ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও রাগসংগীতে বিশুদ্ধতার ধারণা
Published: 9th, October 2025 GMT
আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব বরাবরই এক বিস্ময়কর মানুষ। এ কথা যেমন নিরেট সত্য, তেমনি এ কথাও সত্য যে তিনি একই সঙ্গে এক পরম সাধারণ মানুষ ছিলেন। খাঁ সাহেবের সংগীতের মূলে কোনো আভিজাত্য বা দূরত্ব ছিল না, প্রতিটি সুরের ভেতর দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে মাটির গন্ধ, ক্ষুধার ইতিহাস, মানুষের ক্লান্তি ও আশ্বাসের শব্দ।
আমি আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে চিনেছি আমার গুরুজির কাছ থেকে। সেদিন বিহাগের তালিম চলছিল। তালিমের একপর্যায়ে গুরুজি আমায় থামিয়ে বললেন, ‘তোকে একটা গল্প বলি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ বিহাগের বিনকারী শেষ করবেন, সম্ভবত ঝালা বাজাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর চোখ দিয়ে জল বয়ে এল আর তিনি বললেন, “এত দিন পর গান্ধারটা লাগল!”’ সেই গল্প শুনে আমি বুঝেছিলাম আত্মসন্ধান, শ্বাসের আশ্বাসে গলার মধ্য দিয়ে উঠে আসা আত্মার ছবিও নেহাত।
আলাউদ্দিন খাঁ কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা।আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব উপমহাদেশের একটা জটিল সময়ে বর্তমান ছিলেন। দীর্ঘ দমন, কলোনিয়াল আধিপত্য, সামাজিক বিভাজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া মানে একপ্রকার সোশিও-পলিটিক্যাল আত্মপরিচয় পুনরুদ্ধারও। ভারতীয় সংগীত, বিশেষ করে আলাউদ্দিন খাঁর মতো মানুষদের হাতে হয়ে উঠেছিল এক প্রতিস্পর্ধী রাজনীতি। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব নিজেই ছিলেন এক বিপ্লবী সংগীতচেতা। কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব এখানেও বিস্ময়কর।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোনালদোর বিস্ময়কর বাইসাইকেল কিকে আল-নাসরের দাপুটে জয়
৪০ বছর বয়সেও যেন সময়কে থামিয়ে রেখেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রোববার রাতে সৌদি প্রো লিগে আল-নাসরের হয়ে আবারও দেখালেন সেই চেনা জাদু। এক অসাধারণ বাইসাইকেল কিকে গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন পর্তুগিজ তারকা।
ডান দিক থেকে আসা একটি ক্রসে মুহূর্তের মধ্যে শরীরকে আকাশে ভাসিয়ে অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে যে গোলটি করলেন, সেটি আটকানোর কোনো উপায়ই ছিল না প্রতিপক্ষ গোলকিপারের। রোনালদোর এই গোলেই আল নাসর ৪-১ ব্যবধানে হারায় আল-খালিজকে।
আরো পড়ুন:
ইজের হ্যাটট্রিকে টটেনহ্যামকে উড়িয়ে দিল আর্সেনাল
বেলিংহামের শেষ মুহূর্তের গোলে হার এড়াল রিয়াল
আন্তর্জাতিক বিরতিতে পর্তুগাল দলে তিনি লাল কার্ড দেখেছেন আয়ারল্যান্ড ম্যাচে। আবার দেশকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করানোর উৎসবও করেছেন। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা জাগিয়েছেন তিনি। যা হবে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।
২০২৫-২৬ মৌসুমে আল-নাসর যেন থামতেই জানে না। আল-খালিজের বিপক্ষে এই ৪–১ গোলের জয় তাদের টানা নবম জয়। লিগে সর্বোচ্চ ৩০ গোল করে তালিকার শীর্ষে তারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও জোয়াও ফেলিক্স; দুজনেই করেছেন ১০টি করে গোল, দলটিতে এখন যেন পর্তুগিজ ঝড়।
আল-আওয়াল পার্কে এই ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল আল-নাসর। চতুর্থ মিনিটেই ফেলিক্সের নিখুঁত পাস থেকে দুর্দান্ত এক দূরপাল্লার শটে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন রোনালদো। যদিও অল্পের জন্য বাইরে যায় বলটি। এরপর সাদিও মানের দুর্দান্ত ক্রস থেকে ছয় গজ বক্সের ভেতর থেকেও পান আরও একটি সুযোগ। কিন্তু গোলকিপার অ্যান্থনি মরিস অবিশ্বাস্য সেভে বাঁচান দলকে।
৩৩ মিনিটে ফেলিক্সের গোলটি ভিএআর চেকের পরে হ্যান্ডবলের কারণে বাতিল হয়ে যায়। তবে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি আল-নাসরকে। অ্যাঞ্জেলোর দুর্দান্ত ক্রসে ফেলিক্স এবার ঠিকই বল জালে জড়ান। কয়েক মিনিট পরই ফেলিক্সের প্রেসিং থেকে পাওয়া বল ধরে ওয়েসলি করেন দারুণ এক গোল। তাতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আল নাসর।
বিরতির পরই ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় আল-খালিজ। শুরুতেই মুরাদ আল হাওসাভির দুর্দান্ত এক শটে ব্যবধান কমে আসে। মুহূর্তেই বদলে যায় ম্যাচের রং। চাপ বাড়াতে থাকে অতিথিরা। তবে গোলরক্ষক নাওয়াফ আল-আকিদির দৃঢ়তায় টিকে থাকে আল-নাসর।
এরই মাঝে সাদিও মানে চমৎকার এক লব শটে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন ৩-১ এ। তারপর বিরাট ভুল করেন আল-খালিজের দিমিত্রিওস কুরবেলিস। আলি আল হাসানের ওপর ভয়ংকর স্টাম্পিং করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন।
এরপরই আসে রাতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ; ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সেই জাদুকরি বাইসাইকেল কিক। নাওয়াজ বুশালের ক্রসে হাওয়ায় ভেসে উঠে নিখুঁত ওয়ালি, বল গিয়ে জড়ায় জালের কোণায়। পুরো স্টেডিয়াম মুহূর্তের মধ্যে উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে। ৪-১ ব্যবধানে নিশ্চিত হয়ে যায় আল নাসরের বড় জয়।
ফেলিক্স ছিলেন দলের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। এক গোলের পাশাপাশি ওয়েসলির গোলে দেন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসিস্ট। লিগের যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতাও এখন তিনি ও রোনালদো। তবে ব্রোজোভিচের দিনটা ছিল একেবারেই বাজে। অযথা হাত দিয়ে বল ছুঁয়ে ফেলায় দল বঞ্চিত হয় সম্ভাব্য এক দুর্দান্ত গোল থেকে। প্রথমার্ধেই তাকে তুলে নেন কোচ হেসুস।
ঢাকা/আমিনুল