‘মরিবার আগে একটিবার শুকনা মাটিতে হাঁটিবার চাই’
Published: 27th, September 2025 GMT
অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে দেখা হয়ে গেল জীবন মণ্ডলের সঙ্গে। জীবনানন্দের গন্ধ থাকলেও শিরোনামের কথাগুলো তাঁর।
জীবনই আমাকে শনাক্ত করে বললেন, ‘ভাই দেখি তেমনি আছেন। একটু শুকো গেছেন, কিন্তু ফিট; কী বলেন? আমি কেমনে কেমনে বুড়ো হয়ে গেলাম।’
জীবন মণ্ডলের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়–বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার তালায়। তাঁর বয়স তখন বড়জোর কুড়ি বা একুশ হবে। তালার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজের ছাত্র।
কুড়ির সঙ্গে ৩৭ যোগ করলে ৫৭ বছর হয়। কিন্তু জীবনকে দেখে মনে হবে তিনি ৭৫ পেরিয়ে গেছেন। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে কয়েক সপ্তাহ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম সাতক্ষীরায়।
ঘূর্ণিঝড় ত্রাণ কর্মসূচির সেই উদ্যমী জীবন যেন ধূসর হয়ে গেছেন।
২.সেই ’৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তালার চেয়েও ক্ষতি হয়েছিল সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী এলাকা। ক্যাম্প করে সেখানে থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
জীবনানন্দের মহাভক্ত জীবন মণ্ডলের ব্যাগে সেখানেও মজুত থাকত ঝরা পাতা, ধূসর পাণ্ডুলিপি, রূপসী বাংলা, সাতটি তারার তিমির। আলোহীন ক্লান্ত সেদিনের ত্রাণ ক্যাম্পে জীবন ছিলেন একমাত্র বাতি। অন্ধকার রাতে তিনি কবিতা শোনাতেন…
‘অনেক গভীর রাতে দেখা গেল জোনাকি পোকার সাথে নক্ষত্রের তলে
শিমগুলো খেলা করে শিশিরের জলে;
আমাকে দাঁড়াঁতে দেখে বলে তারা: “বুঝেছ তো কে এই জোনাকি?”
“চিনেছো?” বললে রাতের লক্ষ্মীপাখি।’
জীবন মণ্ডল ভবদাহ অঞ্চলের মানুষ। পাঠকেরা অনেকেই জানেন ভবদহ অঞ্চল যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত।
এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদের মাধ্যমে। তবে পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারানোয় পানি নিষ্কাশনে
সমস্যা হচ্ছে।
ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের সবুজ মণ্ডলের বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। দিনের বেলায়ও জীবনের চারদিকে ‘ধূসর অন্ধকার’। হারিয়ে গেছে ‘জীবনের জোনাকি, শিম বনের রাতের লক্ষ্মীপাখিরা’।
৩.জীবন মণ্ডলের ৫৭ বছরের জীবনের প্রায় ৪২ বছর কেটে গেছে জলাবদ্ধতায়। নথিপত্র বলছে, ১৯৮১ সালের পর থেকে জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছে।
জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা পলি স্লুইসগেটের মুখে জমা হয়ে নদীর গতিপথ সরু হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর দুই কূল ছাপিয়ে সমতল প্লাবিত হয়।
প্রতিবছরই এমনটা কমবেশি হয়। এ বছর কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর, ডুমুরিয়া অঞ্চলের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের বসতভিটার পানি আর নামছে না।
ভুক্তভোগীদের ধারণা, ভবদহ বিলের এ জলাবদ্ধতা সমাধানের জন্য টিআরএম স্থাপন, আমডাঙ্গা খাল খনন, ২৭ বিল এলাকার অকাল জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত বিল খুকশিয়ার ওয়াপদার স্লুইসগেটের পলি অপসারণ জরুরি।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৮ বছরে নেওয়া হয় পাঁচটি প্রকল্প। খরচের পরিমাণ অন্তত ৭০০ কোটি টাকা।
কিন্তু সুফল মেলেনি ভবদহ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের। নানা অনিয়ম আর একের পর এক প্রকল্পের ব্যর্থতায় আশাহত এই এলাকার বাসিন্দারা।
এসব কথা উঠতেই জীবন থামিয়ে দেন। বলেন, ‘ওসব কথা কয়ে আর কী হবে? আপনিও জানেন, আমিও জানি। যাদের কাছে সমাধান চাই, তারাই সমস্যার মূল কারণ। বড় বড় মানুষদের সঙ্গে আপনার ছবি দেখি। তাগোরে কিছু কবার পারেন না।’
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ বিল কেদারিয়াউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানদণ্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের যে সাজা দেওয়া হয়েছে, পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করলে একই শাস্তি পাবেন।
আজ সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে এবং পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবেন।’
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ সব আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস এগেন্স হিউম্যানিটির মতো কমপ্লেক্স (মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল) অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধীই হোক, তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এই রায়ের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি হয়েছে। যদিও আরও অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার, যাদের ক্ষতি কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হবে না, তাদের সামনে অন্তত একটা ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’