জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আদায়ে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
Published: 22nd, September 2025 GMT
চলতি বছর জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের একই সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এনবিআর জানায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের আগস্ট মাসে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে ৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। যার প্রবৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ।
আরো পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদ: মৎস্য আহরণের প্রথম দিন রাজস্ব আয় ২০ লাখ টাকা
সিগারেটের করকাঠামো সংস্কারের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের
তথ্যমতে, গত আগস্ট মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মুসক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। যার পরিমাণ ১১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ের মুসক খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় পর্যায়ের মুসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩৩.
আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে চলতি বছর আগস্ট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা, আগের বছর একই সময়ে এই খাত থেকে আদায় হয়েছিল ৬ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। এ সময় রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে এক হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ২৪.১৭ শতাংশ।
চলতি বছর আগস্ট মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে এই খাত থেকে আদায় হয়েছিল ৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তনজনিত কারণে কাস্টমস হাউসগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব চলতি সেপ্টেম্বর মাসে জমা হবার কারণে এই খাতে আগস্ট মাসে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর জানায়, রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির এ ধারাকে আরো জোরালো করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা কর নেট সম্প্রসারণ, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ এবং কর ফাঁকি উদঘাটন কার্যক্রম বেগবান করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। করদাতাদের আইনের সুষ্ঠু পরিপালনের মাধ্যমে সময়মত যথাযথ পরিমান কর পরিশোধ করে দেশ গড়ার কাজের গর্বিত অংশীদার হবে বলে আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
ঢাকা/নাজমুল/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনব আর প রব দ ধ র হ র র একই সময় আগস ট ম স এনব আর সময় র
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি
জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
এনসিটিবির কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি
খাগড়াছড়িতে হতাহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় টিআইবি
গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।”
গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ; ট্রাস্ট আইনে জবাবদিহি, নিরীক্ষা ও তথ্য উন্মুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা; রাজস্ব বাজেটের বাইরে আন্তর্জাতিক তহবিল, কার্বন ট্রেডিং ও বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়া; স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া; একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা; এবং অবকাঠামো ও সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পের অনিয়মে জড়িতদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা।
ঢাকা/রায়হান/ইভা