প্রায় দেড় বছর আগে বাংলা টাইগার্সের প্রথম যখন ক্যাম্প শুরু হয়, এই ক্যাম্পটিতে প্রথম মুশফিকুরের সাথে কাজ করা। প্রথম দিন মিটিংয়ে মুশফিকুরের প্রতিটি শব্দের উচ্চারণ ছিল খুবই শক্তিশালী, শৃঙ্খলা নির্ভর। প্রথম দিন তিনি সবাইকে বলে দিয়েছিলেন আমরা যদি নিজেদের উন্নতি করতে চাই ফিল্ডিংয়ে বেশি-বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ফিল্ডিং কোচ আশিক ভাই, যা করাবে তার থেকেও যেন অতিরিক্ত ফিল্ডিং সবাই করে।

প্র্যাকটিস শেষ হলে আমি পগ নেট (ফিল্ডিং কাজে ব‌্যবহৃত নেট) ও বল-ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম সাজিয়ে। মুশফিকুর অতিরিক্ত  ফিল্ডিং করতেন এবং সাথে আরো ৮ থেকে ৯ জন খেলোয়াড় নিয়ে চলে আসতেন ফিল্ডিং করতে। তখন মনে পড়ে যায়  নিউ জিল্যান্ডের ফিল্ডিং সংস্কৃতি পরিবর্তন করেছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ভারতের মাহেন্দ্র সিং ধোনি ও বিরাট কোহলি, দক্ষিণ আফ্রিকা হ্যানসি ক্রনিয়ে। এবং আমাদেরও একজন মুশফিকুর আছেন যিনি ফিল্ডিংয়ের সংস্কৃতি বদলাতে চান।

জানিয়ে রাখা ভালো, বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি হল ব্যাটিং-বোলিং এবং অল্প কিছু ক্যাচ ধরা। টাইগার্স ক্যাম্পে মুশফিকুর খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে প্রথম বক্তব‌্য দিয়েছিলেন ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব নিয়ে এবং আমাকে বলে দিয়েছিলেন, কেউ যদি ফিল্ডিংয়ে ফাঁকি দেয় আপনি সরাসরি আমার কাছে রিপোর্ট করবেন। তখন আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় কাজের প্রতি, পুরো পরিবেশটার প্রতি।

মুশফিকুরের রুটিন ছিল সকালে এসেই নকিং করবে। তারপর প্রধান কোচের যে পরিকল্পনা সেখানে ঢুকে যেত। এরপর ওয়ার্মআপ। এরপর ব‌্যাটিং করতো এক ঘণ্টারও বেশি সময়। এরপর আমার কাছে আসতো। জিজ্ঞেস, করতো আশিক ভাই আজকের প্ল‌্যান কি? আমি বললাত, ৫০টি ক‌্যাচ। ৫০টি গ্রাউন্ডস ফিল্ডিং। ৫০টি হাই ক‌্যাচ। এসব সম্পূর্ণ করে ট্রেনার ইফতির কাছে যেত। সেখানে রানিং শেষে তার সেশন শেষ হয়ে যেত। আমরা যখন লাঞ্চের জন‌্য যেতাম তখন দেখলাম সে আবার মাঝখানে গিয়ে থ্রো ডাউন খেলছে। কখনো নেট বোলারদের নিয়ে ঘণ্টাখানেক ব‌্যাটিং করছে। এভাবেই সে দিনের পর পর নিজের কাজ করে গেছে। সাথে জিম সেশন, নিজের প্রার্থনা, পড়াশোনা চালিয়ে গেছে।
খাবারদাবারের ব্যাপারে, শৃঙ্খলা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পছন্দ করত মুশফিকুর। সময়মতো ঘুম এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ড্রেসিংরুমে সাজানো গোছানো সবকিছু এভাবেই চলতে থাকলো।

ক্যাম্প শেষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের একটি সফর ছিল পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে। ঠিক তারপরে ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজ। সেখানে ওর পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ এবং পুরো দল ভালো খেলেছিল এবং সিরিজ জিতেছিল। দারুণ সব ক্যাচ নিয়েছিল খেলোয়াড়রা। দেশে ফেরার কিছুদিন পর আবার ক্যাম্প শুরু হয়। তখন সে সবার উদ্দেশ্যে ফিল্ডিং সেশনে বলেছিল, আমরা যে পাকিস্তানে সিরিজ জিতেছি তার অন‌্যতম বড় কারণ ফিল্ডিং। গত ক‌্যাম্পে ফিল্ডিংয়ে বাড়তি জোর দেওয়ার কারণেই আমরা দারুণ ক‌্যাচগুলো নিয়েছি এবং সবার সামনে আমাকে ধন্যবাদ জানায়। ওই সময়ে আমাকে এত মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিল মুশফিকুর যা আমার কাজের প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায় এবং মনে হতো প্রতিটি সিরিজে যদি একজন মুশফিকুর থাকতেন! যার ফিল্ডিংয়ের প্রতি এত ভালবাসা, এত পরিশ্রম.

. আমার অনুভবে পুরোটা জুড়ে-ই তা মিশে আছে।

মুশফিকুর, তুমি আমাদের অনেক খেলোয়াড়দের জন্য এক অনপ্রেরণা, উদাহরণ। আমি আশা করব, আমাদের যে তরুণ প্রজন্ম আছে তারা ঠিক আন্তর্জাতিক মানের রুটিন তৈরি করে পরিশ্রম করবে ঠিক মুশফিকুরের মত।

বাংলাদেশের প্রথম শততম টেস্ট খেলোয়াড় এবং শতরান, ফিফটি ও ফিল্ডিং একটি ক্যাচ ধরে সেরা খেলোয়াড় হয়েছো তার জন্য অফুরান ধন্যবাদ।

মুশফিকুর তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছু দিবে এবং বাংলাদেশের ফিল্ডিং সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করবে এই প্রত‌্যাশা।

লেখক: আশিক, ফিল্ডিং কোচ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড

ঢাকা/ইয়াসিন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়

শত বছরের বেশি আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের এক মৃত যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটি পকেটঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে এক নিলামে ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে এটি বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা (১ পাউন্ড সমান ১৫৯.৯৫ টাকা হিসাবে)।

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কগামী টইটানিক জাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল বরফখণ্ডে (হিমশৈল) ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এতে মারা যান দেড় হাজারের বেশি যাত্রী। তাঁদেরই একজন মার্কিন ধনকুবের ইসিডর স্ট্রাউস। তিনি ছিলেন ওই জাহাজের অন্যতম ধনী যাত্রী। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আইডাও মারা গেছেন।

জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ইসিডর স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।

জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।

স্ট্রাউস দম্পতির পরিবারের কাছে থাকা এ ঘড়ি গতকাল যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারে হেনরি অ্যালরিজ অ্যান্ড সন অকশনার্স নামের প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নিলামে বিক্রি হয়েছে।

জার্মান বংশোদ্ভূত ইসিডর স্ট্রাউস ছিলেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিকদের একজন ছিলেন।

ধারণা করা হয়, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় স্ট্রাউসের স্ত্রী আইডা স্বামীকে রেখে একা লাইফবোটে উঠতে রাজি হননি। বলেছিলেন, তিনি স্বামীর সঙ্গেই মরতে চান। পরে আইডা স্ট্রাউসের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুননিলামে ৩ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে টাইটানিকের যাত্রীর চিঠি২৭ এপ্রিল ২০২৫

টাইটানিকের আনুষ্ঠানিক কাগজে লেখা এবং জাহাজে থাকা অবস্থায় পাঠানো আইডা স্ট্রাউসের একটি চিঠিও গতকালের নিলামে ১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া টাইটানিকের যাত্রীদের একটি তালিকা ১ লাখ ৪ হাজার পাউন্ডে এবং উদ্ধারকৃত যাত্রীদের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্রুদের দেওয়া একটি সোনার পদক ৮৬ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।

টাইটানিক–সংক্রান্ত স্মারকসামগ্রী নিয়ে আয়োজিত এ নিলামে মোট আয় হয়েছে ৩০ লাখ পাউন্ড।

স্ট্রাউসের পকেটঘড়িটি রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসে থেমে গিয়েছিল। মূলত ওই সময়েই টাইটানিক জাহাজটি পানিতে তলিয়ে যায়।

ধারণা করা হয়, ১৮৮৮ সালে আইডা তাঁর স্বামীর ৪৩তম জন্মদিনে ঘড়িটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ঘড়িটির ওপর স্ট্রাউসের আদ্যক্ষর খোদাই করা আছে।

উদ্ধারের পর ঘড়িটি স্ট্রাউসের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘড়িটি সংরক্ষিত থাকে। একপর্যায়ে ইসিডরের প্রপৌত্র কেনেথ হলিস্টার ঘড়িটি মেরামত করান। এটি আবার সচল হয়।

নিলামকারী অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ মনে করেন, ঘড়িটি রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, টাইটানিকের কাহিনির প্রতি মানুষের এখনো আগ্রহ আছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারী, পুরুষ বা শিশু—প্রত্যেক যাত্রীরই একটি গল্প ছিল। আর ১১৩ বছর পরও সে গল্পগুলো স্মারকসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’

টাইটানিক থেকে ৭০০-এর বেশি যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্যাপ্টেনকে উপহার হিসেবে দেওয়া একটি সোনার পকেটঘড়ি গত বছর ১৫ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল। দামের দিক থেকে এটি সে সময় রেকর্ড করেছিল।

আরও পড়ুনটাইটানিকের যাত্রী মার্কিন ধনকুবেরের সেই সোনার ঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি২৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : মানবিক গুণাবলির প্রশ্ন-১
  • মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের স্বতন্ত্র পরিদপ্তর যে কারণে জরুরি
  • চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু
  • ইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন
  • বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত
  • ‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’
  • ‘এক টাকায়’ ৫০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন যিনি
  • টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
  • ওভাল অফিসে রোনালদোর সঙ্গে ফুটবল ‘খেললেন’ ট্রাম্প, ভিডিও প্রকাশ