বাগেরহাটে টেলিস্কোপে মহাকাশ দেখল শিক্ষার্থীরা
Published: 8th, October 2025 GMT
বাগেরহাটে টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশ, চাঁদ, তারা ও গ্রহ দেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) বাগেরহাট সদর উপজেলার উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনে এই আয়োজন করে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
আরো পড়ুন:
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল জবি শিক্ষার্থীর
শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এ সময় সামছ উদ্দিন নাহার ট্রাস্টের চিফ ফেসিলেটেটর সুব্রত কুমার মুখার্জি, এসপিএসবির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো.
প্রথমবারের মত টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশ দেখে খুশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার জানায়, টেলিস্কোপে চাঁদ দেখার সময় মনে হচ্ছিল যেন সে পৃথিবীর বাইরে চলে গেছে। বইয়ে যেভাবে দেখে, আজ সেগুলো সে নিজ চোখে দেখেছে। এটা তার অবিশ্বাস্য লেখেছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন জানায়, সে আগে ভাবতো মহাকাশ খুব দূরের কিছু। কিন্তু আজ সে বুঝেছে, বিজ্ঞান জানলে তারাও একদিন সেখানে পৌঁছাতে পারবে।
আয়োজকরা জানান, জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাগেরহাটের উদ্দীপন বদর-সামছ উদ্দিন বিদ্যানিকেতনে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘তারায় তারায় খচিত’ শিরোনামে দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
এ আয়োজনে শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে টেলিস্কোপ চালিয়ে চাঁদ ও তারা দেখার অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে তারা বিজ্ঞানের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০২৫’ (৪–১০ অক্টোবর) এর প্রতিপাদ্য ‘লিভিং ইন স্পেস’ বা ‘মহাকাশে বসবাস’ এর অংশ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়।
সামছ উদ্দিন নাহার ট্রাস্টের চিফ ফেসিলেটেটর সুব্রত কুমার মুখার্জি বলেন, “গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের কাছে এমন আয়োজন একেবারে নতুন। তারা শিখছে, প্রশ্ন করছে, আর বিজ্ঞানের আনন্দটা নিজেরা অনুভব করছে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। এমন আয়োজন দেশের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া উচিৎ।”
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির কোষাধ্যক্ষ নাসির খান সৈকত বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরাও যেন বিজ্ঞানের আলোয় বড় হয়। বিজ্ঞানের শিক্ষা শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তারা কখনো জানবে না আকাশ কত বড়, পৃথিবী কত ক্ষুদ্র। তাই আমরা টেলিস্কোপ হাতে তাদের আকাশ দেখার সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তারা নিজের চোখে বুঝতে পারে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য কতটা বাস্তব।”
তিনি আরো বলেন, “মহাকাশ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, রোবটিক্স এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে তারাই দেশের প্রযুক্তি ও গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে। আমরা শুধু তাদের কৌতূহলের আগুনটা জ্বালিয়ে দিতে চাই, যাতে তারা নিজেরাই খুঁজে নেয় শেখার আনন্দ।”
ঢাকা/শহিদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র নয়, বেসরকারি খাত হবে উন্নয়নের চালিকা শক্তি: ডেভিড এঙ্গারম্যান
বিভিন্ন দাতা রাষ্ট্রের সহায়তায় সরকারিভাবে উন্নয়নকাজের যুগ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে একটি নতুন উন্নয়ন অর্থায়নের যুগ তৈরি হচ্ছে, যেখানে উন্নয়নের জন্য দান বা সহায়তা হিসেবে নয়, বরং ঋণ হিসেবে অর্থ আসবে বা নেওয়া হবে। আর রাষ্ট্র নয়, বেসরকারি খাত হবে উন্নয়নের চালিকা শক্তি।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান। সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি যৌথ উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন: অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ।
সেমিনারে ডেভিড সি এঙ্গারম্যান বলেন, প্রচলিত দাতা অর্থায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন যুগ এখন সমাপ্তির পথে। এটি প্রায় ৭০ বছর স্থায়ী ছিল; ১৯৫৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত, যা শীতল যুদ্ধের চেয়ে দীর্ঘ। ফলে উন্নয়নকে প্রাপক ও দাতা নয়, বরং ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতা সম্পর্কের ভিত্তিতে ভাবা উচিত। এত দিন বিশ্বব্যাংকসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো ব্যাংকঋণ দিয়ে আসছিল। এখন সেই ভূমিকা নিচ্ছে বেসরকারি খাত। বিশেষ করে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’–এর মতো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।
তবে ‘উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা’ টিকে থাকবে, এমন উল্লেখ করে ডেভিড এঙ্গারম্যান বলেন, ‘এই আকাঙ্ক্ষা শুধু পশ্চিমা ব্যাংক বা সংস্থার মধ্যে নয়, বরং গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিজেদের ভেতরও তৈরি হয়েছে। এখন আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে প্রধান শক্তি হলো বেসরকারি বাজার ও বেসরকারি অর্থায়ন। ফলে অর্থায়নের জন্য উন্নয়নশীল দেশের নিজেদের বেসরকারি কোম্পানি, সাহায্য সংস্থা (এনজিও) ও সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব বাড়ছে।
দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে
অনুষ্ঠানে ডেভিড এঙ্গারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। বড় সরকারি চুক্তি ও ক্রয়প্রক্রিয়া সরকারের অভ্যন্তরে দুর্নীতির সহজ সুযোগ তৈরি করে। বেসরকারি খাতও যে সব সময় নিখুঁতভাবে অর্থের ব্যবস্থাপনা করে, বিষয়টি এমন নয়। আমার ধারণা, এই নতুন ও অধিকতর বেসরকারিকেন্দ্রিক উন্নয়নব্যবস্থায়ও দুর্নীতি সম্পূর্ণ বিলীন হবে না।’
প্রযুক্তিগত পরিবর্তন মানব উন্নয়নে যেমন অগ্রগতি আনতে পারে, তেমনি তা মানব উন্নয়নের ক্ষতিও করতে পারে বলে মনে করেন ডেভিড সি এঙ্গারম্যান। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেশে দেশে কিংবা দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ভেতর বৈষম্য বাড়ানোর বড় একটি ঝুঁকি তৈরি করছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সেগুলো জাতীয়করণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ডেভিড সি এঙ্গারম্যান বলেন, জাতীয়করণ একটি জটিল ও কঠিন বিষয়। স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানের বহু প্রতিষ্ঠান ও কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানি মালিকেরা ফেলে রেখে গিয়েছিলেন। সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রই তখন একমাত্র প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়ায়। এটি কোনো আদর্শগত (সমাজতান্ত্রিক) বিষয় ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অদক্ষ লোকের কারণে রাষ্ট্র–পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান সফলতা পায়নি।
অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমীন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কাজী ইকবাল প্রমুখ।