ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ
Published: 21st, September 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়।
অফিস আদেশে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ২৭০তম (সাধারণ) সভার ২৪ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলাবিধির ৪ (১) (ই) ধারা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ (রিমুভ্যাল ফ্রম সার্ভিস) করা হয়।
অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডাকোটায় ইনস্ট্রাকশনাল ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে এমএস ডিগ্রিতে অধ্যয়ন করছেন।
আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে আমি আমেরিকায় আছি। প্রতিবছর সেটা নবায়ন করি। সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখনো অফিশিয়ালি কিছু পাইনি বা জানি না। তবে এ বিষয়ে শুনেছি এবং দেখেছি। এটা বেআইনি ও আক্রোশমূলক। আমাকে হেয় করতেই করা হয়েছে। দেশে গিয়ে এটার বিষয়ে মোকাবিলা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর শিক্ষা ছুটিসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৯৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে এক মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি যোগদান করেননি। এ ছাড়া বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেছেন।
এ ঘটনায় তদন্তে ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭তম (সাধারণ) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশে সর্বশেষ ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলাবিধির ৩ (এইচ) ধারা অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলাবিধির ৪ (১) (ই) ধারা অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা মেহেদী গ্রেপ্তার
সিদ্ধিরগঞ্জে তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান এবং আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত আনোয়ার হোসেন মেহেদীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে র্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল তাকে আটক করে। পরে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম রোববার দুপুরে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন মেহেদীর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুটি হত্যা মামলা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলাসহ মোট তিনটি মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোতে তিনি এজাহার ভুক্ত আসামি এবং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন।
মামলা গুলো হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এফআইআর নং-২৫ (তাং- ২৬/৮/২০২৪), এফআইআর নং-২৭ (তাং- ২৭/৮/২০২৪) এবং এফআইআর নং-২৫ (তাং- ২২/১০/২০২৪)। এর পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতিসহ আরও একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, মেহেদী হত্যা মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি চৌকস দল তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ার হোসেন মেহেদী সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বর্মাস্ট্যান্ড এলাকার আফির উদ্দিন মাদবরের ছেলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেহেদী ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে গোদনাইলের পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে তেল চুরি করে আসছিল। অভিনব কৌশলে তেল চুরি করে তারা কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে।
তার এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে রাষ্ট্র যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনি এলাকায় একটি অপরাধী চক্রও গড়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মেহেদী তার রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার তেল চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।
প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তেল চুরির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আনোয়ার হোসেন মেহেদী ও তার বাহিনী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস অবস্থান নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার দলবল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান, যা পরে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনায় রূপ নেয়। এই সহিংসতাকে কেন্দ্র করেই তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
তার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষ এই শীর্ষ তেল চোর ও তার সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদেরও আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।