জুলাই সনদ নিয়ে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে চূড়ান্ত সুপারিশ: আলী রীয়াজ
Published: 9th, October 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাঁচ দফা পরামর্শ পেয়েছে কমিশন। এসব পরামর্শের ভিত্তিতে কমিশন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সরকারকে চূড়ান্ত সুপারিশ দেবে।’
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার রাতে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের আলোচনা শেষে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। শেষ দিনের আলোচনা বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আজ সারা দিনের আলোচনার সারাংশ নিয়েছি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে সরকারকে দ্রুত পরামর্শ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষ আদেশ জারি করা, ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করা, গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন রাখা, নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ১৩তম জাতীয় সংসদ গঠন করা এবং গণভোটে সনদ অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বর্ণিত সংস্কার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে।
আরও পড়ুন জুলাই সনদ: ‘শেষ দিনের আলোচনায়’ ঐকমত্য কমিশন১১ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্যরা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে, ৮ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট নিতে চায়, সেটি নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চায় এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিস্কার করতে হবে। উনি যদি কখনও পরিষ্কার করেন, তখন সেটি নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। তার আগে এটি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা এসব কথা বলেন।
‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে’—সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। আজ ওই বক্তব্যের বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন।
জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দলের মতো নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সরকারের ভালো একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ (কাজের সম্পর্ক) আছে। এটা উনি অভিমান থেকে বলেছেন নাকি উনার কোনো বিষয়ে গ্রিভেন্স (দুঃখবোধ) আছে। এই বিষয়গুলো উনাকেই পরিষ্কার করতে হবে। উনি যদি কখনো পরিষ্কার করেন, তখন সেটা নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। সেটির আগে সরকারের বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘নাহিদ ইসলামের বক্তব্য তাঁকেই খণ্ডন করতে হবে, আমার খন্ডানোর বিষয় নয়। বক্তব্যটা স্পেসিফিক (সুনির্দিষ্ট) হলে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলা হতো। এটা হয়তো তাঁদের ধারণা, তাঁরা মনে করে এটি বক্তব্য হিসেবে বলেছে। এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বক্তব্য দেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।’
আসলেই কি উপদেষ্টারা এক্সিট খুঁজছে– এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম, এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে। সে সব ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশেই থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাব।’
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছেন, এটি তো তাদের অধিকার। এটাই তো গণতন্ত্রের চর্চা। এখন প্রতিটা বিষয় নিয়েই যদি আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই, চিন্তা করি তাহলে আমরা মন্ত্রণালয়গুলো কখন চালাব? যখন কোনো বিষয় সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে, তখন অবশ্যই সরকার সে বিষয়ে কথা বলবে। অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের প্রক্ষিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের পরিস্থিতি একদমই স্থিতিশীল আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা শুধু অন্তর্বর্তী সরকারই বলেছে তা নয়, সকল রাজনৈতিক দলও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এখানে আর কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন তোলার সুযোগ বা অবকাশ আছে বলে আমরা (সরকার) মনে করছি না,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন‘উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা০৫ অক্টোবর ২০২৫নির্বাচনের আগে ছোট আকারে আরেকটা নির্বাচনকালীন সরকার হবে কি না– এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচন করবে। এখনো পর্যন্ত এটাই হচ্ছে অবস্থা এবং অবস্থান।
সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার, বিচার এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। বিচার বিচারের গতিতে চলছে। বিচার কীভাবে চলছে এটা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ করতে পারছেন।
বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি সেটি সরকার দেখিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ বেশি হয়ে যাওয়ায় আরেকটা ট্রাইব্যুনাল বাড়িয়েছি। আমরা বিচারকে প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রাধান্য দিয়ে সে মোতাবেক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্যই চাই যে সুবিচার নিশ্চিত হোক। সেজন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার সেটি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুনমৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই: সারজিস আলম০৭ অক্টোবর ২০২৫সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঐকমত্য হয়নি এ কথাটা ঠিক না। ঐকমত্য তো হয়েছে। অনেক বড় বড় বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখন যে সমস্ত বিষয়ে সংস্কারকেন্দ্রিক ঐকমত্য হয়েছে, সেই সমস্ত ঐকমত্যের বাস্তবায়নটা কেমন করে হবে সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাস্তবায়নের বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুয়েকটা অপশনের দিকে রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সমর্থন দিচ্ছে। একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সমাধান করতে গেলে আপস অ্যান্ড ডাউনস (উত্থানপতন) হবেই। এটিতে স্মুথ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে পদ্ধতিটা স্মুথ যাচ্ছে। যেখানে সবাই আলোচনায় আসছেন, মতামত দিচ্ছেন। এটা তো একটা স্মুথ প্রসেসে হচ্ছে।’
পরিবর্তন চাপিয়ে দিলে টেকসই হবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক ডিবেট (বিতর্ক) থাকবেই। সেখানে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এইজন্য যে এটি (পরিবর্তন) কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। চাপিয়ে দিলে কোনো কিছুই আর টেকসই হবে না। যেটা আমরা আগেও দেখেছি। তিন দলীয় রূপরেখা ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখেছি। তাই চাপিয়ে না দিয়ে সকলে একমত হয়ে যেটুকু করতে চাইবে আমরা সেটুকু সংস্কারের ঐকমত্য এবং পদ্ধতির ঐকমত্যের দিকেই যাব। একটা রাজনৈতিক আলোচনায় উত্তাপ থাকবে, একমত থাকবে। এটা খুবই স্বাভাবিক।’
বিচার কবে নাগাদ হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচার কখন হবে সেটা তো আসলে পুরো শুনানি প্রক্রিয়া, সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বলা যাবে। আগে বলা সম্ভব নয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বলা যাবে। যে মামলাগুলো বিচারাধীন আছে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলেই হবে। দেড় বছরে বিচারের রায় হয় এতো অসম্ভব কিছু না। এর আগে তো দেখেছি যে দেড় বছরে বিচারের রায় হয়।
সরকার একটা ভালো, ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) নির্বাচন করতে চায় এমনটা বলছে। ইনক্লুসিভ নির্বাচনের সংজ্ঞা কী এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার প্রথম থেকে বলেছে, একটা স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যে নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে সেই নির্বাচনটা চাই। জনগণের অংশগ্রহণের পথে যাতে কোনো অন্তরায় না হয়, সেজন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে যতোভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, ততোভাবে সহায়তা দেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টা আইনি হতে পারে। অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টা তাদের পলিটিক্যাল ওয়েটেজ (গুরুত্ব) অনুযায়ী ডিসাইডেড (নির্ধারিত) হবে।