গতকাল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ার দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় তাঁর। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে জাহীদ রেজা নূরের ‘হেমন্ত হয়ে ওঠার গল্প’ শীর্ষক লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাংলা সংগীতজগৎকে বিশাল উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, অনন্য সৌন্দর্যে ভরিয়ে দিয়েছেন সংগীতবলয়কে। ‘কথা কয়ো নাকো, শুধু শোনো’; ‘শুধু শোনো’ উচ্চারণের ঢঙেই আধুনিক গান প্রবেশ করেছে নতুন এক বাস্তবতায়, যা প্রচলিত উচ্চারণের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক নতুন সম্ভাবনাকে। নিচের এই লেখায় থাকল সংগীতজীবনের শুরুর কথা, যার মধ্যে আমরা দেখতে পাব হেমন্তের খুব কাছের বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়কেও।
গত শতাব্দীর আশির দশকের কথা। বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন হচ্ছে কলকাতার ময়দানে। সম্মেলনের এক সন্ধ্যায় ছিল দুই বন্ধুর আড্ডা। গল্প, গান আর কবিতা দিয়ে পূর্ণ ছিল সে আয়োজন। বন্ধু দুজন হচ্ছেন গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
আড্ডার মধ্যেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে, ‘তোমার চুল কৃত্রিম রঙে আবৃত কেন?’ অর্থাৎ সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, হেমন্ত কেন কলপ লাগান চুলে।
প্রশ্ন শুনে ময়দানে জড়ো হওয়া দর্শক-শ্রোতারা হাততালি দিয়ে উঠলেন। হাসিতে ভরে গেল সারা ময়দান।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সঙ্গে সঙ্গে সপ্রতিভ স্বরে বললেন, ‘তুমি কবি মানুষ, পাকা চুলের সঙ্গে কবি ইমেজটা খাপ খেয়ে যায়। আমি যদি একমাথা পাকা চুল নিয়ে প্রেমের গান করি, তাহলে কি শ্রোতারা শুনবে?’

করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে ময়দান। সুভাষ মুখোপাধ্যায় বন্ধুর পিঠ চাপড়ে দেন।
১৯৩৫ সালে বেতারে গাওয়া সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি গান মনে করে তা থেকে দুটি লাইন শুনিয়েছিলেন হেমন্ত। মাঠভর্তি দর্শকের কাছে সে ছিল এক অভিনব প্রাপ্তি।
পূজার সময় আকাশবাণী কলকাতায় ‘মহালয়া’ আমরা অনেকে শুনেছি। সে সময় এর সংগীত পরিচালক ছিলেন পঙ্কজ মল্লিক। কোনো এক কারণে বেতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি সে সময় অনুপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৪ সালে মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামে যে সংগীতালেখ্যটি প্রচারিত হয়েছিল, তার সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হেমন্তের বয়স তখন মাত্র ২৪ বছর। কতটা প্রতিভাধর হলে এ রকম তরুণ বয়সী একজনকে এত বড় একটি কাজের দায়িত্ব দেওয়া যায়! এই কাহিনি এখানে বলে রাখলাম, হেমন্তের হেমন্ত হয়ে ওঠার পথের গল্পটা বলব বলে।

সুরের জাদুকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়বাংলা গানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের বারাণসীতে জন্ম। বেড়ে ওঠেন কলকাতায়। স্কুলজীবনে মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়ার সময়ই তাঁর গান শেখার সূচনা। বন্ধু শ্যামসুন্দরের বাড়ির হারমোনিয়াম ছিল তাঁর প্রথম আশ্রয়। এখানে পড়াশোনার সময় পরিচয় হয় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সুভাষের লেখা ‘আমার গানেতে এলে নবরূপে চিরন্তনী’ গানটি গেয়ে হেমন্ত প্রথম নির্বাচিত হন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। সেটিই ছিল তাঁর সংগীতজীবনের আনুষ্ঠানিক সূচনা।উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে; কিন্তু সংগীতের প্রতি প্রবল টান তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে গানের জগতে টেনে আনে। ১৯৩৭ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের হাত ধরে বের হয় তাঁর প্রথম আধুনিক গানের রেকর্ড। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।চল্লিশের দশকে হেমন্ত যুক্ত হন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (আইপিটিএ) সঙ্গে। এখানেই তাঁর পরিচয় হয় সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। দুজন মিলে উপহার দেন ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘রানার’ ও ‘পাল্কীর গান’-এর মতো কালজয়ী সৃষ্টি। একই সময়ে শুরু হয় চলচ্চিত্রে তাঁর পথচলা। ১৯৪১ সালের ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছিল তাঁর প্রথম একক প্লেব্যাক। তারপর একের পর এক গান, একের পর এক চলচ্চিত্রে তিনি কণ্ঠ দিলেন, সুর দিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ‘হারানো সুর’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘স্বরলিপি’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘দুই ভাই’, ‘সপ্তপদী’ কিংবা হিন্দি সিনেমার ‘জাগৃতি’, ‘এক হি রাস্তা’—সবখানেই তাঁর সুরের ছাপ। কণ্ঠে অমর হয়ে আছে অসংখ্য গান—‘এই রাত তোমার আমার’, ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, ‘ও নদীরে’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’। প্রতিটি গানই আজও শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।হিন্দি সংগীতজগতে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হেমন্ত কুমার’ নামে। গায়ক হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, সুরকার হিসেবেও তাঁর অবদান সমানভাবে সমৃদ্ধ করেছে বাংলা ও হিন্দি গানের ভুবন। নিউ থিয়েটার্সের প্রতিষ্ঠাতা বীরেন্দ্রনাথ সরকারের মতোই তিনি বিশ্বাস করতেন—‘গানই ছবির প্রাণ।’ তাই সিনেমা ফুরোলেও তাঁর গাওয়া গান বেঁচে আছে অমরত্ব নিয়ে।১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মারা যান।

ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন মূলত বড়লোকদের স্কুল ছিল। কেরানি বাবার ছেলে হেমন্ত সেখানে পড়তেন। তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। প্রবেশিকা পরীক্ষা শেষ হলেই কলেজে ঢুকবেন। ক্লাসের মধে৵ অফপিরিয়ডে হইচই করছিল ক্লাসের ছেলেরা। কোরাস গাইছিল। হঠাৎ সেখানে এসে হাজির হলেন স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার। সবাই চুপ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কারা গান করছিল?’
এবারও কেউ কথা বলে না।
হেমন্ত সরল মনে বলল, ‘আমি, স্যার!’
‘আমার সঙ্গে অফিসে এসো।’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাংলা সংগীতজগৎকে বিশাল উচ্চতায় তুলে ধরেছেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ মন ত ম খ প ধ য য় ন হ মন ত কলক ত য় প রথম ময়দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এভাবে লুচি বানালে ফুলবেই ফুলবে, জেনে নিন রেসিপি

উপকরণ

ময়দা: ২ চামচ

আটা: দেড় চামচ

চিনি: ১ চা-চামচ

ঘি: ১ চা-চামচ

তেল: ১ চা-চামচ।

প্রণালি

সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। একটু গরম পানি দিয়ে ময়ান বানাতে হবে। ময়ান পাঁচ মিনিটের মতো মেখে রাখুন। তারপর লুচি বেলে ডুবোতেলে ভেজে নিতে হবে।

আরও পড়ুনপূজায় অপু বিশ্বাসের প্রিয় খাবার মহাষ্টমীর ভোগের থালা, দেখুন তাঁর দেওয়া রেসিপি৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ