রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে দুই দিন আগে এক নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার ‘রহস্য উদঘাটনের’ দাবি করে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, “ঋণগ্রস্ত হয়ে পারিবারিক কলহের জেরে ‘পরিকল্পনা করে’ ওই নারীকে হত্যা করেন তার স্বামী।”

আরো পড়ুন:

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম নারী আম্পায়ার জেসি

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নারীকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে: ইউটিএল

গত বৃহস্পতিবার সকালে তুরাগ থানাধীন রাজউকের ১৭ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে কাশবন থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা লাশটি শনাক্ত করতে ডিএমপির থানাসহ আশেপাশের জেলার থানাগুলোতে ছবিসহ তথ্য পাঠানো হয়।

পরে ক্যন্টনমেন্ট থানা থেকে জানানো হয়, সেখানে এমন একটি জিডি রয়েছে। মনোয়ারা বেগম নামের এক নারী তার মেয়ে বিথী আক্তার বিলকিসের (৩৫) নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়ে গত সোমবার ওই জিডি করেন।

পরে মনোয়ারা বেগম তুরাগ থানায় গিয়ে বিলকিসের লাশ শনাক্ত করেন। মনোয়ারার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

এর ধারাবাহিকতায় শনিবার বিলকিসের স্বামী মো.

বাবুল মিয়া (৪৭) এবং মো. সম্রাট (২০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা যারা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে উপ কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত রবিবার সন্ধ্যায় মানিকদি এলাকার ভাড়া বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বিলকিস। এমন সময় অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে ফোন করে তাকে ডেকে নেন তার স্বামী বাবুল।”

তিনি বলেন, “সে সময় বিলকিসের মা মনোয়ারা ছিলেন ওই বাসায়। বিলকিস বের হওয়ার সময় তার মাকে জানান, তার স্বামী ব্যাংকের চেকবই, এনআইডি আর ছবি নিয়ে তাকে ইসিবি চত্বর এলাকায় যেতে বলেছেন। সুদে টাকা ধার নিতে ওইসব নথি লাগবে।”

“কিন্তু বাসা থেকে বের হওয়ার পর বিলকিসের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তার মা। কোথাও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে পরদিন তিনি থানায় জিডি করেন।”

গ্রেপ্তার হওয়া দুজন। ছবি: পুলিশ

পুলিশ কর্মকর্তা মহিদুল বলেন, “ভিকটিমের মায়ের কাছ থেকে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা শনিবার বাবুলকে থানায় এনে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। প্রথমেই বাবুল মিথ্যা তথ্য দিতে থাকে পুলিশকে। সে দাবি করে, ঘটনার দিন সে মানিকদি ছিল, কিন্তু আমরা তার এবং বিলকিসের ফোন লোকেশন উত্তরা এলাকায় পাই।”

“এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল তার তিন সহযোগী মিলে স্ত্রীকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে এবং এই পরিকল্পনা দুই-তিনমাস আগে থেকেই সে করছিল বলে পুলিশকে জানায়।”

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের কালাপানি এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে মহিদুল ইসলাম বলেন, “সম্রাট বিলকিসের পা চেপে ধরেছিল, আর বাবুল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। সে সময় আরো দুজন ঘটনাস্থলে ছিল।”

“তাদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে বাকি দুই জনের নাম প্রকাশ করছি না। আশা করছি বাকি দুই জনকে দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারব।”

বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উপকমিশনার মহিদুল বলেন, “তাদের মধ্যে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ব্যাপক পারিবারিক কলহ চলছিল। এর কারণ সে ও তার স্ত্রী প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল। প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা সুদ দিতে হত। ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে কাজ করে বাবুল ৩১-৩২ হাজার টাকা বেতন পান। প্রতি মাসে সুদের টাকা দিতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হত।”

“সুদের টাকার জন্য প্রায়ই পাওনাদাররা বাসায় যেত, এ নিয়ে বিলকিস তার স্বামীকে বকাবকি করত। যা থেকে দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিল। বাবুলের সন্দেহ ছিল, তার স্ত্রী টাকা নিয়ে তার ভাই-মাকে দিয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছালে ২-৩ মাস আগে বাবুল পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে মেরে ফেলবে। সে থেকেই সঙ্গীদের নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায় বাবুল।”

সম্রাট পুলিশকে বলেছেন, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তিনি এ হত্যকাণ্ডে জড়ান।

বাবুল মাদকাসক্ত বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে অতীতে তার কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়।

ঢাকা/এমআর/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব লক স র মন য় র

এছাড়াও পড়ুন:

পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।

ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।

আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।

কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি, ফলাফলও সবার মেনে নেওয়া উচিত: মৌনির সাতৌরি
  • পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
  • পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ