অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় সেসব অগুনতি নারীকে, যাঁরা এ রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন বা লড়াইয়ে হেরে গেছেন। অথচ এটি এমন এক ক্যানসার, যথাসময়ে শনাক্ত করা গেলে ও চিকিৎসা পেলে যা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
বৈশ্বিক বাস্তবতানারীদের যত ক্যানসার হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় স্তন ক্যানসার। ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৩ লাখ নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ৬ লাখ ৭০ হাজার। স্তন ক্যানসার নিয়ে উন্নত দেশে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৯০ শতাংশের বেশি। উন্নয়নশীল দেশে এ হার অনেক কম। এর মূল কারণ অসম স্বাস্থ্যসেবা, সময়মতো রোগ শনাক্ত না হওয়া এবং সবার সাধ্য ও নাগালে চিকিৎসা না থাকা।
বাংলাদেশের চিত্রদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে মারা যান প্রায় ছয় হাজার। দেশে স্তন ক্যানসার প্রায়ই দেরিতে বা শেষ পর্যায়ে শনাক্ত হয়, যার প্রধান কারণ নিয়মিত স্ক্রিনিং ও এ ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার অভাব। পর্যাপ্ত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এবং চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেশি হওয়ার কারণে অনেক রোগী সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসা পান না।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণস্তনে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে তা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। স্তনে বা বগলে শক্ত চাকা অনুভব হওয়া, স্তনের আকার বা আঙ্গিকে হঠাৎ পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত অস্বাভাবিক রক্তাক্ত বা সেখান থেকে স্বচ্ছ তরল নিঃসরণ, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা শক্ত হয়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া বা ব্যথা—এসব স্তন ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কেন স্ক্রিনিং জরুরিনিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। এটা হলে চিকিৎসায় সফলতার হার বহু গুণ বেড়ে যায়। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি করানো উচিত। যাঁদের পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের আরও আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতি মাসে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব কার্যকর। বাংলাদেশে বর্তমানে স্তন ক্যানসারের সব আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে।
সচেতন হোনচল্লিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে যাঁরা এখনো একবারও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করেননি, তাঁরা এ মাসে সচেতনতার অংশ হিসেবে করে নিতে পারেন। এ নিয়ে কথা বলতে হবে। কুসংস্কার ভাঙতে হবে। দ্বিধা অথবা লজ্জা পেরিয়ে পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য সচেতনতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে গ্রামে থাকেন, প্রান্তিক—এমন নারীরা সচেতনতার অভাবে দেরিতে হাসপাতালে আসেন। এ কারণে চিকিৎসার সাফল্যের হার কমে যায়।
ডা.
অরুণাংশু দাস কনসালট্যান্ট, স্কয়ার ক্যানসার সেন্টার, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শীতকালে ছাদবাগান করতে চাইলে এখনই যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
ছবি: প্রথম আলো