জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে: নাহিদ
Published: 2nd, August 2025 GMT
জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তফশিলে উল্লেখ করে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা নির্বাচিত সংসদের হাতে এই সংস্কার কার্যক্রম ছেড়ে দেব না, বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামী সংসদ গঠিত হবে, গণপরিষদ গঠিত হবে। এবং অর্ন্তর্বতী সরকারের আমলেই এই সনদ কার্যকর করতে হবে।
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই পদযাত্রায় আমরা গণহত্যার বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কথা বলেছিলাম। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টিও যেন সুরাহা হয়।’’
আগামী ৫ আগস্ট সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, জুলাই ঘোষণাপত্রটি সরকার আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষ এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। যদিও ঐক্যমত্য কমিশন এখনো জানায়নি ‘নোট অব ডিসেন্টে’র বিষয়গুলোর সমাধান কী হবে।’’
গত বছর ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামীকাল রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। এই সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে। সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য আগামীকাল বিকেল ৪টায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে আজ শনিবার দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে জানানো হয়। পোস্টে এনসিপির নেতাকর্মীসহ সারাদেশের মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সমাবেশের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘‘আগামীকাল এইচএসসি পরীক্ষা আছে। এছাড়া ছাত্রদলের সমাবেশ রয়েছে। একই এলাকায় দুটি বড় কর্মসূচি থাকায় ভোগান্তি হতে পারে।’’
এ জন্য তিনি ঢাকাবাসী এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘৩ আগস্ট একটা ঐতিহাসিক দিন। এ কারণে এই দিনে এই সমাবেশ করছি আমরা। এই দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণে ছুটির দিনের বাইরে এটা করতে হচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন মানুষের ভোগান্তি কম হয়।’’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই এক বছরে তার পূর্ণতা আমরা লক্ষ্য করিনি। জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষাটা আংশিক পূরণ হবে। দেশের একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কার, কর্মসংস্থান এবং মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে এত অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে এনসিপির জন্ম।’’
ঢাকা/রায়হান
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ র ন হ দ ইসল ম এনস প র সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক