মিসরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। হামাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং সেনা প্রত্যাহার করে নেবে—এমন নিশ্চয়তা চান তাঁরা।

মিসরের পর্যটন শহর শারম-আল-শেখে গতকাল মঙ্গলবার ওই আলোচনা হয়। এদিন ছিল গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার দ্বিতীয় বছর পূর্তি। হোয়াইট হাউসে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, গাজা নিয়ে চুক্তি হওয়ার ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ আছে।

মিসরে আজ বুধবারও আলোচনা হবে। ওই আলোচনায় যোগ দিতে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও মিসরে যাচ্ছেন।

গতকাল হামাসসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বিত জোটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে সব উপায়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। জোরালোভাবে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’

কথাটি মূলত ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের অস্ত্র সমর্পণের যে দাবির কথা বলা হয়েছে, সেটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফাওজি বারহুম বলেছেন, তাঁদের আলোচকেরা যুদ্ধের অবসান চাইছেন। তাঁরা চাইছেন, গাজা থেকে দখলদার সেনারা পুরোপুরি সরে যাক।

কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি অস্পষ্ট। ধাপে ধাপে সেনাদের কবে প্রত্যাহার করা হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেওয়া হয়নি। সেনাদের ধাপে ধাপে তখনই প্রত্যাহার করা হবে, যখন হামাস তাদের কাছে জিম্মি থাকা ৪৮ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন এখনো বেঁচে আছেন।

আরও পড়ুনএকদিকে আলোচনা, অন্যদিকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল ১২ ঘণ্টা আগে

হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গতকালের আলোচনায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দিন-তারিখ নির্ধারণ এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শেষ ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাদের চূড়ান্ত প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য হামাসের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে।

মিসরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হায়া বলেছেন, সংগঠনটি দখলদার বাহিনীকে এক সেকেন্ডের জন্যও বিশ্বাস করে না।

আল-হায়া আরও বলেন, যুদ্ধ শেষ হবে এবং তা যে নতুন করে আর শুরু হবে না, তার নিশ্চয়তা চায় হামাস।

মিসরে আলোচনা চলার মধ্যেও গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও ইসরায়েল থামেনি। শুধু সেদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল কর মকর ত বল ছ ন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক’

 

গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুরু হওয়া পরোক্ষ আলোচনার প্রথম দিনটি ‘ইতিবাচক’ পরিবেশে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবারও এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। 

আরো পড়ুন:

দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ‘বিশেষ অস্ত্র’ মোতায়েন করল উত্তর কোরিয়া

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় হামাসের সাড়া নিয়ে কী বললেন বিশ্বনেতারা

সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠকটি ‘ইতিবাচক’ ছিল এবং বর্তমান আলোচনা কীভাবে চলবে তার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এই আলোচনা হয়।

হামাস প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

হামাস প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া এবং জাহের জাবারিন। গত মাসে হামাসের এই দুই নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাতারে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি। 

মিশরের বার্তা সংস্থা আল-কাহেরা নিউজের মতে, প্রথম দিনের আলোচনায় বন্দী ও বন্দীদের বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বিকেলে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, মিসরে তার প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে চলমান আলোচনায় হামাস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ‘রেড লাইন’ বা সীমারেখা আছে কি না; যেমন- হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যদি কিছু শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে আমরা তা করবো না। তবে আমার মনে হয়, আমরা বেশ ভালো অগ্রগতি করছি। আমি সত্যিই মনে করি আমরা এই চুক্তিটি সম্পন্ন করতে পারবো। 

আলজাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামাসকে দর কষাকষির টেবিলে রাখার জন্য আরব-তুরস্ক যৌথ সমর্থনের জন্যও বেশ প্রশংসা করেছেন, তিনি ইসরায়েলি জনগণের প্রশংসা করেছেন এবং তিনি তার নিজস্ব বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রশংসা করেছেন, যিনি এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও মার্কিন প্রতিনিধিদলের অংশ বলে জানা গেছে।

মিশরের আল-কাহেরা নিউজ নিশ্চিত করেছে যে, আজ মঙ্গলবার আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আজ ৭ অক্টোবর   ইসরায়েলে হামাসের হামলার দুই বছর পূর্তি, যেখানে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল।

তারপর থেকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জনকে আহত করেছে।

গাজা যুদ্ধকে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি, আন্তর্জাতিক আদালত এবং ইসরায়েলি অলাভজনক সংস্থাগুলোসহ শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ‘গণহত্যা’ হিসাবে অভিহিত করেছে।

সোমবার যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজা জুড়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি পোস্টে বলেন, ট্রাম্পের ‘সাম্প্রতিক প্রস্তাব’ এই মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে, যা কাজে লাগাতে হবে।”জাতিসংঘ প্রধান আরো বলেন, “আরো রক্তপাত রোধ করতে এবং শান্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অপরিহার্য।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক’