মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা এক প্রজন্ম। দিন-রাত মোবাইল হাতে ঘরের কোণে পড়ে থাকেন। বাইরে খেলতে যান না, এমনকি চোখ তুলে আকাশটা পর্যন্ত দেখেন না। সবকিছুতে বিরক্ত, হতাশ; তাঁদের মধ্যে আদব-সহবতের বালাই নেই। তাঁদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না…।

বছর কয়েক আগেও জেনারেশন জুমার্স বা জেন-জিদের নিয়ে অনেকে এমনটাই ভাবতেন। অথচ সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আজ বিশ্বে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জেন-জিরা।

জেন-জি এখন এক প্রচণ্ড শক্তির নাম, যাঁরা প্রথাগত রাজনৈতিক ও সমাজব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নতুন রূপ দিচ্ছেন।

কারা এই জেনারেশন জেড বা জেন-জি

সাধারণত ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুদের জেন-জি বলা হয়। সে হিসাবে জেন-জি প্রজন্মের বয়স এখন ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। তাঁরাই প্রথম প্রজন্ম, যাঁরা ইন্টারনেটের যুগে জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন। শৈশব থেকেই তাঁরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, বাস করেছেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়।

তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় অরা, ব্রাহ্, ডেলুলু, পুকি, রিজ বা স্কিবিডির মতো শব্দ ব্যবহার করে। আমাদের এসব শব্দের অর্থ বুঝতে কোনো অভিধান নয়, বরং তাঁদেরই মতো কারও কাছে যেতে হয়।

তাঁরা বৈশ্বিক রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখে বড় হয়েছেন, মানুষে মানুষে বিভেদ আরও বাড়তে দেখেছে, সম্পদ বণ্টনে প্রকট বৈষম্য তাঁদের অস্থির করে তুলেছে, দুর্বল চাকরির বাজার আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। পুরো পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে দেওয়া এক মহামারি তাঁদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে।

সম্পদ বণ্টনে প্রকট বৈষম্য তাঁদের অস্থির করে তুলেছে, দুর্বল চাকরির বাজার আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাঁদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে। পুরো পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে অচল করে দেওয়া এক মহামারি তাঁদের জীবনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে।

দুর্বলতাই যখন সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র

বাস্তব সংকটের মুখোমুখি হতে তাঁরা ভয় পান, তাঁরা থাকেন ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়; জেন-জি প্রজন্মকে নিয়ে এমন মন্তব্য হরহামেশাই শোনা যেত। জেন-জিরা ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, টিকটক, রিলস—এসবই তাঁদের দুনিয়া।

কিন্তু প্রয়োজনে এই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াকে তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বানিয়ে ফেলেন। সম্প্রতি দেশে দেশে এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

যদিও যুগে যুগে সব বিপ্লবে তরুণেরাই সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের আরব বসন্ত; তরুণেরাই রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছেন, স্বৈরাচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। জেন-জি প্রজন্মও তার ব্যতিক্রম নয়।

তবে তাঁদের আন্দোলন গড়ে তোলা, নিজেদের একত্র করার ধরন বেশ ভিন্ন। যে ডিজিটাল–দুনিয়াকে তাঁদের দুর্বলতা ভাবা হতো, তাঁরা সেটাকেই করে তুলেছেন তাঁদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা হাতে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সমবেত হয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজন ম দ র বল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির দাবি এড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প

মিশরের শারম আল শেখ শহরে সোমবার (১৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ‘গাজা পিস সামিট’ বা গাজা শান্তি সম্মেলন অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার পরই সবার আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবির পক্ষে কিনা তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

‘মানবজাতির ইতিহাসে আপনার নাম খোদাই করা থাকবে’: ট্রাম্পকে নেতানিয়াহু

ইসরায়েলে পৌঁছেছেন ট্রাম্প, পাচ্ছেন ‘প্রেসিডেন্ট পদক’

ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একক রাষ্ট্র বা দ্বি-রাষ্ট্র বিষয়ে কথা বলছি না, আমরা গাজার পুনর্গঠনের কথা বলছি।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “অনেক মানুষ এক-রাষ্ট্র সমাধান পছন্দ করেন। কিছু মানুষ দুই-রাষ্ট্র সমাধান পছন্দ করেন। বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।” 

সোমবার গাজা শান্তি সম্মেলনের ট্রাম্পের ভাষণের আগে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তার বক্তব্যে ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটি ‘স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য হুমকিস্বরূপ যেকোনো কিছু থেকে মুক্ত মধ্যপ্রাচ্য অর্জনের জন্য একটি অনন্য, সম্ভবত শেষ ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, “একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এমনভাবে অর্জন করতে হবে যাতে এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে যৌথ সহযোগিতা এবং সকল দেশের মধ্যে সহযোগিতার আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা যায়।”

স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমর্থনের কয়েক সপ্তাহ পরেই ট্রাম্প এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করলেন।

গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনের গতিকে হামাসের জন্য ‘পুরষ্কার’ উল্লেখ করে সমালোচনা করেছিলেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ