জনপ্রিয়তায় চ্যাটজিপিটিকেও ছাড়িয়ে গেল ওপেনএআইয়ের ভিডিও তৈরির অ্যাপ সোরা
Published: 13th, October 2025 GMT
লেখা থেকে ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ‘সোরা’ অ্যাপ উন্মুক্তের পাঁচ দিনেরও কম সময়ে ১০ লাখবারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, নিজেদের তৈরি জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির তুলনায় কম সময়ে সোরা অ্যাপ এই মাইলফলক স্পর্শ করেছে। সোরা অ্যাপটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোরে শীর্ষস্থান দখল করে আছে।
সোরা অ্যাপ ব্যবহারকারীর দেওয়া সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা বা প্রম্পট থেকে সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। আর তাই ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বিষয়ে ওপেনএআইয়ের সোরা প্রকল্পের প্রধান বিল পিবলস এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জানান, অ্যাপটি এখনো কেবল উত্তর আমেরিকার আমন্ত্রিত ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত। তবু ব্যবহারকারীর আগ্রহ ও ডাউনলোডের হার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত বাড়ছে।
বাজারের আসার পরপরই জনপ্রিয়তা পেলেও সোরা অ্যাপ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি প্রয়াত জনপ্রিয় ব্যক্তিদের চেহারা বা রূপ ব্যবহার করে ভিডিও তৈরির সুযোগ থাকায় সোরা অ্যাপকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে অনলাইনে। অ্যাপটি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই শেয়ার করা যায়। ফলে টিকটক, এক্স ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে সোরায় তৈরি ভিডিও পোস্ট করছেন ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে কিছু ভিডিওতে প্রয়াত সংগীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন ও টুপাক শাকুরের মতো তারকাদের কৃত্রিম ভিডিও রয়েছে।
সোরা অ্যাপের মাধ্যমে তৈরি অনেক ভিডিওতেই চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ ও ভিডিও গেমের বিভিন্ন চরিত্রকে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সিএনবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একটি ভিডিওতে ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানকে দেখা গেছে পোকেমন চরিত্রদের সঙ্গে। যেখানে তিনি হাস্যরসের ছলে বলছেন, ‘আশা করি নিন্টেন্ডো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে না।’ অন্য এক ভাইরাল ভিডিওতে তাকে দেখা যায় গেমের জনপ্রিয় চরিত্র পিকাচুকে গ্রিল করে খেতে।
সোরা অ্যাপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ওপেনএআইয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের চিত্রায়ণকে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ’ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে সম্প্রতি প্রয়াত জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তাদের অনুমোদিত প্রতিনিধি চাইলে সেই চিত্র বা ভিডিও ব্যবহার বন্ধের অনুরোধ জানাতে পারবেন।
সূত্র: বিবিসি
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুনিয়া কাঁপানো চ্যাটজিপিটির জন্মদিন আজ
প্রযুক্তি–দুনিয়াকে পুরোপুরি বদলে দেওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’-এর জন্মদিন আজ। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর যাত্রা শুরু করা চ্যাটজিপিটি চালুর মাত্র দুই মাসের মধ্যে ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। বর্তমানে বয়স-পেশানির্বিশেষে অনেকেই চ্যাটজিপিটি নিয়মিত ব্যবহার করেন, ফলে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ৮০ কোটির বেশি সক্রিয় সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীর মাইলফলক অর্জন করেছে চ্যাটজিপিটি।
ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর থেকে প্রযুক্তি, সমাজ ও অর্থনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে। এটি কেবল একটি চ্যাটবট নয়; বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এনে দেওয়া এক যুগান্তকারী হাতিয়ার। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের তৈরি এআই চ্যাটবট বাজারে আনলেও চ্যাটজিপিটি নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
চ্যাটজিপিটির মূল ভিত্তি হলো বিশাল তথ্যভান্ডারযুক্ত জিপিটি কাঠামো, যা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের (এলএলএম) মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তাই চ্যাটজিপিটি মানুষের মতো স্বাভাবিক ভাষায় কথোপকথনের পাশাপাশি কোড লেখা, জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং সৃজনশীল লেখা তৈরি করতে পারে। দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের কারণে বর্তমানে চ্যাটজিপিটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার ভিজিট করা ওয়েবসাইটের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে চ্যাটজিপিটি।
চ্যাটজিপিটি যেকোনো বার্তার উত্তর দ্রুত ও নির্ভুলভাবে দিতে পারে। নিজ থেকে বার্তা, নিবন্ধ বা কবিতাও লিখে থাকে। নির্ভুল শব্দচয়ন ও ভাষা ব্যবহার করায় চ্যাটজিপিটির লেখা মানুষের মতোই হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভার্চ্যুয়াল শিক্ষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সৃজনশীল বিষয়বস্তু তৈরিসহ দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণেও ভূমিকা রাখছে।
মানবজাতির কল্যাণে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনএআই’। সংস্থাটির উদ্যোক্তা সংখ্যা মোট ১১ জন, যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন গ্রেগ ব্রকম্যান (বর্তমান প্রেসিডেন্ট), স্যাম অল্টম্যান (বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ও ইলন মাস্ক (পেপাল, টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা) অন্যতম। পরে কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়ান ইলন মাস্ক, কিন্তু অল্টম্যান থেকে যান। তাঁর হাত ধরেই আসে চ্যাটজিপিটি।
সান ফ্রান্সসিসকোতে অবস্থিত ওপেনএআই শুরু থেকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করলেও গত অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ওপেনএআইয়ের ২৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মাইক্রোসফটের দখলে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন ডলার।