ধ্বংসস্তূপেই ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন, পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি
Published: 5th, November 2025 GMT
যেখানে থাকার কথা ছিল উৎসবের আবহ, সেখানে কেবলই ইটের স্তূপ আর আগাছার জঙ্গল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মশতবার্ষিকীতে সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরই জ্বলে উঠল মোমবাতির আলো।
রাজশাহীতে তাঁর গুঁড়িয়ে দেওয়া পৈতৃক ভিটায় দাঁড়িয়েই সাংস্কৃতিক কর্মীরা কিংবদন্তি এই নির্মাতার স্মৃতি রক্ষা এবং সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিকের পৈতৃক বাড়ির ধ্বংসস্তূপে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
‘ঋত্বিক শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও গণসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ির ইটের স্তূপে মোমবাতি প্রজ্বালন করে ঋত্বিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে রাতে ঋত্বিকের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ প্রদর্শন করা হয়। ঋত্বিকের বাড়ির গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটের স্তূপের ওপর টানানো হয় উৎসবের ব্যানার। টানানো হয় ঋত্বিকের সিনেমাকর্মের পোস্টার ও ঋত্বিকের পোর্ট্রেট ছবি। সন্ধ্যায় ইটের স্তূপই মোমবাতিতে আলোকিত হয়ে ওঠে।
ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর এই পৈতৃক বাড়িতে। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগরের মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এ কাজ করেছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার সুপারিশ বাস্তবায়নে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাড়িটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি কলেজকে ইজারা দেয় সরকার। ২০১৯ সালে এর একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির চেষ্টা হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসন বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। বিগত সরকারের একজন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী স্থানটি পরিদর্শন করে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগরের মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এ কাজ করেছেন।অনুষ্ঠানে বক্তারা ঋত্বিকের স্মৃতি রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ‘ঋত্বিক কুমার ঘটক’–এর পৈতৃক বসতভিটা ভাঙার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বসতবাড়ির টিকে থাকা অংশের (০.
রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে এই জমি ইজারা পায়। এই ইজারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং ইজারা বাতিল করে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহীর নামে স্থায়ী ব্যবস্থা অথবা/এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রথমেই ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক নিবাসের অবশিষ্ট অংশটুকুর (০.১৬০৩ একর) চারদিকে উচ্চ সীমানাপ্রাচীর দিয়ে সংরক্ষিত করতে হবে। একই সঙ্গে ‘ঋত্বিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। এই অংশে প্রবেশের জন্য বড় রাস্তার পাশে একটি গেট তৈরি করতে হবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র ম ঞ প ড় ইট র স ত প চলচ চ ত র স রক ষ কল জ ও সরক র ঘটক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি অনুষদের ডিনস অ্যাওয়ার্ড, পেলেন ৪৪ শিক্ষার্থী ও ৩০ শিক্ষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আইটি) অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সাল) এবং শিক্ষকদের পাঁচ বছরের (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল) ডিনস অ্যাওয়ার্ড ৬ নভেম্বর প্রদান করা হয়েছে। অনুষদের পাঁচটি বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এ ছাড়া দেশে বা বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য ৩০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক উপমা কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সোনালি ব্যাগের উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান ডিনস অ্যাওয়ার্ডে স্পিকার হিসেবে বক্তব্য দেন। বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক উপমা কবির।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে কোথায় পড়বেন: সিদ্ধান্ত নিতে মনে রাখুন ‘থ্রি–সি’৫ ঘণ্টা আগেডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৪৪ জন শিক্ষার্থী হলেন-জগন্নাথ বিশ্বাস, মো. নিজাম উদ্দিন তানিম, শ্রাবণী সরকার, নাজমুল হাসান নাঈম, আফসানা আনজুম আঁখি, নুসাইবা এহসান, আসমা ইয়াসমিন খান রিমু, মেহরিন ফাত্তাহা, কায়সারী ফেরদৌস, মোহাম্মদ আজমাঈন ফাতিন (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), নিশাত তামান্না আদিবা, এহসানুল হক, মো. শাহিদুল ইসলাম, মো. আহসানুল হক মামুন, মো. আবদুল হাসনাত, সাহাল জুবায়ের, তাইমিমা মাহবুব, ফাইরুজ তাহিয়া, ফাতেমা-তুজ-জহুরা (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), মো. আমিনুল কাদের বুলবুল, শাবাব মুর্শেদ, রাহিব হাসান, জহির সাদিক মনন, তাহমিদ মোসাদ্দেক, মহিদুল হক মৃদুল, আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, মাবসুর ফাতিন বিন হোসাইন, ইত্তেহাদ সালেহ চৌধুরী, সৌমিক শাফকাত অভ্র (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), এইচ রাইনাদ খান রোহান, কে এম সৌরভ, মো. নবীর হোসেন, মো. ফাহিম ফরায়েজি, তাসফিয়া রহমান রিভা, মাহমুদুল হাসান তামিম, জেরিন তাহসিন আনজুম, তাসনুভা তামিসা অর্পি, ফারহান লাবিব অর্ণব (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মিকদাম-আল-মাদ রৌন, আবদুল মোনাফ চৌধুরী, হুমায়রা রশিদ, সানিয়া কায়েনাত চৌধুরী, মো. এহতেশামুল হক, আতিক তাজওয়ার (রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং)।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু৩ ঘণ্টা আগেডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ৩০ জন শিক্ষক হলেনঅধ্যাপক মো. আবদুর রাজ্জাক (২০২১, ২০২৩, ২০২৫), মো. তানভীর আলম (২০২৪) (কম্পিউটার বিজ্ঞান অ্যান্ড প্রকৌশল), আবুল খায়ের মল্লিক (২০২১, ২০২৩), অধ্যাপক মো. নুরনবী (২০২৪), তাসলিম উর রশিদ (২০২২, ২০২৩), অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম মোল্লা (২০২৪), সাদিত বিহঙ্গ মালিথা (২০২১) (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), সেঁজুতি রহমান (২০২১, ২০২৩, ২০২৪) (রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং), মো. আরিফুল ইসলাম (২০২৩), মো. সিফাত-ই- আরমান ভূঁইয়া (২০২৩, ২০২৫), মো. মেহেদী হাসান (২০২৪), মো. হোসাইন শাহাদাত (২০২১), অনিমেষ পাল (২০২১, ২০২৫), অধ্যাপক আফরোজা শেলি (২০২২, ২০২৫) (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মাইনুল হোসেন (২০২২, ২০২৪, ২০২৫), শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম (২০২২, ২০২৩), মো. আহসান হাবীব (২০২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০২৪) (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা, তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব।’
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা-গণিত: প্রশ্ন নম্বর-৩০৮ নভেম্বর ২০২৫