কায়রোর জাদুঘর থেকে চলতি মাসের শুরুতে উধাও হওয়া তিন হাজার বছরের পুরোনো ফারাওয়ের সোনার ব্রেসলেটটি চুরি করে গলিয়ে ফেলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে মিসরের প্রত্নতত্ত্ব ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অমূল্য ব্রেসলেটটি হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। ব্রেসলেটটি থার্ড ইন্টারমিডিয়েট পিরিয়ডের ফারাও (প্রাচীন মিসরের সম্রাট) আমেনেমোপের ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১০০০ সালে মিসর শাসন করেছিলেন তিনি।

গোলাকার ল্যাপিস লাজুলিতে (নীল রত্ন) সাজানো ওই ব্রেসলেট ৯ সেপ্টেম্বর জাদুঘরের একটি সংরক্ষণাগার ল্যাবরেটরি থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

হারিয়ে যাওয়ার পর ল্যাবরেটরির অন্য প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রীগুলো পরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কায় খোয়া যাওয়া ব্রেসলেটের ছবি মিসরের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলসীমান্তে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, জাদুঘরের একজন বিশেষজ্ঞই ব্রেসলেটটি চুরি করে একটি রৌপ্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। পরে সেই ব্যবসায়ী সেটি কায়রোর ঐতিহাসিক জুয়েলারি এলাকায় একটি ওয়ার্কশপ মালিকের কাছে পাঠান। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কশপ মালিক সেটি সোনা গলানোর একটি কারখানায় বিক্রি করেন।

কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুরির সূত্র খুঁজে বের করে। জানা গেছে, জাদুঘরের একজন বিশেষজ্ঞই ব্রেসলেটটি চুরি করে একজন রৌপ্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। পরে সেই ব্যবসায়ী সেটি কায়রোর ঐতিহাসিক জুয়েলারি এলাকায় একটি ওয়ার্কশপ মালিকের কাছে পাঠান। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কশপ মালিক সেটি সোনা গলানোর একটি কারখানায় বিক্রি করেন, যেখানে এটি অন্য জিনিসপত্রের সঙ্গে গলিয়ে ফেলা হয়।

সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ব্রেসলেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার মিসরীয় পাউন্ড (৪০০০ ডলার) জব্দ করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গিজা পিরামিডের কাছে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে। নভেম্বর মাসে খোলার ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটল। জাদুঘরটি মিসরের প্রাচীন ঐতিহ্য প্রদর্শনের একটি বড় স্থান। এটি দেশটির পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধির বড় উৎস।

আরও পড়ুনকায়রো জাদুঘর থেকে উধাও ফারাওয়ের অমূল্য ব্রেসলেট ৬ ঘণ্টা আগে

উল্লেখ্য, মিসরের প্রাচীন নিদর্শনের অবৈধ বাণিজ্য এক দীর্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয়। গত বছর মিসর কর্তৃপক্ষ দুজনকে আটক করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে শত শত প্রাচীন নিদর্শন চুরি করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। বন্দরনগরী আলেকজান্দ্রিয়ার কাছে আবু কির উপসাগরের তলদেশ থেকে এ নিদর্শন সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা। তখন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এ দুজন নিদর্শনগুলো পাচারের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় জ দ ঘর র একট

এছাড়াও পড়ুন:

চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ

চিমামান্দা এনগোজি আদিচি একজন নাইজেরীয় কবি ও আখ্যান লেখক। আদিচির কবিতা, গল্প ও উপন্যাসগুলোতে সব সময় একটা নারীবাদী দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে আফ্রিকার সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, নারীর ওপর বলপ্রয়োগ ও নিপীড়ন এবং নারী-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুক্তি ও শক্তি প্রয়োগের বিষয়গুলো। ছোটবেলা থেকে আদিচি দেখেও এসেছেন ‘নারীবাদী’ শব্দটি এবং ‘নারীবাদ’ সম্পর্কে আফ্রিকার ধারণাগুলো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। তাই আদিচি স্বভাবগতভাবে নারীবাদ-সংক্রান্ত নিজের বক্তৃতায় ও রচনায় এসব বিষয়কে নারীবাদের অনুষঙ্গ করে গল্পাকারে আফ্রিকার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’ এবং দ্বিতীয় বই ‘ডিয়ার ইজাওয়েলে: আ ফ্যামিনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশনস’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। বলতে গেলে নাইজেরিয়ার বাস্তবতা, ঐতিহ্য ও ইগবো সংস্কৃতির আলোকে আদিচির দুই রচনায়ই নারীবাদ ও নারীবাদী চিন্তার স্বতন্ত্র ধরন প্রকাশ পায়। একইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নারী-পরিপ্রেক্ষিতের সর্বজনীন বিষয়ও তাঁর ভাবনায় ফুটে উঠতে দেখা যায়।

আদিচির চৌদ্দ বছর বয়সে তর্কচ্ছলে তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু ওকুলোমা তাঁকে নারীবাদী তকমা দেন। তখনো তিনি নারীবাদী শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন এবং তার মানেও জানতেন না। আর ওকুলোমা শব্দটাকে এমনভাবে প্রয়োগ করেছিলেন যে আদিচির ধারণা হয়েছিল, বিষয়টার সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। পরে অভিধান ঘেঁটে আদিচি শব্দটার অর্থ জেনে নিয়েছিলেন। তার অনেক পরে, ছাব্বিশ বছর বয়সে আদিচির প্রথম উপন্যাস ‘পার্পল হিবিসকাস’ (২০০৩) প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের প্রোটাগোনিস্ট লোকটি আর সব নির্যাতনের সঙ্গে স্ত্রীকে শারীরিকভাবেও প্রহার করত, তাই গল্পের পরিণতিটা বেদনাদায়ক হয়। এমন গল্পের জন্য পাঠকেরা আদিচিকে ‘নারীবাদী লেখক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। একজন সুহৃদ সাংবাদিক-পাঠক আদিচিকে প্রথম বিষয়টি অবগত করেন এবং উপদেশ দেন, তিনি যেন নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রকাশ না করেন। একই সঙ্গে ওই সাংবাদিক নারীবাদীদের একটা সংজ্ঞার্থও ছুড়ে দেন আদিচির উদ্দেশে, ‘স্বামী না পেয়ে যেসব মেয়ে অসুখী হয়, তারাই নারীবাদী।’

নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন।

পরে আদিচি নাইজেরিয়ার একজন নারী শিক্ষাবিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, নারীবাদ নামক জিনিসটা আফ্রিকার সংস্কৃতি নয়। ওই শিক্ষাবিদের ধারণা, পশ্চিমা বিশ্বের বই পড়ে আদিচির মাথা বিগড়ে গেছে এবং তিনি নারীবাদী হয়ে উঠেছেন। অথচ আদিচির কাছে বিষয়টা এমন ছিল না। তবে নারীবাদ যেহেতু আফ্রিকার বিষয় নয়, তাহলে তাঁর আফ্রিকান নারীবাদী হতে আপত্তি নেই। বন্ধুরা বলাবলি করলেন, নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন। আসলে এর বেশির ভাগই নিছক ব্যঙ্গাত্মক ব্যাপার ছিল।

আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘরের চালে ঢিল ছোড়া নিয়ে বিরোধ, মীমাংসার পর মারামারিতে প্রাণ গেল একজনের
  • কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা
  • জীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত
  • যুক্তরাষ্ট্রের হেনড্রিক্স কলেজের মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি পাওয়া চারজনের একজন বাংলাদেশের মুমতাহিনা
  • চার্লি কার্ককে কে হত্যা করল
  • এক অধ্যাপকের কাছেই অসহায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
  • চৌধুরীবাড়ি ব্যবসায়ী নির্বাচনে ব্যাডমিন্টন মার্কায় গনসংযোগে এগিয়ে মেরাজ
  • ফ্রান্সজুড়ে কৃচ্ছ্রতা বিরোধী বিক্ষোভ
  • চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ