ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ৩টা বেজে ২৪ মিনিট। আদালতকক্ষের বাইরে প্রিজন ভ্যান। পুলিশের পাহারায় একে একে আসামিরা উঠছেন ভ্যানে। এর মধ্যেই এক নারী পুলিশ সদস্যের হাত ধরে আছেন আসামি শাহাজাদী। চোখে পানি, চেহারায় অসহায়ত্ব। আরেক পুলিশ সদস্যের কোলে ছোট্ট কাঁথায় মোড়ানো শাহাজাদীর ১১ দিনের নবজাতক। একবারে চুপচাপ। ভ্যানে ওঠার পর শিশুটিকে মায়ের কোলে দেওয়া হয়। কয়েক মুহূর্ত পর খুলনা জেলা কারাগারের উদ্দেশে রওনা দেয় ভ্যানটি। একসঙ্গে কারাগারের পথে যাত্রা শুরু করে মা ও ১১ দিনের নবজাতক।

সাত দিন ধরে নগরের একটি হাসপাতালের কক্ষে মায়ের সঙ্গে বন্দী ছিল নবজাতকটি। আজ রোববার মায়ের সঙ্গে তার কারাগারে যাত্রা।

১১ সেপ্টেম্বর নগরের রূপসা এলাকার একটি হাসপাতালে বাগেরহাটের রামপালের সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহাজাদীর (৩৬) কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাশিশু। তাঁদের ঘরে আগে চার কন্যাশিশু আছে।

এবার অন্তত ছেলে হবে—এমন প্রত্যাশা ছিল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। ছেলে না হওয়ায় স্ত্রীকে হাসপাতালেই ফেলে চলে যান সিরাজুল। এরপর আর খবর নেননি। পরিবারের চাপ ও হতাশার মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর ঘটে অঘটন। একই হাসপাতাল থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধারও করা হয়। শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমের (৫৫) কাছ থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। তখন আটক হন তিনি। পুলিশের কাছে দাবি করেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে এমনটা করেছিলেন।

চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মো.

মির্জা সুজন মানব পাচার আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় শাহাজাদীর মা ও তাঁকে আসামি করা হয়। বর্তমানে নার্গিস বেগম কারাগারে। অসুস্থ শাহাজাদী ছিলেন হাসপাতালে পুলিশের পাহারায়। রোববার তাঁকে আদালতে তোলা হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ইনামূল হক প্রথম আলোকে বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর শিশুর বাবা ও মামা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে দুই হাজার টাকা জমা দেন। পরদিন সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। এর পর থেকে বাবা সিরাজুল ইসলাম আর হাসপাতালে আসেননি। আজ দুপুরে শিশুটির মামা বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন। দুপুরে পুলিশের প্রহরায় শিশু ও তার মাকে আদালতে নেওয়া হয়।

প্রসিকিউশন বিভাগের জিআরও উপপরিদর্শক (এসআই) বোধন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আজ অতিরিক্তি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর জন্য আজ জামিনের আবেদন করা হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই শাহীন বলেন, আসামিরা হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। অপহৃত শিশু উদ্ধার হয়েছে। চুরি যাওয়া শিশুটির বাবা মানব পাচার আইনে মামলা করেছেন। আজ মা ও শিশুটিকে আদালতে পাঠানো হয়।

মামলা চালাতে চান না বাদী

মামলার বাদী মির্জা সুজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যদি মামলাটা ধরে রাখি, তাহলে অনেক দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে। আমার ছোট একটা চাকরি, আবার আমার বাসা মোংলায়, কাজ ফেলে রেখে এভাবে খুলনায় দৌড়ঝাঁপ করা সম্ভব নয়। আবার টাকাপয়সা জোগানোও অসম্ভব। এদিকে ওই মা কষ্টে আছেন। আমার বাচ্চা জন্মের পর বুকের দুধ পাচ্ছিল না। তখন ওই নারীই আমার সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়েছেন। এই বিবেচনায় আমি মামলাটা আর এগিয়ে নিতে চাচ্ছি না।’

মির্জা সুজন বলেন, ‘একটা বিপদে পড়েছিলাম। আইনের কাছে সহায়তা নিয়েছিলাম। সহায়তা নিয়ে গিয়ে যদি বিষয়টা মামলা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে কী করার। আমি তো মামলাটা দিইনি। আমি বাচ্চা পাওয়ার পর পুলিশকে বলেছি, আমার সন্তান ফিরে পেয়েছি আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও মামলাটা করিয়েছে। আমি চাচ্ছি না এটা আর এগিয়ে নিতে।’

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহীন বলেন, ‘বাদীর এই অভিযোগ মিথ্যা। তিনি মামলা করতে না চাইলে পুলিশ কী জোর করে মামলা করাতে পারে নাকি?’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাককর্মীর এক মোবাইল ফোন উদ্ধারে গিয়ে ১৪৮টি জব্দ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক পোশাককর্মীর চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে ১৪৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পশ্চিম জোন)। এ সময় দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাও জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মোবাইল চুরি ও বিক্রয় সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে। 

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের দামপাড়ায় মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন সিএমপি ডিবি বন্দর জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক। চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন ও চৈতন্য গলি এলাকা থেকে এই বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ আগস্ট ভোরে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানাধীন জাহাঙ্গীর কলোনির টিনশেড বাসা থেকে পোশাক শ্রমিক আকবর হোসেনের ভিভো ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল ফোন কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। অসহায় এই শ্রমিক প্রায় ২০ দিন পর তার মোবাইল ফোন উদ্ধারে গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের শরণাপন্ন হন। 

অভিযোগ পেয়ে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে ডিবি পশ্চিম জোনের এসআই মো. ইমাম হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকের দিকনির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক ধীমান মজুমদারের তত্ত্বাবধানে এসআই মো. ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের কোতোয়ালী থানার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় পোশাককর্মী আকবরের চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনসহ ৪৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সোহেল মিয়া (৩৩) নামের মোবাইল চোর চক্রের এক সদস্যকে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানাধীন স্টেশন রোড ও চৈতন্য গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের দুই সদস্য আবদুল হাকিম (২৭) ও মো. ইয়াছিনকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি আইফোন ও দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। 

আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে দু শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের কবলে: ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার
  • পোশাককর্মীর এক মোবাইল ফোন উদ্ধারে গিয়ে ১৪৮টি জব্দ
  • শ্রীপুরে মাদক উদ্ধার অভিযানে হামলা, দুই এসআই আহত, বাবা–মা ও দুই ছেলে গ্রেপ্তার