকালে অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির নেতারা। পরে তাদের গাড়িবহর কুষ্টিয়া শহর থেকে শহীদ আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছে। সেখানে আবরারের কবর জিয়ারত শেষে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন নেতারা।
কুমারখালী প্রতিনিধি জানান, আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যা বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াই নতুন করে শুরু হয়। সে পথ ধরেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল।
এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, খুলনা বিভাগের সংগঠক নয়ন আহম্মেদ, শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর পর পদযাত্রা কুষ্টিয়া শহরে এসে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এন এস রোডে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে। সেখান থেকে পদযাত্রা মেহেরপুরের
উদ্দেশে রওনা হয়।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার গাংনীতে সন্ধ্যায় এক পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাইব্রিড নেতারা অন্যের ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে বিদেশে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়েন। অন্যের সন্তানকে চামচা; নিজের ছেলেকে নেতা বানান।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা কোনো মার্কা ও ব্যক্তির কাছে বিবেক বন্ধক দিয়েন না। যারা বাংলাদেশকে ধারণ করে, তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনের সময় আমাদের দেশে এক শ্রেণির নেতা উৎপাদন হয়। ঢাকা থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে এলাকায় ঢুকে আগের রাতে ওসি, এসপি ও পোলিং এজেন্টদের কিনে নেন। তারা আপনাদের এক দিন টাকা দেন আর গোলামি করান পাঁচ বছর।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ– বাংলাদেশকে আর অযোগ্য নেতা ও গম চোরের হাতে তুলে দিয়েন না। রাস্তার টাকা মেরে যারা হজ করতে চান, তাদের হাতে তুলে দিয়েন না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘জনগণ পাশে থাকলে দিল্লি পালাতে হয় না; লন্ডন থাকতে হয় না। জনগণ সঙ্গে থাকলে বাংলাদেশেই স্থান হয়। আমরা কোনো পিন্ডি, দিল্লি, লন্ডন কিংবা আমেরিকার ওপর নির্ভর করতে চাই না। আমাদের রাজনীতি কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বর্গা দিইনি। জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের জন্যই আমরা রাজনীতি করব।’ পরে মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক ও মুজিবনগরে পথসভা হয়।