ইসলামী ব্যাংক: অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও পাচার অর্থ ফেরত চায় ব্যবসায়ী ফোরাম
Published: 9th, October 2025 GMT
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং এস আলম গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরতের দাবি জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। সংগঠনটি জানিয়েছে, এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন হকস বে-এর চেয়ারম্যান ও বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ.
আরো পড়ুন:
পাচারের অর্থ উদ্ধারে ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির নির্দেশ
ইসলামী ব্যাংকে ‘অবৈধ’ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংকে পরিণত হয়েছিল। ব্যাংকটি গার্মেন্টস, বড় ও মাঝারি শিল্পসহ প্রায় ছয় হাজার প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।”
“কিন্তু ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রীয় প্রভাব ব্যবহার করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং বোর্ড দখল নেয়। পরবর্তীতে নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে দুর্বল করে ফেলে—যার ফলে ব্যাংকের সুশাসন ভেঙে পড়ে।”
ফোরামের অভিযোগ, ‘এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের তহবিল থেকে নামে-বেনামে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। একই সঙ্গে ৮ হাজার ৩৪০ জনকে কোনো পরীক্ষা বা বিজ্ঞাপন ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি প্রার্থী চট্টগ্রামের পটিয়া অঞ্চল থেকে। অনেকে নাকি ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন।’
“এই অনিয়মের ফলে ব্যাংকটি প্রতি বছর প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে—যা গত সাত বছরে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে,” বলে দাবি ফোরামের।
বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক বলেন, “এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ওরফে এস আলম পালিয়ে যাওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে এখনো অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বরখাস্ত করেনি। সম্প্রতি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে তারা ব্যাংকের প্রতি অবাধ্যতা দেখিয়েছে—যা প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।”
বক্তারা জানান, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনো এস আলমের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ওই শেয়ার জব্দ করেছে, তবুও এখনো লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, যা তারা ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী ফোরামের দাবি
১. ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের প্রভাবে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।
২. নতুন নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিয়ে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে হবে।
৩. এস আলম গ্রুপের লুট ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. জব্দ হওয়া এস আলমের শেয়ার লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে হবে।
৫. এস আলমের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ফোরামের নেতারা বলেন, “যদি আজকের মধ্যেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বরখাস্ত না করে, তবে তারা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস আলম গ র প র অব ধ ন য় গ ব যবস য় ব যবস থ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়ির সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি এইচআরএফবির
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
মঙ্গলবার সংগঠনটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানান। সাক্ষাৎ শেষে মানবাধিকার সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএফবি জানায়, খাগড়াছড়ি জেলায় এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে বলপ্রয়োগ ও সংঘর্ষের সময় তিনজন আদিবাসী তরুণ নিহত হন। পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী নাগরিকদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদল সহিংসতার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের জবাবদিহি এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, গুইমারায় শান্তি ও আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আদিবাসীদের জীবন ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিনিধিদল ওই এলাকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ ও পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগ ও নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধানের উপায় খোঁজার জন্য একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানান।
সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের (এইচআরএফবি) স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ব্লাস্টের পরিচালক মাহবুবা আখতার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য ইফতেখারুজ্জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য পল্লব চাকমা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও এইচআরএফবির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও এইচআরএফবির সদস্য বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ।