ব্যবসায়ীদের স্বার্থে মানদণ্ড স্থগিত, দেশে ঢুকছে ‘খাবারের অযোগ্য’ গুড়
Published: 14th, October 2025 GMT
নিম্নমানের গুড় আমদানি রুখতে তিন মাস আগে গুড়ের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয় বিএসটিআই। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের গুড় আটকে যায়। পরে ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘোষিত মানদণ্ড দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সুযোগে গত এক মাসে ১৫১ মেট্রিক টন ‘খাবারের অনুপযোগী’ গুড় দেশে ঢুকেছে।
‘সুগার মলাসেস’ নামে ভারত থেকে এসব গুড় আমদানি করা হয়েছে। এসব গুড়ে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অনেক বেশি। রংসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে আমদানি করা ‘মলাসেস’ দিয়ে আখ ও খেজুরের গুড় বানানো হয়। পরে রাজশাহী-নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের খাবারের গুড় হিসেবে বিক্রি করা হয়।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে অনেকবার আমদানি করা ‘মলাসেস’ দিয়ে বানানো গুড়ের কারখানা ভেঙে দিয়েছে। কারখানামালিকদের জরিমানা করেছে, গুড় ধ্বংস করেছে। এরপরও এ ব্যবসা বন্ধ থাকে না। ভারত থেকে নিম্নমানের গুড় আমদানিও বন্ধ হয়নি। তবে গত ১৫ জুলাই বিএসটিআই গুড়ের মানদণ্ড ঘোষণার পর দুই মাস আমদানি বন্ধ ছিল।
বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, গুড়ের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে সালফার ডাই-অক্সাইডের সর্বোচ্চ মাত্রা রাখা হয়েছে ৭০ পিপিএম। আন্তর্জাতিক গুড়ের মানেও সেই মাত্রা ৭০। এ ছাড়া মানদণ্ডে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ও নিরাপদ খাদ্য (দূষণকারী জীবাণু নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ) প্রবিধানমালা ২০২১ অনুযায়ী তিনটি মাইক্রো বায়োলজিক্যাল প্যারামিটার যুক্ত করা হয়েছে। যেগুলো গুড়ে থাকলে খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে নির্দেশ করে। কিন্তু আমদানিকারকেরা ভারত থেকে যে গুড় আমদানি করেন, তাতে সালফার ডাই–অক্সাইডের মাত্রা অনেক বেশি। এ ছাড়া ওই প্যারামিটারগুলোরও উপস্থিতি আছে।
ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমাণের গুড় পরিবহন করা হচ্ছে। গত শনিবার সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা বাজারের সামনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কাঠামো, ব্যয় বাড়ছে সব খাতে
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কাঠামো কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে। গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে বিভিন্ন সেবার খরচ। নতুন মাশুল হার অনুযায়ী, প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে গড়ে ৩৯ ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা বেশি দিতে হবে। প্রতি বক্স কনটেইনারে সর্বোচ্চ বাড়তি খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৬০ ডলার পর্যন্ত।
বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিটি কনটেইনার (২০ ফুট লম্বা) থেকে গড়ে মাশুল আদায় করে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। নতুন মাশুল কার্যকর হলে কনটেইনারপ্রতি বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সব মিলিয়ে কনটেইনারপ্রতি গড়ে মাশুল দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কনটেইনারে মাশুল বাড়ছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।
শিপিং কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে। ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক কনটেইনার লাইন তাদের টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ ২০ ফুট কনটেইনারে ১২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ ডলার করেছে। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ ২০৫ থেকে ৩১০ ডলার হয়েছে। একইভাবে সিএমএ সিজিএম, সিএনসি ও এএনএলও ২৬ অক্টোবর থেকে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে ৪৫ ডলার বাড়তি সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মাশুল বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি কনটেইনারে মোট খরচ দাঁড়াবে গড়ে ১৮৬ ডলার।
মাশুল বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কনটেইনার পণ্যে। খোলা বা বস্তাবন্দি পণ্যে তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব পড়বে। তেল, চিনি, গম, ইস্পাত, সিরামিকসহ উৎপাদনমুখী শিল্প খাত এবং ভোগ্যপণ্যের দামে চাপ পড়ার আশঙ্কা আছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন সেবার মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এতে উন্নত অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তবে, ব্যবসা সংগঠনগুলো বলছে, এই বাড়তি ব্যয় সরাসরি পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক