বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন ফখরুলের
Published: 10th, October 2025 GMT
বিএনপির জনপ্রিয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে টানাটাানি ও চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “ধানের শীষ আটকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ ধানের শীষ জিতে গেলে বাংলাদেশ নিয়ে চাক্রান্তকারীরা চলে যেতে বাধ্য হবে।”
এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের জবাবে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ফখরুলের সঙ্গে জার্মানির নতুন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক: মির্জা ফখরুল
স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে শহীদ নাজিরউদ্দিন জেহাদের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা।
এনসিপিকে শাপলা মার্কা না দিলে ধানের শীষ বাতিল করতে হবে- এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ভাই আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দেইনি। কোন মার্কা তোমাদের দেবে, তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। অযথা বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন? কারণ ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য। সারা দেশে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে।”
গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের বিকল্প কোনো পথ নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের জন্য আর বিকল্প কোনো পথ নেই। কয়েকজন মিলে আইন করলে গণতন্ত্র হয় না।”
“যতই সংস্কার করি, বুদ্ধিজীবী মিলে কৌশল আবিষ্কার করার চেষ্টা করি। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারব না।”
বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী আখ্যায়িত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তারাই বারবার লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সেই লড়াইয়ে মানুষ বার বার হোঁচট খেয়েছে। যতবার হোঁচট খেয়েছে, ততবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছে।”
হাসিনাকে শুধু ‘হাসিনা’ বললে সম্মান দেওয়া হবে সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দানব হাসিনা দেশের সমস্ত কিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, আমাদের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা- সমস্ত জায়গায় সে তছনছ করে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “মনস্টার (দানব) শেখ হাসিনা এমনি এমনি দিল্লি পালায়া যায়নি, যেতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমরা সে ভিত্তি তৈরি করেছি। দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে সংগ্রাম করে রক্ত দিয়ে আমরা সেই ভিত্তি অর্জন করেছি।”
“কিছু কিছু মানুষ বা সংগঠন জুলাই আন্দোলনকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেন। অথচ গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেছে। কয়েক দিন লাফালাফি করলে গণতন্ত্র হয় না। গণতন্ত্র গড়তে হলে অনেক পরিশ্রম দরকার, ত্যাগ দরকার, জনগণের কাছে যাওয়া দরকার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য মানুষের কাছে যাওয়া পার্টি।”
আমলাতন্ত্রকে একটি নির্দিষ্ট দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেখছি আমলাতন্ত্রকে একটি দলের পকেটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, সরকার থাকতে হবে নির্বাচনের সময়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কোনো দলের কাছে যেন মাথা নত না করে।”
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের স্মৃতিচারণা করে বলেন, “সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে শহীদ জেহাদের লাশ রেখে আমরা শপথ করেছিলাম স্বৈরাচার পতনের। পরের দিন হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আহত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে আবার শপথ নিই। শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচারের পতন করতে সফল হয়।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ ব যবস থ ব এনপ র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের দেওয়া চিঠি পরীক্ষা করে দেখছে ভারত: রণধীর জয়সওয়াল
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের দেওয়া চিঠি পরীক্ষা করে দেখছে ভারত। আজ বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনুরোধটি (চিঠি) পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমরা শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা অব্যাহতভাবে সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।’
নয়াদিল্লিকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে আজ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাব এখনো আসেনি। আজ দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ খবর জানান।
কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোনো উত্তর আসেনি। এত তাড়াতাড়ি উত্তর আশাও করি না আমরা।’
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তাঁকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ দুই দফায় চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি ভারত। এর মধ্যে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ওই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠিতে বলা হয়, বিস্তারিত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে আবার অনুরোধ জানাচ্ছে।
এই চিঠির কোনো জবাব নয়াদিল্লি না দিলেও শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণার পর একটি বিবৃতি দিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছিল, ‘নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকব।’
আরও পড়ুনশেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে লেখা চিঠির জবাব এখনো আসেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা২ ঘণ্টা আগে